ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা মানারুল হক (৩৮) নামে এক রোগীকে হাসপাতালের দুই তলা ভবন থেকে নিচতলায় ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সোহেল রানা (২৬) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার (২০ মে) সকাল সাড়ে ৯টায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগেই অভিযুক্ত সোহেল রানা হাসপাতাল ছেড়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
আহত মানারুল ইসলাম বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের হরিণমারী জুগিহার গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে। তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা বিআরডিবি কার্যালয়ের পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, অভিযুক্ত সোহেল রানা বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের রত্নাই বাগানবাড়ী গ্রামের শাহ আলমের ছেলে।
দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা জানিয়েছে, নিচতলায় পড়ে রোগী মানারুল ইসলামের কোমড়ের হাড় ভেঙ্গে গেছে, মাথায় ও বুকে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন। অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তাকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ৩য় তলায় ১০নং বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মানারুল ইসলামের শ্বশুড় রবিউল আলম জানান, সকাল সাড়ে ৬টায় আমার জামাইয়ের বাড়িতে বসতভিটার জমিজমা বিরোধকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটে। এতে আমার জামাই মানারুল ইসলামহ তার পরিবারের ৩ জন গুরুতর আহত হলে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন। জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়ে দ্বিতীয় তলায় পুরুষ ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার সময় দ্বিতীয় তলায় থাকা সোহেলসহ তাদের লোকজন দোতলায় পুনরায় মারধর শুরু করে। সোহেল রানা আমার জামাই মানারুলকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধাক্কা দিয়ে দোতলা থেকে নিচতলার সিঁড়িতে ফেলে দেয়। এতে জামাইয়ের কোমড়ের হাড় ভেঙ্গে গেছে, মাথায় ও বুকে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জামাই ও মেয়ে চিকিৎসার কাজে দিনাজপুরে থাকার কারণে আমি বাদী হয়ে বালিয়াডাঙ্গী থানায় শুক্রবার রাতে সোহেলসহ আরও ৯ জনকে আসামি করে এজাহার জমা দিয়েছি। সরকারি হাসপাতাল একটি নিরাপদ জায়গা, সেখানেও হামলার শিকার আমার জামাই। আমি এ ঘটনায় ন্যায় বিচার চাই।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মিঠুন দেবনাথ মুঠোফোনে জানান, জমিজমা সংক্রান্ত মারপিটের আহত রোগীদের মধ্যে গলোযোগ শুরু হলে মানারুল ইসলামকে দোতলা থেকে ফেলে দেয় সোহেল ও তার লোকজন। আমি থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগেই সোহেল ও তার লোকজন হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যায় বলেও জানান তিনি।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম আলমাস মুঠোফোনে বলেন, ছুটির দিন থাকায় আমি ছিলাম না। ঘটনাটি শুনেছি। রোগীর অবস্থা বেশি ভালো না, দিনাজপুর মেডিকেলে রেফার্ড হয়েছে। হাসপাতালে এ ধরনের ঘটনার জন্য আমরাও আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো।
এদিকে, অভিযোগ উঠা সোহেল রানাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার বড় ভাই জয়নাল আবেদিন শনিবার রাতে মুঠোফোনে জানান, একটা ঘটনা হাসপাতালে ঘটেছে। আপনি যতটা বলছেন ততটা না। সোহেলের সাথে যোগাযোগের জন্য নম্বর চাইলে সোহেল ওই ঘটনার পর থেকে পাওয়া যাচ্ছে না, তার মোবাইলটিও তার কাছে নেই বলে জানান তিনি।
বালিয়াডাঙ্গী থানা পরিদর্শক (ওসি) খায়রুল আনাম ডন বলেন, সকালে হাসপাতাল থেকে গন্ডগোলের কথা জানালে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল ঘটনাস্থলে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। এখন পর্যন্ত রোগী কিংবা তাদের স্বজনরো কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।