লক্ষ্মীপুরে সড়কের ধুলোয় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে স্থানীয়দের জনজীবন।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ১৭নং ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের সুতারগোপ্তায় গ্রামীণ একটি সড়কের ধুলোয় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে স্থানীয় জনজীবন। অবৈধ পাহাড়-ট্রলির দাপটে ধুলোর রাজ্যে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে গ্রামবাসী।
প্রতিদিন শতাধিক অবৈধ পাহাড়-ট্রলি চলাচল করছে এই সড়কে। তবে এই বিষয়ে প্রভাবশালী মহলটির ভয়ে এলাকাবাসী মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। সড়কে বর্তমানে হাঁটুসমান ধুলো জমে গেছে।
রাস্তার ধুলোবালি প্রতিনিয়ত তাঁদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। ভাত খেতে গিয়েও থালায় বালুর দেখা পান এলাকার বাসিন্দারা। আর বালুর আবরণে ঘর-বাড়ি, আসবাব, আঙিনায় থাকা শাকসবজি এবং ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। রান্না করা খাবারেও মিশে যাচ্ছে ধুলোবালি। গত বুধবার বিকেলে সরেজমিন ওই এলাকায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
স্থানীয়রা গোপনে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি নয়। এই জন্য তারা সংবাদকর্মীদের কাছেও নিজের নাম-পরিচয় বলতে চাননি। তাঁদের জীবন অতিষ্ঠ করে তোলা শতাধিক ট্রাক্টরের মালিক ও ইটভাটার মালিকেরা প্রভাবশালী হওয়ায় সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় তাঁরা।
সরেজমিন দেখা যায়, ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনসা গ্রামের সুতার গোপ্তা থেকে পূর্ব দিকে দেড় কিলোমিটার ‘আইজিপি গণকবর সড়ক’। কাঁচা সড়কটির দুপাশে সহস্রাধিক লোকের বসবাস। সড়কের পূর্ব অংশটি তেওয়ারিগঞ্জ ইউনিয়নের এলাকা। শুষ্ক মৌসুম শুরু হলে আশপাশের প্রায় ২০বিশ টির বেশি ইটভাটার জন্য এই সড়কের দুই পাশে থাকা কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা হয়। মাটি বহনের কাজে ব্যবহার করা হয় দেড় শতাধিক অবৈধ ট্রলি। এগুলো দিয়ে নেওয়া হচ্ছে ভাটার ইট।
কয়েকজন নারী তাঁদের রান্না করা খাবার দেখিয়ে বলেন, আমরা ভাতের সাথে বালু খাই। কয়েক সেকেন্ডের জন্যও খাবার ঢাকনা দিয়ে না রাখলে বালু এসে পড়ে। ঘরের প্রত্যেকটি অংশে বালুর আবরণ। হাঁড়ি-পাতিল এবং ভাতের থালায় পর্যন্ত বালু। আঙিনায় থাকা কোন শাক বা সবজি নিয়ে যে রান্না করব-সে অবস্থা নেই। সবকিছুতে বালুর আস্তরণ পড়ে গেছে। কয়েকজন কৃষক তাদের সয়াবিন তে দেখিয়ে বলেন, রাস্তার নোনা বালু এসে পড়েছে কচি সয়াবিন গাছের চারার মধ্যে। ফলে গাছ মরে যাচ্ছে। এলাকার গাছপালা, তর ফসল বিবর্ণ হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় মসজিদের এক ইমাম জানান, মুসুল্লিরা নামাজ পড়তে আসতে পারেন না। নামাজের জন্য একটি পোশাক পরে আসলে সেটি মুহূর্তেই বালুতে নষ্ট হয়ে যায়। মসজিদের প্রতিটি জায়গায় বালুর আবরণ পড়ে আছে। ইটভাটার মালিক ও ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি বলেন, কয়েক মাস আগে রাস্তাটি পরিষদের পক্ষ থেকে সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু আবারও নষ্ট হয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, রাস্তায় ট্রাক্টর চলাচলের কোনো অনুমতি নেই। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। ট্রাক্টর ব্যবহার করার কথা কৃষি কাজে। ইতিপূর্বে কয়েকটি ট্রাক্টরকে জরিমানা করা হয়েছে। অবৈধ ট্রাক্টর রাস্তায় চলাচল বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।