ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল ডিগ্রী কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে কলেজ পরিচালনার এক যুগ (১২ বছর) পূর্তি হলেও এখন পযর্ন্ত পূর্নাঙ্গ অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়নি কলেজ পরিচালনা পর্ষদ। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মাধ্যমেই কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক,স্নাতক, অর্নাসের অর্ধ শতাধিক শিক্ষকসহ বেশ কিছু কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্যর অভিযোগ রয়েছে উপজেলার সচেতনমহলসহ সাধারণ মানুষের মাঝে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ নীতিমালায় বলা রয়েছে, কলেজে অধ্যক্ষ পদ শূন্য হইলে,অধ্যক্ষের অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে উপাধ্যক্ষ, জেষ্ঠ্যতম ০৫ (পাঁচ) জন শিক্ষকের মধ্য হইতে যেকোন একজনকে দায়িত্ব প্রদান করিতে হইবে এবং সেই সঙ্গে পরবর্তী ০৬(ছয়) মাসের মধ্যে বিধি মোতাবেক অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করিতে হইবে।
যুক্তিসঙ্গত কারন ছাড়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদানের এক বৎসরের মধ্যে নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগ দান করিতে ব্যর্থ হইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের স্বাক্ষরকৃত কাগজপত্র ও কার্য্যবিবরনী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্বীকৃত অথবা গৃহীত হইবেনা বলে বিধান রয়েছে।
অথচ রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে এ যাবত সিনিয়র কয়েকজন অধ্যাপক চাকুরী থেকেই অবসরে চলে গেছেন।
সর্বশেষ ২০২০ সালের ২ নভেম্বর রাস্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক ও উপজেলা আ.লীগের সভাপতি সইদুল হককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষেরও গত সোমবার (৩০মে) চাকুরীর শেষ কর্মদিবস বলে নিশ্চিত করেছেন উপধ্যক্ষ জামালউদ্দীন।
তবুও ভারপ্রাপ্ত থেকে অধ্যক্ষ নিয়োগের তেমন কোন উদ্যোগ নেইনি কলেজ পরিচালনা পর্ষদ।
কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন বিবরণী বোর্ড ঘেটে দেখা যায়, গত ১৯৭৯ সাল থেকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসা অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হকের চাকরীর মেয়াদ গত ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মাসে শেষ হয়ে তিনি বিদায় নেন তিনি। তৎকালীন কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সিদ্বান্ত অনুযায়ী ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ওবায়দুল হককে গত ২০১০ সালের ১ নভেম্বরে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওয়ায়দুল হকের চাকুরীও গত ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর শেষ হয়ে গেলে তিনিও প্রায় ২ বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বরত অবস্থায় চাকুরী থেকে বিদায় নেন।
পরবর্তীতে আবারো কলেজ পরিচালনা পরিষদের সিদ্বান্ত মোতাবেক বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তাজুল ইসলামকে গত ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তিনিও প্রায় ৮ বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের পর গত ২০২০ সালের ০১নভেম্বর চাকুরী থেকে অবসর গিয়ে বিদায় নেন।
সর্বশেষ রাষ্ট বিজ্ঞানের অধ্যাপক ও উপজেলা আ.লীগের সভাপতি সইদুল হক’কে গত ২০২০ সালের ২নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয় কলেজ পরিচালনা পর্ষদ। তার চাকুরীর মেয়াদ চলতি বছরের ৩০মে পযর্ন্ত ছিলো।
নিয়মনুযায়ী গত সোমবার শেষ কর্মদিবস ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সইদুল হকের। তবে তার অবসর হলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ নতুন কোন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বা অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার কোন প্রক্রিয়া দৃশ্যমান হয়নি।
কলেজের উপধ্যক্ষ জামালউদ্দীন এ প্রতিবেদককে জানান, অবসরে যাওয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মেয়াদ বৃদ্ধি করে আপাতত দুই বছর তাকেই দায়িত্ব রাখার সিদ্বান্ত নিয়েছে কলেজ পরিচালনা পর্ষদ।
স্থানীয়দের প্রশ্ন সরকারী বিধিমালাকে উপেক্ষা করে ৬ মাস মেয়াদী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে ১ যুগ কলেজ পরিচালনা করা হলো। আর কতদিন এভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে কলেজ পরিচালনা করা হবে?
অভিযোগ রয়েছে যেদিন থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়ে কলেজ পরিচালনা করা হচ্ছে সেদিন থেকে কলেজে শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য সহ অর্থনৈতিক অনিয়ম শিক্ষার্থীদের কাছে বিভিন্ন অজুহাতে অর্থ নেওয়া সহ বিভিন্ন অনিয়ম করা হচ্ছে।
রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজের উপধ্যক্ষ জামালউদ্দীন মুঠোফোনে জানান, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সইদুল হকের নিয়মিত চাকুরীর শেষ কর্ম দিবস গত সোমবার ছিলো। তবে কলেজ পরিচালনার জন্য তাকেই আবারো দুই বছরের জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়েছে কলেজ পরিচালনা পর্ষদ।
রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজের গর্ভনিং বোর্ডের সভাপতি পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সইদুল হকের চাকুরী শেষ হলেও গর্ভনিং বোর্ডের সিদ্বান্ত অনুযায়ী তাকে আবারো দুই বছরের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।