ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায় নিন্মমানের ও পাথরের শ্রেণী পরির্বতন করে সড়কের কার্পেটিং করা হচ্ছে। সড়ক নির্মাণে অনিয়ম নিয়ে স্থানীয়রা উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরে মৌখিক অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এদিকে উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী জানান, ওই সড়কের তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী নেহারুল ইসলাম। সে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে চলে। তাকে উপজেলা এলজিইডি দপ্তর থেকে ওই সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগের কথা জানিয়ে সঠিকভাবে কাজ করার কথা বলা হলেও সে কথায় তিনি কর্ণপাত করেন না ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে ,উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তরের আওতায় ধীরগঞ্জ থেকে যাদুরাণী পুরাতন সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের পৌনে ৪ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য দুজন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের শেষের দিকে চুক্তিবদ্ধ হয়। এতে খাইরুল কবির রানা ট্রের্ডাস রংপুর কাজ পায় ২২শত মিটার এবং তুয্য মাধুয্য ঠাকুরগাঁও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পায় ১ হাজার ৫’শত মিটার সড়কের কাজ।
সরেজমিনে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) দেখা যায়, সড়কটির কাজ চলমান রয়েছে। তবে সড়কে ১৬,১২,৬ মিলিমিটার ভাঙ্গা পাথর ও উন্নতমানের ডাস্ট দিয়ে কাজ করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। পাথর ও বিটুমিন তৈরী করা কার্পেটিং এ দেখা যায়, গোল গোল নিন্মমানের পাথর দিয়ে কার্পেটিং করা হচ্ছে। ডাস্টের বদলে পাথরের গুড়া সম্বলিত ডাস্ট দিয়ে কার্পেটিং করা হচ্ছে। তাছাড়া পাথর ও বিটুমিন মেশানো স্থানে গিয়ে দেখা যায়, কোথাও পাথরের সঠিক মাপের পাথর নেই। সব পাথরগুলোই বিভিন্ন শ্রেণী পরিবর্তন করা। এবং প্রচুর পরিমাণে ময়লা আর্বজনায় মেশানো পাথর। ১৬ মিলিমিটার ভাঙ্গা পাথরের বদলে সব ধরনের অতি পুরোনো পাথর মিশিয়ে রাখা হয়েছে। ১২ ও ৬ মিলিমিটার পাথরেও একই অবস্থা বিভিন্ন অচল পাথরগুলো স্তপ করে রেখে সে পাথর দিয়েই বিটুমিন মিশিয়ে কার্পেটিং করা হচ্ছে।
প্রকৌশলীদের মতে, সড়কে পরিস্কার ডাস্ট না দিলে সড়কের ফিনিসিং খারাপ হয়। এবং ভাঙ্গা পাথর না দিয়ে বিটুমিনের সাথে পাথরের জয়েন্ট থাকে না। এতে সড়ক নির্মানের কিছুদিন পর থেকেই সড়ক থেকে পাথর উঠে যায়। তাই সড়ক অব্যশই সঠিক পরিমাপের ভাঙ্গা পাথর দিয়ে নির্মাণ করতে হবে।
ওই সড়ক এলাকার বাসিন্দা, তৈয়ব আলী, কেরামত, অনন্তসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, সড়কটির সংস্কার হচ্ছে কিন্তু কাজটি ভালো হচ্ছে না। সড়কটি যেনতেন ভাবে ময়লা পরিস্কার করে গোটা গোটা পাথর দিয়ে কার্পেটিং করছে। গোটা পাথরের কার্পেটিং টিকে না এটা সকলেই জানে। আমরা দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী নেহারুল ইসলামকে বলেছি উপজেলা এলজিইডি অফিসের প্রধান কর্মকর্তাকে অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না ওই পাথর দিয়েই সড়কের অধিকাংশ নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে মৌখিক অভিযোগ করেও লাভ হয়নি।
খাইরুল ইসলাম ট্রের্ডাস ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এস এম মঈনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পারিবারিক সমস্যায় আছেন জানিয়ে ফোনটি কেটে দেন।
একইভাবে তুয্য মাধুয্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার নারায়ন বাবু বলেন, আসলে আমিতো ভালো পাথর দিয়ে কাজ করেছি শেষের দিকের পাথরগুলো একটু গোটা গোটা হয়েছে। পাথরের যে দাম তাতে ঠিকাদারী কাজ করাই তো মুশকিল বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ওই সড়কের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নেহারুল ইসলাম বলেন, আসলে কাজতো ভালই হচ্ছে। আপনি কোথায় আছেন, আসেন দেখা সাক্ষাতে কথা বলি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী মাসুদার রহমান পাথরের মান কিছুটা খারাপ আছে জানিয়ে বলেন, বিষয়টি আমি গুরত্বসহকারে দেখছি।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শাহারুল আলম মন্ডল বলেন, পাথরের মান পরির্বতন করে কাজ করার সুযোগ নেই। বিষয়টি আমি দেখছি।
হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বহ্নি শিখা আশা বলেন, বিষয়টি আমি জানতাম না আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।