শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩২ অপরাহ্ন

তানোরে সংখালঘুদের বসত বাড়ি উচ্ছেদ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন।

মোঃ সারোয়ার হোসেন,তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধিঃ / ১৭৪ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শনিবার, ২১ মে, ২০২২

তানোরে সংখালঘুদের বসত বাড়ি উচ্ছেদ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন


রাজশাহীর তানোরে ভিপি সম্পত্তিতে বসবাস করা সংখ্যালঘুদের বসত বাড়ি উচ্ছেদ করা হয়েছে। গত বুধবার বিজ্ঞ আদালতের রায়ে কোর্ট প্রশাসন ও স্হানীয় লাঠিয়াল বাহিনী এনে উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির কৃষ্ণপুর গ্রামের দক্ষিণ পাড়া হঠাৎ পাড়া গ্রামে ঘটে উচ্ছেদের ঘটনাটি। ডেজার মেশিন দিয়ে ভেঙে বসতবাড়ি সমতল করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে সংখ্যা লঘু এবং ভূমিহীন মুসলিম পরিবারের লোকজন খোলা আকাশের নিচে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ফলে ভিপি সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে, সেই সাথে প্রতারণা কারী কৃষ্ণপুর গ্রামের প্রভাবশালী লাল মোহাম্মদের পুত্র দেলোয়ারকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। এর পরিত্রাণ পেতে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে উপজেলা নির্বাহীর নিকট ২৮ পরিবারের স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু রহস্য জনক কারনে কোনই সুরাহা হয়নি।

মুন্ডুমালা তহসিল অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৯৮ নম্বর কৃষ্ণপুর মৌজার অন্তর্ভুক্ত ১২৯ আরএস খতিয়ানে ১২৩৪ আরএস দাগে ধানী জমি রয়েছে ১ একর ৬৪ শতাংশ। আরএস রেকর্ডীয় মালিক মহানন্দ সরকারের পুত্র কুঞ্জ মোহন সরকার সাং ভারত পক্ষে বাংলাদেশ সরকার। বিগত ২০১৪ সালের গেজেট অনুযায়ী জমিটি ভিপি সম্পত্তি হিসেবে রুপান্তর হয়। সরকারে জমি এজন্য ২৮ ভূমিহীন সংখ্যালঘু পরিবারসহ কিছু অসহায় মুসলিম পরিবারও সেই জায়গায় বসবাস করতেন ।

জানা গেছে, চলতি মাসের বুধবার সকাল থেকে দিনব্যাপী চলে উচ্ছেদ অভিযান। ডেজার মেশিন ও ভাড়াটিয়া বাহিনী। প্রশাসন ও ভাড়াটিয়া বাহিনীর দাপটে কোন কিছুই বলতে পারেন নি সংখ্যা লঘুসহ বসবাস কারীরা। চলে ব্যাপক আয়োজনে খাবার ও টাকার ছড়াছড়ি। বসত বাড়ি হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সংখ্যা লঘুসহ ভুক্তভোগীরা।আর উচ্ছেদের ঘটনায় আনন্দে আত্মহারা দেলোয়ার।
উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির কৃষ্ণপুর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের মাঝখান দিয়ে দক্ষিনে জমির আইল পুকুরের পর তাদের বসবাস। ওই জায়গা পেতে বিজ্ঞ আদালতে মামলা করেছিলেন দেলোয়ার। মামলায় তিনি রায় পান। এর বিরুদ্ধে সংখ্যা লঘুরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন, যা বিচারাধীন। তারপরও উচ্ছেদের ঘটনায় হতবাক গ্রামবাসী। কিন্তু শুধু অসহায়ের মত চেয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করনীয় ছিল না। কারন আদালতের রায়। তারা দীর্ঘ দশ বছর ধরে বসবাস করে আসছিল।

গ্রামের একাধিক ব্যক্তিরা বলেন, ভিপি সম্পত্তি, তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বসত বাড়ি করে দেয় ওই গ্রামের প্রভাবশালীরা। উপজেলায় খুজলে এমন জমিতে হাজার হাজার পরিবার বসবাস করছেন।

উচ্ছেদ কৃতদের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল। উচ্ছেদের আগে বিছিন্ন করে দেওয়া হয়। একটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে প্রায় আট দশ হাজার টাকা খরচ হয়। যদি অন্যের জমি হয় তাহলে কেনই বা বিদ্যুৎ দেওয়া হল। গরিব অসহায় দরিদ্র ব্যক্তিদের উপর যে যে ভাবে পারছে জুলুম করা যায়।

পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম জহুরুল হক জানান আদালতের নির্দেশে বিছিন্ন করা হয়েছে।

সংখ্যা লঘু শ্যামল চন্দ্র কর্মকার বলেন, বসবাসের পর দেলোয়ার আদালতে মামলা করেন। বিগত দু বছর করোনার কারনে আমরা সেভাবে যোগাযোগ করতে না পারায় একতরফা রায় নিয়ে আসে দেলোয়ার। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে। এখনো বিচারাধীন। মোহন চন্দ্র জানান, দেলোয়ার দীর্ঘ দিন ধরে হুমকি দিয়ে আসছিল আজ হোক কাল হোক উচ্ছেদ করা হবে। তাতে যাযা করনীয় করা হবে। হলও তাই, উচ্ছেদের আগ থেকেই সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে রাতের আধারে হামলা করে উচ্ছেদ করবে এমন হুমকি প্রতি নিয়তই আসছিল।

মিনা নামের এক বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলাসহ একাধিক মহিলারা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, এবয়সে ভিটে বাড়ি হারিয়ে গেল, কোথাও থাকব, খোলা আকাশের নিচে ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে আছি। কেউ আশ্রয় দিচ্ছে না। সরকারি জায়গায় বাড়ি নির্মাণ করেও প্রভাবশালী দেলোয়ার থাকতে দিল না। সরকার যদি নিত সেটা ভিন্ন কথা। শেক হাসিনা তো আমাদের মা, মায়ের কাছে অনুরোধ আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক, আমাদের কোন জায়গা না থাকার কারনে এখানে বাস করছিলাম, আমাদের কে তিনি যেন রক্ষা করেন। শেখ হাসিনা সরকার ভূমিহীন দের বাড়ি করে দিচ্ছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী বলে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গাকে জায়গা দিয়ে মানবতার পরিচয় দিয়েছেন। আর আমরা এদেশের নাগরিক, কেন আমাদের উচ্ছেদ করা হল। আমরা সরকারের জায়গায় বাস করতে পারব না কেন এমন নানা প্রশ্ন বিরাজমান । আমাদের বসত বাড়ি যখন উচ্ছেদ হয়ে গেল তাহলে সরকার আমাদের ভারতে পাঠিয়ে দিক। এদেশে তো জায়গা হল না আমাদের।খোলা আকাশের নিচে কতদিন থাকা যাবে।

উচ্ছেদের সময় ভিডিও বক্তব্যে দেলোয়ার বলেন জমিটির ক্রয় সুত্রে আমরা মালিক।দীর্ঘদিন তারা দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছিল। বিজ্ঞ আদালতের রায়ে জায়গা উদ্ধার হল। আমাকে শুধু থানার ওসি নানা ভাবে হুমকি দিয়েছিল।

পরদিন বৃহস্পতিবার মুন্ডুমালা তহসিল অফিসে খোজ নিয়ে দেখা যায় ওই জমির পুরোটায় ভিপি। কোন ধরনের খাজনার চেক বা নামজারি নেই। তাহলে জমি কিভাবে কেনাবেচা হল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুমি কর্মকর্তা জানান, আমাদের মনে হচ্ছে অনিয়ম ভাবে দলিল তৈরি করে মামলা দায়ের হতে পারে। যারা বসবাস করেন তারা হয় তো জানেন না। আর এজমি কেনাবেচার কোন সুযোগ নাই। এখম আদালতে কিভাবে মামলা হল, আর কিভাবে উচ্ছেদ হল সেটা আদালত ভালো বলতে পারবেন। আর আদালতের বিরুদ্ধে কোন কথা বলাও সঠিক না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর