গতকাল কোরবাণীর ঈদ গেলো। বড় ধুম ধামের মধ্যে দিয়ে ঈদ কাটানো হলো। খুব আনন্দ ও মজা হলো। ঈদটি এমন পরিকল্পিত ভাবে জমজমাট হয়েছিলো যেনো এরকম ঈদ আর কখনও কাটেনি। আর সুন্দর ভাবে ঈদ কাটবেনা কেন? চাকুরী থেকে বড় ভাই এসেছে, বড় ভাইয়ের শালিকাও বেশ কিছু দিন ধরে এসেছে বাড়িতে। সব মিলে তৌহিদের ঈদ খুব আনন্দের সহিত কেটেছে। ভালো ও তরতাজা একটা পশু কোরবাণী করা হয়েছে এর মাঝে দিনটি আনন্দের ব্যস্ততায়ই ছিলো। আজ ঈদের দ্বিতীয় দিন, সকাল বেলা মিষ্টি রোদে বসে বড় ভাইয়ের শালিকা নাছিমার সাথে রসময় গল্প করতেছে তৌহিদ। এসময় তৌহিদের বড় ভাই আকরাম হোসেন আস্তে আস্তে বাড়ীর বাহিরে গেলেন।
কিছুক্ষণ হাটাহাটি করলেন এবং রিক্সায় চড়ে বাজারেও চলে গেলেন। বাজারে এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করতেই হঠাৎ তার বন্ধু আক্তারের সাথে সাক্ষাৎ হয়। আকরাম ও আক্তার ছোট বেলা হতে এক সাথে লেখাপড়া করেছে। এস,এস,সি ও এইচ,এস,সি একই সাথে পাশ করেছে। কর্ম জীবনে আকরাম কোম্পানীর চাকুরী করেন আর আক্তার সরকারী চাকুরী করেন। অনেক দিন পর দেখা সাক্ষাৎ হওয়ায় তাদের পূর্বের ও ভবিষ্যৎ এর আলোচনা তুলে ধরেন। অনেক আলোচনার পর হঠাৎ আক্তার বললেন- কিরে আকরাম আমার ছোট ভাইকে বিয়ে করাতে হবে, ভাল একটি মেয়ে খুজে দেখিসতো।
আকরামঃ তুই বিয়ে করলি মাত্র তিন বছর হলো, এখনি ছোট ভাইকে বিয়ে করাতে হবে? এ আলোচনা করতে করতেই আক্তারের ছোট ভাই অহিদ উপস্থিত হলেন। আক্তার বলল এইতো আমার ছোট ভাই এসেছে। অহিদের সাথে আকরাম কিছু কথা বলল। আকরাম মনে মনে ভাবলেন অহিদের সাথে নাছিমার বিয়ে দিলে সুন্দর মানাবে একে অপরের সাথে ফিট আছে। আকরাম বলল অহিদ তুমি এখন যাও। কিছুক্ষণ পরেই আকরাম আক্তারকে বলল, অহিদকে দিয়ে আমার শালিকা নাছিমার ভাল মানাবে। বেশ তোর শালিকাকেই দেখে আসি। তা তোর শালিকা এখন কোথায়? একথা বলল আক্তার। আকরাম বললেন বেশ কিছুদিন ধরে আমার বাড়ীতেই আছে। কারন শশুর ও শাশুরী বলেছেন ভাল সু পাত্র হলে বিয়ে দিতে, দায়িত্ব দিয়েছেন আমাকে। বেশ, তাহলে তোর বাড়ীতেই চল একথা বলল আক্তার। আক্তারকে নিয়ে বাড়ীতে আসলেন এবং খাওয়ার টেবিলে বসলেন।
এসময় আকরাম বললেন নাছিমা খাবার নিয়ে এসো। নাছিমা খাবার এনে তাদের খাওয়াতে লাগলেন। এর মাঝে আক্তার নাছিমাকে দেখে নিলেন। দেখতে খুবই সুন্দরী, সু-গঠনের, মিষ্টি মিষ্টি কথা, সু-সভ্য আচরন। এরকম মেয়ের সংখ্যা খুবই কম। তিনি ভাবলেন, অহিদকে দিয়ে ভালই মানাবে। এরকম লক্ষী বউ ঘরে গেলে সংসার আরো উজ্জ্বল হবে। এবার খাওয়া দাওয়া শেষ হলো। বাড়ী হতে আকরাম ও আক্তার বাহিরে গেলেন এবং হাটতে হাটতে কিছু দুরে গেলেন। আক্তার তার পছন্দের কথা জানালেন আকরামও মত দিলেন। উভয় পক্ষ থেকে বিয়ের স্বীকৃতি দিলেন। বিয়ের কথাবার্তা একেবারে পাকা আগামী কালই বিয়ে হবে। ইহা বলেই আকরাম তার বন্ধুকে বিদায় দিয়ে বাড়ী ফিরছিলেন। মনে মনে ভাবলেন, রাবেয়াকে ডেকে নাছিমার বিয়ের কথাগুলো সবার সামনে জানাবো এবং তৌহিদকে মিষ্টি আনতে পাঠাবে। সবাই মিলে মজা করে মিষ্টি খাবো। ইহা ভেবে খুশি মনে বাড়ীতে আসতেছেন। এদিকে তৌহিদ ও নাছিমা বাড়ীর আঙ্গীনার এককোণে বসে আলাপন করতেছে।
তৌহিদঃ নাছিমা. তোমার আমার এ সম্পর্ক অনেক দিন হতেই চলে এসেছে এক মুহুর্তেও তোমাকে না দেখলে আমার জীবন একবারে মরুভুমি মনে হয়। আসলে সত্যি কথা বলতে কি, আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবোন।তোমাকে ছাড়া আমার বাঁচা সম্ভব না। তোমাকে ছাড়া যেনো কেমন অস্থির অস্থির লাগে। নাছিমাঃ আমিও তোমাকে ছাড়া যেনো কেমন অস্থির অস্থির লাগে।
নাছিমাঃ আমিও তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা তৌহিদ। তাইতো আমার দেহ, মন, প্রাণ সবকিছু তোমাকে উজার করে দিয়েছি। চলো আমরা দুজন পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করি।
তৌহিদঃ এটা আমার পক্ষে সম্ভব না।
নাছিমাঃ তাহলে কি করবে?
তৌহিদঃ চলো আমরা দুজন ভাবিকে বলে আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করি। তাছাড়া ভাবিতো আমাদের সব কিছু আগে থেকেই জানেন।
নাছিমাঃ ঠিক আছে, আপাকে বললে ভালো হবে। আপা দুলাভাইকে বলবে এতেই আমাদের বিয়ে হবে। দুজন এমন ভাবে মুচকি হাসি দিলেন, যেনো পূর্ণিমা চাঁদের আলো সরাসরি কিরণ দিতেছে। আর জুটি বাধা কবুতরের মতো দুজন দুজনকে চুম্বন করলেন। তাদের ভালোবাসা দেখে আকাশ, বাতাস আনন্দের হাসি হাসতে লাগলো। গাছ, বৃক্ষ, তরুলতা তাদের প্রেমের জয়গান গাইতে লাগলো। ভ্রমর গুন গুন শব্দ তুলল পাখিগুলো গানে তাল মিলালো। বাগানের ফুলগুলি আনন্দের সহিত সু-ঘ্রাণ ছড়াতে লাগলো। যেনো প্রেমময় এক নতুন ভুবন সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে আকরাম সাহেব বাড়ীতে ঢুকতেই তাদের আলাপন গুলি শুনতে পেলেন এবং দাঁড়িয়ে থেকে সব দেখে নিলেন, সব ঘটনা বুঝতে পারলেন। তিনি অবাক হলেন তাদের দুজনের গভীর প্রেম দেখে। এ কোন জগতের রহস্যময় প্রেম? এ প্রেম যেনো লাইলী মজনু, শিরি ফরহাদ এবং কি রাঁধা কৃঞ্চকেও হার মানাবে। কিন্তু কোন দিনও আকরামের কথা নড়চর হয়নি এবং হতেও দেবে না। আজ যদি বন্ধুকে দেওয়া কথা বর্খেলাপ হয়। তাহলে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই অনেক ভালো। এদিকে পিতার মৃত্যুর পর ছোট ভাইকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। তাকে কোন দিন পিতার অভাব বুঝতে দেয়নি। কোন দিন তৌহিদ না খেয়ে ঘুমালে আকরামও খাননি এবং সারা রাত ঘুম হারাম হয়ে যেতো। তৌহিদের একটু অসুখ হলে আকরাম কেঁদে অস্থির হতো। তৌহিদের ভাবিও এর বিপরীত কিছু নয়। কিন্তু আজকে বন্ধুকে দেওয়া কথা রাখবে? না ভাইকে খুশি করবে? এনিয়ে আকরামের বুকের ভেতর ঝড়, তুফান বইতেছে। এসব ভাবতেই যেনো আকাশ ভেঙ্গে তার মাথায় পড়লো, পৃথিবীটা যেনো উলোট পালোট হয়ে গেলো।
তিনি ছোট ভাইয়ের ব্যথায় ব্যথীত হয়ে দুচোখের পানিকে বাঁধ মানাতে পারলোনা। তার চোখের পানিতে আকাশ, বাতাস থমকে দাড়ালো, পাখির গান স্তব্দ হলো, পুথিবী নিরব হলো। বাগানের ফুল গুলো ঝরে গেলো। আকরাম সাহেব পকেট হতে রুমাল বাহির করে চোখের জল মুছে সাভাবিক হলেন। ততক্ষণে বাড়ীর ভেতরে ঢুকলেন। নাছিমাকে বললেন এক গ্লাস পানি আনোতো? নাছিমা পানির জন্য ঘরে গেলো, তখন তৌহিদকে লক্ষ্য করে বললেন তৌহিদ পাঁচ বছর আগের পড়াগুলো স্মরন আছে?
তৌহিদঃ কোন পড়া ভাইয়া?
আকরামঃ এস,এস,সি পাশ করার পর ইসলাম শিক্ষা বই পড়নি। একটু ভাল করে অধ্যায় গুলো পড়ে এসো আমি প্রশ্ন করব।
তৌহিদঃ ঠিক আছে ভাইয়া। ইহা বলেই তৌহিদ তার রুমে চলে গেলো। নাছিমা পানি এনে দিলো, একচুমুকে পানি পান করেই আকরাম তার রুমে গিয়ে দোলায়মান চেয়ারে বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন হলেন। তিনি পূর্বের কথাগুলো ভেবে অধিক টেনশান করতেছেন। তিনি ভাবে একদিকে ভাইয়ের ব্যাথা অপর দিকে বন্ধুকে দেওয়া কথা, ভাবতেই অস্থির। আকরাম সাহেবের টেনশান দেখে তার স্ত্রী রাবেয়া এসে বলল কি ব্যাপার, তোমাকে আজকে অস্থির দেখাচ্ছে কেন? কি হয়েছে?
আকরামঃ রাবেয়া, আল্লাহ আমাকে আজ কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছেন। জানিনা এ পরীক্ষায় পাশ করবো নাকি ফেল করবো।
রাবেয়াঃ তার মানে?সেটা তোমাকে পরে বলছি। ইহা বলেই তৌহিদকে ডাকলেন আকরাম এবং বললেন।
আকরামঃ কি ইসলাম শিক্ষা পড়েছো?
তৌহিদঃ জ্বি ভাইয়া।
আকরামঃ কোন কোন অধ্যায় পড়েছো?
তৌহিদঃ ভাইয়া সবগুলো অধ্যায় দেখেছি।
আকরামঃ কোরবানীর অধ্যায় পড়েছো?
তৌহিদঃ জ্বি ভাইয়া পড়েছি।
আকরামঃ তাহলে তোমাকে আজ একটা কোরবাণী করতে হবে পারবে?
তৌহিদঃ জ্বি ভাইয়া পারবো।
আকরামঃ কোরবাণীর অর্থ জান তৌহিদ?
তৌহিদঃ জ্বি ভাইয়া, কোরবাণীর অর্থ ত্যাগ করা। যাও আরো ভাল করে পড়ে এসো ভাল ভাবে উত্তর দিবে। তখনও তৌহিদ কিছু না বুঝে চলে গেলো। রাবেয়া বলল, কি ব্যাপার এসবের অর্থ কি? আকরাম গম্ভীর ভাবে বলল, আগামীকাল নাছিমার বিয়ে আমার বন্ধুর ভাইয়ের সাথে। আমি বন্ধুকে কথা দিয়েছি এবং এ বিয়ে হতেই হবে। রাবেয়া কি যেনো বলতে চেয়েও স্বামীর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারলো না। শুধু বলল তোমার যা ইচ্ছা তাই করো। আগামীকাল বরযাত্রী আসবে, বিয়ে হবে, তুমি তৌহিদকে একটু বুঝাবে নরম স্বরে বলল আকরাম। কিন্তু তৌহিদ দরজার বাহির থেকে সব শুনে ফেলেছে সব শুনে তৌহিদের বুকের বাধ ভেঙ্গে যাচ্ছে, তার কলিজা, জান, প্রাণ, ভালবাসার মানুষ নাছিমাকে ভুলে যেতে হবে। এ কথা ভাবতেই পুর্ণিমার চাঁদের চারিদিকে মেঘ জমে যায়। আকাশ বাতাস অযরে অশ্রু ঝরায়। গাছ, বৃক্ষ, তরুলতাও কেঁদে বুক ভাসায়। তখন তৌহিদ বুঝতে পারলেন কোরবানীর সঠিক অর্থ কি। কোরবাণীর সঠিক অর্থ খুশি মনে প্রিয় জিনিস ত্যাগ করা। আর তৌহিদকে তাই করতে হবে। তিনি এক অধ্যায়ে পড়েছিলেন যে, পিতার আদেশে হযরত ঈসমাইল (আঃ) নিজের জীবন কোরবাণী করেছিলেন। আর আমার বড় ভাই আমার পিত্যৃ সমতুল্য। তার আদেশে আমার ভালোবাসা কোরবাণী করবো না? তাহলে আমি কেমন মানুষ হলাম? কেমন ছোট ভাই হলাম? কেমন প্রেমিক হলাম? দুচোখের জলে বক্ষ ভিজে যাচ্ছে, মুখ দিয়ে কথা আসতে চেয়েও ভিতরে আটকে পরে। তবুও ঘরে ঢুকে দুচোখ থেকে পানি ছেড়ে বললো ভাইয়া কোরবাণীর সঠিক অর্থ আমি বুঝে গেছি। কোরবাণীর সঠিক অর্থ খুশি মনে প্রিয় জিনিস ত্যাগ করা। আর আমি তোমার ইচ্ছায় তাই করবো। আমি নিজ হাতে কোরবাণী করবো। ইহা বলেই তৌহিদ হু-হু করে কেঁদে ওঠে এবং ভাইয়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পরে। দুচোখের পানি ছেড়ে আকরাম বললো কেঁদোনা, এব্যাপারে আমি তোমার সহযোগিতা চাই। ঠিক আছে ভাইয়া তাই হবে বললো তৌহিদ। পরের দিন ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান চলেছে। বাড়ী ভর্তি মেহমান সবাই আনন্দ উল্লাস করতেছে। বাজার খরচ করে আনা হয়েছে আকরামের মন বেশি ভালোনা, তবুও তিনি অংশ গ্রহণ করতেছেন। তৌহিদ বুকের ভেতর দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রনা চাপা রেখে মুখে হাসি দেখাইয়া নিজ হাত দ্বারা বিয়ের আয়োজন করতেছে। তৌহিদের হাসি দেখে নাছিমা মনের আনন্দে গুন গুন করে গান গাইতেছে। তার ধারনা আজ তৌহিদের সাথেই বিয়ে হবে। কেউ জানলোনা তৌহিদের হাসির অন্তরালে কি লুকিয়ে আছে। এদিকে তৌহিদের মুখশধারী হাসি দেখে ভাই ভাবি দুজনই মনে কষ্ট অনুভব করতেছে। কষ্টে তাদের কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে তবুও বিয়ের ধুমধাম চলছে। সঠিক সময়ে বর যাত্রী এসে হাজির। তাদের বসায়ে খাবার ব্যবস্থা করতেই হঠাৎ তৌহিদকে দেখে ডাকলেন অহিদ। ডাক শুনে কাছে এসে দেখতে পান বর সেজে আছে অহিদ।
তৌহিদঃ কিরে অহিদ কেমন আছিস?
অহিদঃ ভালো আছি, তুই কেমন আছিস?
তৌহিদঃ আমিও ভালো আছি।
এদিকে অহিদ ও তৌহিদ ছোট থেকে একই ক্লাশে লেখাপড়া করেছে, তাদের মধ্যে খুবই বন্ধুত্ব। তখন তৌহিদ মনে মনে ভাবতে লাগল, বেশ আমার প্রিয় মানুষ, আমার ভালোবাসার গোলাপ ফুলটি আমার বন্ধুর ফুলদানীতেই থাকবে স্বযত্নে। আমি খুব আনন্দিত।
অহিদঃ কিরে তুই কি ভাবছিস তৌহিদ?
তৌহিদঃ তুই কি ভাগ্যবান অহিদ, তাই—-।
অহিদঃ মানে?
তৌহিদঃ তুই আগে বিয়ে করলিতো তাই।
অহিদঃ বেশ, তাহলে আমাদের বাসর ঘর তোর নিজ হাত দ্বারা সাজিয়ে দিবি, পারবিনা?
তৌহিদঃ ঠিক আছে পারবো। ইহা বলেই তৌহিদ বাহিরে চলে গেলো। ততক্ষণে তৌহিদের চোখের পানি আর বাঁধ মানলোনা। নিমিষেই চোখের পানিতে বুক ভিজে গেলো এবং রুমাল দিয়ে মুছে ফেললো। এদিকে কাজী সাহেবের রেজিষ্ট্রারীর কাজ শেষ এবার কবুল বলার পালা। যখন কবুল বলার সময় নাছিমা শুনতে পারলো তার অন্যত্র বিয়ে হচ্ছে তখন নাছিমাকে বার বার কবুল বলার জন্য অনুরোধ করলেও কবুল বলতেছেনা নাছিমা।সে তৌহিদকে ছাড়া স্বামী হিসেবে অন্যকে মানতেই পারছেনা। তার প্রেম ভালোবাসাকে ভুলতেই পারছেনা। আর কি ভাবেই যেনো ভুলে যাবে তাদের ভালবাসার স্মৃতিময় দিনগুলি। আকরাম সাহেবের সাথে যেদিন রাবেয়ার বিয়ে হয়। সে দিনের প্রথম দর্শনেই তৌহিদ ও নাছিমার প্রেম হয়ে যায়। তাদের এমন প্রেম সৃষ্টি হয়েছে, একজন আরেকজনকে না দেখলে উদাসীন হয়ে যেতো। তাইতো নাছিমা প্রায়ই বোনের বাড়ী বেড়ানোর ছলোনায় তৌহিদদের বাড়ীতে এসে বেশ কিছু দিন করে থাকতো। তাদের দুজনের এমন গভীর প্রেম এক নিমিষেই নিঃশেষ হয়ে যাবে সে কথা ভাবতেই নাছিমার যেনো বুকের পাজর ভেঙ্গে যাচ্ছে। আর শিউরে উঠতেছে সমস্ত শরীর। তার ক্রঁন্দনে মাটিতে শায়ীত ধুলিকণা গুলোও হাহাকার করছে। তবুও আর কি করার? মেয়ে লোকের বুক ফাটে তবুও মুখ ফোটেনা। অধিক শোকাহত নাছিমা পাথরের মতো নিস্থল হয়ে রইলো। তৌহিদ বললো আমাদের প্রেম ছিলো একথা যেনো অহিদ কখনও না জানে। নাছিমা একেবারে চুপ করে রইলো। এসময় তৌহিদ কাছে গিয়ে ফিস ফিস করে বললো আমি বলছি তুমি কবুল বল। কয়েকবার তৌহিদ অনুরোধ করার পর দু চোখের জল ছেড়ে দিয়ে নাছিমা বললো কবুল। ইহা বলেই হু হু করে কেঁদে উঠলো নাছিমা। তিন কথাতেই নেমে আসলো নাছিমার জীবনের কালো অধ্যায়। নিঃশেষ হয়ে গেলো রঙ্গীন স্বপ্ন, ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেলো মনের কল্পনা, ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো হৃদয়ের আল্পনা। এসময় শান্ত্বনা দিলো তৌহিদ। তখন বাহিরে এসে নাছিমা বললো একি হলো! চিকন স্বরে তৌহিদ বললো চুপ, স্ববে মাত্র কোরবাণীর ঈদ গেলো। জাননা কোরবাণীর অর্থ খুশি মনে প্রিয় জিনিস ত্যাগ করা, আর আমরাও তাই করেছি। আমরা দুজন হাসি মুখে কোরবানী করলাম। এবার অহিদ নতুন বৌ নিয়ে তাদের বাড়ীতে যাইতেছেন। সঙ্গে বার বার অনুরোধ করে তৌহিদকে নিলেন। যা কাজ তাই হলো, অহিদ ও নাছিমার বাসর ঘর নিজ হাত দ্বারা সাজাইলেন তৌহিদ। তাদের ফুল সজ্জায় সুন্দর করে ফুল দিয়ে লিখে দিলেন “কোরবাণী” আমার বন্ধুর জন্য। নাছিমা ও অহিদ বাসর ঘরে এসেই দেখতে পান সুন্দর করে লিখে রাখা সৌন্দর্যময় লেখা। অহিদ আনন্দের সহিত তৌহিদকে ধন্যবাদ জানালেন। কিন্তু নাছিমা ভালো করেই বুঝে নিলো এই লেখার অর্থ কি। একটু মুসকি হাসি দিয়েই বাহিরে চলে আসলেন তৌহিদ, কিন্তু কে জানে? সেই হাসির অন্তরালে কি লুকিয়ে আছে? মনে হয় আষাঢ়ের জোয়ারে ফুলে ওঠা পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছে তৌহিদের দু চোখ ও বুক। তার চোখের পানিতে বরফের পাহাড় গলে গলে পড়ছে। পাখি গান করেনা, ভ্রমর ফুলের কাছে আসেনা, বাগানে ফুল ফোটেনা। চাঁদ হাসেনা, সুর্য কিরণ দেয়না। সমস্ত পৃথিবী তার দুঃখে জর্জরিত। এমতাবস্থায় লেখকের চোখের পানি দিয়ে বুক ভেসে যাচ্ছে, ঝাঁপসা দেখাচ্ছে সব কিছু। কারন, পানিতে দুচোখ একাকার। আর পাঠকের অবস্থা কেমন তা আমি জানি না। যেনো দুঃখময় এক ভুবন। থামতেই যেনো চায় না হাতের কলমের ক্রঁন্দন, একি! সেউকি হারিয়েছে কোন প্রিয়জন? কাঁদ কাঁদ অবস্থায় কলম বলে আমার চলার আর নেইতো গতি, বিবেক আমায় ইশারা দেয় এখানেই টানি ইতি।
লেখক
মোঃ ফরিদুল ইসলাম (ফরিদ)।