বাঘায় গমের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি।
অনুকূল আবহাওয়া ও উচ্চ ফলনশীল জাতের গম আবাদের ফলে চলতি মৌসুমে রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় গমের বাম্পার
ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি অফিস। রবি শস্যের মধ্যে অন্যতম লাভ জনক আবাদ হচ্ছে গম। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে গম কাটা-মাড়াইয়ের কাজ। বাজারে ভাল দাম ও চাহিদা থাকায় লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায়-৬১০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ৪৫ মেট্রিক টন। অনুকূল আবহাওয়া,সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ এবং কৃষি বিভাগের সঠিক তদারকি,পরামর্শে বাড়তি পরিচর্যা ও গম বপনের পর কয়েক দফায় বৃষ্টি হওয়ায় অধিকাংশ জমিতেই এবারে সেচের দরকার হয়নি। তাছাড়া গম ক্ষেতে রোগ-বালাইও ছিল কম। এতে কৃষকদের সেচ খরচ সাশ্রয় হওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক কম হয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। তাছাড়া বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবারে অধিকাংশ জমিতে কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল গম জাত প্রদীপ, বারি-২৬,২৮,২৯,৩০,৩১,৩২ ও ৩৩ আবাদ করেছেন। তাই এবার গমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা ও কৃষি অফিস।
বাঘা উপজেলায় দুইটি পৌরসভা,বাজু বাঘা,বাউসা,আড়ানি, মনিগ্রাম,গড়গড়ী,পাকুড়িয়া ও চকরাজাপুর ইউনিয়নে গমের চাষ হয়েছে। তবে চকরাজাপুর ইউনিয়ন পদ্মার চরাঞ্চলে গমের আবাদ বেশি হয়েছে। সরেজমিন এসকল এলাকায় মাঠের গিয়ে গমের কাঁচা-পাকা শীষ দেখে আনান্দে ভরে গেছে কৃষকদের মন। এবার প্রতিটি গমের শীষ অনেক বড় হয়েছে এবং বিগত সময়ের তুনায় এবার শীষে গমের দানাও খুব ভালো হয়েছে।
একাধিক কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,আবহাওয়া যদি শেষ পর্যন্ত অনুকূলে থাকে ও ভালো ভাবে কাটা-মাড়াই করে গম ঘরে তুলতে পারেন এবং ন্যায্য মূল্য পায় তাহলে চাষিরা খুব লাভবান হবেন। পদ্মার চর পলাশি মৌজায় ৬ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল গম বারি-৩৩ জাতের আবাদ করেছেন গড়গড়ী ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেন লিটন।
তিনি বলেন,গম চাষে বীজ,সার ও সেচ দিতে হয়। এবার গম বপনের পর কয়েক দফা বৃষ্টিতে তার জমিতে পানি সেচ দিতে হয়নি। ফলে উৎপাদন খরচ কম হয়েছে। গমের শীষের আকার ও দানার সংখ্য দেখে মনে হচ্ছে প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে গমের বাম্পার ফলন হবে এবং বিঘা প্রতি ১৫-১৬ মণ হারে গম পাবেন বলে আশা করেন তিনি।
উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের কৃষক আরমান আলী বলেন, এবার বারি গম-৩০, ৩২,৩৩ জাতের আবাদ করেছেন। গমের জন্য আবহাওয়া অনুকুলে ছিল, তাই ভালো ফলন আশা করা হচ্ছে। চকরাজাপুর ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সাব্বির আহাম্মেদ বলেন, গমে সেচ দেওয়ার সময় বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকদের সেচ কম দিতে হয়েছে। এতে উৎপাদন খরচ কম হয়েছে। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে।
উপজেলা গড়গড়ী ইউনিয়ন পলাশী ফতেপু র চর এলাকায় (ব্লক সুপার ভাইজার) সোহেল রানা উচ্চ ফলনশীল গম বারি- ৩৩ জাতের প্রদর্শনী প্লট মঙ্গলবার বিকেলে পরিদর্শন করেন এবং গমের শীষের আকার ও দানার পরিমান বেশি দেখে গমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কামরুল ইসলাম বলেন, এবছর উচ্চ ফলনশীল জাতের গমের আবাদ বেশি হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকলে থাকায় গমের ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষি অফিস। বিশেষ করে উপজেলায় বারি গম-৩৩ জাতের গমের আঠারশত হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এই জাতটির শীষ লম্বা এবং শীষে দানার সংখ্যা বেশি হওয়ায় নওঘা প্রতি-১৭-১৮ মন হারে ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাজার দর ভালো থাকায় এবার লাভবান হবেন গম চাষিরা। উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান প্রতিবেদককে জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের সহয়োগিতায় আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সকল ধরনের পরামর্শ দিয়েছি।তিনি আরও বলেন, কৃষি বান্ধব সরকারের সহযোগীতায় কৃষকেরা এ লাভ জনক চাষাবাদে ঝুকেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের গম চাষে যথা সময়ে সঠিক পরামর্শসহ কিছু প্রণোদনা ও দেয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ নছর গমের বাম্পার ফলন হবে বলে জানান তিনি। ইতিমধ্যেই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গম কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে ।