রাণীশংকৈলে প্রচণ্ড দাবদাহে মানুষের নাভিশ্বাস,পুড়ছে খেতের ফসল।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে টানা ১০/১২ দিন ধরে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। নীল আকাশে উড়ছে সাদা মেঘ, নেই বৃষ্টিপাত। প্রচণ্ড দাবদাহ আর সূর্যের প্রখর রোদে তপ্ত মাঠঘাট। আষাঢ়ের শেষেও দেখা নেই কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাতের।
এতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে না গরমের কারণে। দাবদাহের ফলে অস্থির হয়ে উঠছে মানুষ। তীব্র রোদের কারণে রাস্তায় বের হলে গায়ে যেন লাগছে আগুনের হলকা। তারপরও জীবন-জীবিকার তাগিদে রোদে পুড়ে বাইরে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন নির্মাণশ্রমিক আর ক্ষেতখামারে কৃষিশ্রমিকদের।
এদিকে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় দাবদাহে পুড়ছে ক্ষেতের ফসল। যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। তারা ফসল বাঁচাতে জমিতে অতিরিক্ত সেচ দিচ্ছেন।
রাণীশংকৈল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আগের দিন বুধবার যা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৬১ শতাংশ। এ অবস্থা আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
উপজেলার ভরনিয়া গ্রামের কৃষক সুশান্ত বর্মন বলেন, ‘সূর্যের তীব্রতা এতই বেশি যে, বেশিক্ষণ ক্ষেতে কাজ করা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে শরীরের চামড়া ঝলসে যাচ্ছে। ’ একই গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তাক বলেন, ‘গরমে আমার করল্লা ক্ষেতের গাছ ও পাতা ঝিমড়ে (কুঁকড়ে) পড়েছে। গাছের গোড়া পুড়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত সেচ দিয়েও মাটিতে পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। ’
ভুক্তভোগী আরেক কৃষক রাতোর গ্রামের মহসিন আলী বলেন, ‘গত ২০ বছরেও এমন গরম দেখা মেলেনি। শ্যালো মেশিনের পানি কম উঠছে, এতে সেচে অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে। এরপরও ফসল ঘরে ওঠাতে পারব কি না জানি না। ’
টানা দাবদাহ চলায় আমন ও সবজি ক্ষেতে সম্পূরক সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যেই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হলেই কেটে যাবে এ দুর্ভোগ। ’
শুধু কৃষকরাই নয়, তীব্র গরমে কঠিন সময় পার করছে উপজেলার মানুষরা। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু, বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষ। রাণীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক দিনে গরমের কারণে জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে অনেকেই। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যা বেশি।
রাণীশংকৈল উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুস সামাদ চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, এ সময়ে শিশুসহ বয়োবৃদ্ধদের প্রয়োজন বাড়তি সচেতনতা। সিজনাল ফলমূল, ডাবের পানি ও স্যালাইন খেতে হবে। অতিরিক্ত আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসক বা নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। ’