লক্ষ্মীপুরে মেয়ের জামাইয়ের বিরুদ্ধে শ্বাশুড়ির ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়ার অভিযোগ।
লক্ষ্মীপুর কমলনগর উপজেলাতে আবদুল মান্নান নামে এক প্রবাসীর বিরুদ্ধে তার বিধবা শ্বাশুড়ি শাহিদা বেগমের ঘর পেট্টোল দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় মান্নান ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে শনিবার (১৮ জুন) সকালে ভুক্তভোগী শাহিদা বেগম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এই ঘটনায় ১৫ জুন শাহিদার বাবা আলী হোসেন কমলনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ বলছে, ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাহিদা উপজেলার চরলরেন্স ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড লরেন্স গ্রামের ভক্তেরপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তার স্বামী দুলাল হোসেন মারা যাওয়ার পর থেকে ভক্তেরপাড়া গ্রামে বাবার বাড়িতে একটি টিনসেট ঘরে বসবাস করেন তিনি।
অভিযোগ সূত্র জানায়, প্রায় ৫ বছর আগে একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুল খালেকের ছেলে মান্নানের সঙ্গে শাহিদার মেয়ে নুপুর আক্তারের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে প্রতিবন্ধী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। প্রায় ৩ বছর আবুধাবিতে প্রবাস জীবন ছিল মান্নানের। সেখানে থাকা অবস্থায় স্ত্রীর অশ্লীল ছবি দেওয়ার জন্য তিনি বায়না ধরেন। কিন্তু তার স্ত্রী দেয়নি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি সংসার খরচ ও যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরে ছেলেকে নিয়ে নুপুর মায়ের বাড়িতে চলে আসে।
একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে তিনি অশ্লিল ছবি স্বামীর কাছে পাঠায়। কিন্তু মান্নান ছবিগুলো ইমোতে স্ত্রীর স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ তোলে। গত ৬ মাস আগে তিনি দেশে ফেরেন। এরপর থেকে স্ত্রীকে ১এক লাখ টাকা যৌতুক দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। বিধবা মায়ের কাছে টাকা চাওয়া সম্ভব নয় বললে মান্নান ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। মান্নান হুমকি দেয় নিজেরে ছেলেকে মেরে ফেলবে। ঘরে আগুন দিয়ে নুপুর ও তার মাকে হত্যার হুমকি দেন তিনি। এতে ১৪ জুন দিবাগত রাত ১টার দিকে পেট্রোল দিয়ে আগুন লাগিয়ে বিধবার ঘরে। পুরো ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। এই ঘটনায় মান্নান ও তার সহযোগী বেলালের বিরুদ্ধে আলী হোসেন থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
শাহিদা বেগম জানান, ঘটনার দুইদিন আগেই মান্নান তাদেরকে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছে। এই ভয়ে নিজ ঘর ছেড়ে মেয়ে ও নাতিকে নিয়ে তিনি বাবার ঘরে ঘুমাতে যান। মধ্যরাতেই পেট্টোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে তার ঘর পুড়ে ছাই করে ফেলেছে। মান্নানই এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
শাহিদার বাবা আলী হোসেন বলেন, আমার ছেলেরা মান্নানকে বিদেশ নিয়েছিল। সেখান থেকে এসে সে নাতনিকে যৌতুকের জন্য চাপ দেয়। যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় সে আমার মেয়ের ঘর পুড়ে ছাই করে দিয়েছে। আমার মেয়ে, নাতনি ওই ঘরে থাকলে আগুনে পুড়ে মারা যেত। আমি মান্নানের কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।
অপর অভিযুক্ত বেলালের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয় বাসিন্দা নজির আহম্মদ বলেন, বেলাল ও মান্নানকে একসঙ্গে দেখেছি। বাজার থেকে পেট্টোল কিনে তারাই আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
বক্তব্য জানতে আবদুল মান্নানকে ফোন দিলে তিনি দেখা করে কথা বলবেন বলে কল কেটে দেন। তার দেওয়া ঠিকানায় সাংবাদিকরা গিয়ে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এই ব্যাপারে কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, রাতের অন্ধকারে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। কে বা কারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে, কেউ তা দেখেনি। ঘটনাটি তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।