শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:১০ অপরাহ্ন

প্যারাগন কোম্পানীর দূষিত বর্জ্যের দুর্গন্ধে এলাকার সাধারন জনগন।

মোঃ হাবিবুল হাসান,ডিমলা(নীলফামারি)প্রতিনিধিঃ / ২০০ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : সোমবার, ২৩ মে, ২০২২

প্যারাগন কোম্পানীর দূষিত বর্জ্যের দুর্গন্ধে এলাকার সাধারন জনগন

প্যারাগন কোম্পানীর জৈবসার কারখানার দূষিত বর্জ্যের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের ছাতুনামা (কেল্লাপাড়া) গ্রামের বাসিন্দারা। দুই বছরেরও অধিক সময় ধরে এ ধরনের সমস্যায় ভুগছেন এলাকার জনসাধারন। একদিকে তিস্তা নদী ভাঙ্গনের আতঙ্ক, অপরদিকে প্যারাগন কোম্পানীর জৈব্যসার কারখানার দূষিত বর্জ্যের দুর্গন্ধ এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে  প্যারাগন কোম্পানী কর্তৃপক্ষকে অবগত করে কোন সুফল পাওয়া যায়নি।  পরবর্তীতে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং এলাকাবাসীরা কোম্পানীর বর্জ্য অপসারনের জ্ন্য মানববন্ধন করে এবং উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেও কোনো ফল পাননি বলে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর অভিযোগ।
সোমবার (২৩ মে) দুপুরে সরজমিনে দেখা যায়, ডিমলা উপজেলার ছাতুনামা (কেল্লাপাড়া) গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বসবাস করে আসছে। তারা অধিকাংশই হতদরিদ্র ও নদী ভাঙ্গা পরিবার। শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব রয়েছে গ্রামটির মানুষজনের মাঝে। তাই কেউ অন্যায় ও বৈষম্যমূলক আচরণ করলেও প্রতিবাদ করার শক্তি ও সামর্থ্য নেই । জৈবসার কারখানার চারপাশের এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দূষিত বর্জ্যের দুর্গন্ধে মানুষ তো দূরে থাক যে কোন প্রাণীর বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া জৈব্যসার তৈরি করার উপাদান গুলো যত্রতত্র ফেলার কারণে ঐ এলাকায় দূষিত বর্জ্যের কারেন মশা- মাছি উপদ্রব বেড়ে গেছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সাধারন জনগনের স্বাস্থ্যের হুমকি স্বরুপ।
এদিকে, প্যারাগন কোম্পানির দুষিত বর্জ্য নিষ্কাশনে তেমন কোন ব্যবস্থা না থাকায় মানুষের ভোগান্তি আরো বেড়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে এই কারখানায় নিয়ে আসা হয় বয়লার মুরগীর পায়খানা (বিষ্ঠা), গরুর,  গোবর খামারের প্রয়োজনীয় খাদ্য, রাইচ মিলের ছাঁই (কয়লা) এই সব উপকরণ পরিবেশ দূষণে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। দূষণ হচ্ছে বায়ু। আর এ বায়ু দূষণের কারণে বছরের পর বছর অত্র এলাকার বাসিন্দারা বিভিন্ন সময়ে পেটের পীড়ায় ভুগছে। কেল্লপাড়া গ্রামে রয়েছে একাধিক মসজিদ ও প্রাথমিক বিদ্যালয় কোম্পানির সামনের রাস্তা দিয়ে মুসল্লি/ছাত্র-ছাত্রীদের আসা-যাওয়া করতে হয়। আর আসা-যাওয়ার সময় দুর্ভোগের শিকার হয় মারাত্মক দুর্গন্ধের। একাধিক অভিযোগ রয়েছে মসজিদের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিসহ ছাত্র-ছাত্রী এবং গ্রামবাসীর।
স্থানীয়  বাসিন্দা আব্দুল জব্বার বলেন, কোম্পানির মুরগীর পায়খানা (বিষ্ঠা) ও বিভিন্ন কেমিক্যাল জাতীয় দ্রব্য যত্রতত্র পড়ে থাকায় পচে মারাত্মক দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে। বিশেষ করে প্রখর রোদের সময় দুর্গন্ধ বেশি ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার ভুক্তভোগী মহল এ ব্যাপারে কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বলেও কোনো সুফল পাননি। কোম্পানির এ বর্জ্য যাতে অচিরেই স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
 বানেছা বেগম বলেন, বিষ্ঠার দুর্গন্ধে থাকা যায় না অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে এখানে। রোদ অথবা বৃষ্টিতে বাতাসে দুর্গন্ধ আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।
একই গ্রামের এলিজা বেগম বলেন, গন্ধে বমি আসে। তৃপ্তি নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করা যায় না। কল্পনা আক্তার বলেন, গন্ধে ঘুমাতেও কষ্ট হয়। সবচেয়ে সমস্যার সম্মুখীন হন শিশু ও বৃদ্ধরা।
প্যারাগন এগ্রো দু”য়ের ব্যাবস্থাপক  সারোয়ার হোসেন (সোহাগ) বলেন, আমরা গোবর, ছাঁই ও মুরগীর বিষ্ঠা নিয়ে কাজ করি একটু তো গন্ধ থাকাটাই স্বাভাবিক। জৈবসার উৎপাদন করে দেশকে সহযোগিতা করছি। জৈবসার কৃষি জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ করেছি, সফলতাও পেয়েছি।  সরকার রেজিষ্ট্রেশন দিয়েছে আমাদের প্রতিষ্ঠানকে।
উপজেলা নির্বাহি অফিসার বেলেয়েত হোসেন বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যদি পরিবেশ দূষণে জড়িত থাকে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে নীলফামারী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কমল কুমার বর্মন বলেন, প্যারাগন এগ্রো লিমিটেড জৈবসার তৈরি করতে গিয়ে পরিবেশ দূষণ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর