কার্যালয়ে তালা বন্ধ করে সাধারণ সম্পাদককে পেটালেন যুবদলের কর্মীরা !
উপজেলা কমিটির জের ধরে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিনের সাথে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ড.টিএম মাহবুবর রহমানের বাকবিতণ্ডা হয় জেলা কার্যালয়ে। তারই জের ধরে বিএনপির জেলা কার্যালয়ে তালা বন্ধ করে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদককে পেটালেন যুবদলের কর্মীরা।
সোমবার (২১শে মার্চ) দুপুরে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপি’র সম্মেলন প্রস্তুতির আলোচনা হবে এ কথা বলে ড.টিএম মাহবুবর রহমানকে জেলা বিএনপির নেতারা ডেকে কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। মঙ্গলবার দুপুরে মাহবুবুর রহমান তার নিজ বাসায় সাংবাদিকদের জানায় সেখানেই তাকে লাঞ্ছিত ও পেটানো হয়।
উল্লেখ্য, আগামী ২৪ তারিখ বিএনপির বালীয়াডাঙ্গী উপজেলা কাউন্সিল। কাউন্সিল নিয়ে জেলা কার্যালয়ে আলোচনা চলাকালীন সময়ে গঠনতন্ত্রের বাইরে কিছু কাজ করায় আমি দ্বিমত পোষণ করি। এতে করে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিনের সাথে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপিরর সাধারণ সম্পাদক ড.টিএম মাহবুবর রহমানের বাকবিতণ্ডা সৃষ্টি হয়।
কিছুক্ষণ পরে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ড.টিএম মাহবুবর রহমানকে ঠাকুরগাও জেলা বিএনপি’র কার্যালয়ের মেইন গেটে তালা দিয়ে মারপিট করেছেন বহিরাগত যুবদলকর্মীরা।
হামলার স্বীকার ড.মাহবুব জানান, সেখানে সম্মেলনের সকল আলোচনা শেষে দলের নেতারা চলে যাওয়া শুরু করলে ড.টিএম মাহবুবর রহমানকে কৌশলে (কথা আছে বলে) মির্জা ফয়সাল আমিনের উপস্থিতিতে খোরশেদের কথা বলে মেইন গেট থেকে ডেকে নিয়ে জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ। গেট থেকে পিছনে ফিরতে না ফিরতেই গেটে তালা লাগিয়ে দিয়ে তাঁকে মারপিট শুরু করে ভেতরে থাকা কতিপয় যুবদলকর্মীরা। এ হামলার পেছনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের হাত রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ তুলেন।
মাহবুবুরের চিৎকারে জেলা বিএনপি’র সভাপতি তৈমুর রহমান, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলম, সহ সভাপতি ওবাইদুল্লাহ মাসুদ, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি অ্যাড. সৈয়দ আলম তাৎক্ষণিক উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
হাসপাতাল থেকে ওইদিন বিকেলে তাঁকে বালিয়াডাঙ্গীস্থ নিজ বাসায় নিয়ে আসেন পরিবারের লোকজন।
ড. মাহবুব আরো জানান, এ সময় জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিনের উপস্থিতে এ ঘটনা ঘটেছে। এতে জেলা বিএনপি ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপি’র কয়েকজন নেতাও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এ সময় মুখচেনা কয়েকজন নেতা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। তাঁরাই উৎসাহ যুগিয়েছে।
রুহিয়া থানা বিএনপি’র সভাপতি আনছারুল হক বলেন, নিজ দলীয় কার্যালয়টিতে যদি নিরাপত্তা না থাকে তাহলে কোথায় আমরা নিরাপদ?
জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক জাফরুল্লাহ জানান, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। দলের মহাসচিব বিষয়টি জেনেছেন। তিনি শক্তহাতে বিষয়টি দেখবেন বলে জানা গেছে।
জেলা বিএনপি’র সহ সভাপতি মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘যখন প্রচন্ড মারপিট হচ্ছিল আমি দৌঁড়ে গিয়ে তাঁকে বাঁচিয়েছি। মাহবুবের গাঁয়ের ঝড়া রক্তে আমার পাঞ্জাবি ভিজে গিয়েছিল। তাঁকে মেরে ফেলার মতো পরিস্থিতি আমি দেখেছি।’
জেলার বিএনপি’র সহ-সভাপতি ওবাইদুল্লাহ মাসুদ বলেন, ‘এটি মেনে নেওয়া খুব কষ্টকর। নিজ দলীয় কার্যালয়ে আটকে রেখে মারপিট করা কাজটি মোটেও ঠিক হয়নি। নিন্দা জানাবার ভাষা নেই আমাদের। এমন ঘটনার জন্য দল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’
জেলা যুবদলের সভাপতি মহেবুল্লাহ চৌধুরী আবু নূর বলেন, ‘ঘটনার পাশেই আমি উপস্থিত ছিলাম।’ যুবদলের কর্মী বিএনপির ওই নেতাকে হামলা করে আহত করেছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান।
বাকবিতণ্ডার জেরে হামলার শিকার হয়েছেন এমন প্রশ্ন ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিনের কাছে জিজ্ঞেস করলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘ওই সভায় আমি উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু কে বা কারা উনাকে হামলা করেছে তা জানি না। আমাদের নেতাকর্মীরাই উনাকে তাৎক্ষনিক হাসপাতালে নিয়ে যায়।’ উনি লিখিত অভিযোগ দিলে দলীয় ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানান।