পীরগঞ্জে এক সপ্তাহে ৬ জনের গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহনন।
ঠাকুরগাওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় গত এক সপ্তাহে কলেজ ছাত্রী, কিশোরী, বৃদ্ধা ও গৃহবধু সহ ৬ জন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহনন করেছে। দীর্ঘসময় অসুস্থতা, পেটব্যথা, মায়ের উপর অভিমান, মাদক ও পারিবারিক অশান্তিতে আত্নহত্যার কারণ বলে এমনটাই সংশ্লিষ্ট পরিবার থেকে পুলিশকে জানানো হয়েছে।
পীরগঞ্জ থানা সুত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার (১৮ মার্চ) সকালে উপজেলার সেনগাও ইউনিয়নের দস্তমপুর গ্রামের শুভচন্দ্র রায়ের স্ত্রী মেঘলা (২২) গোয়ালঘরের তীরের সাথে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। মেঘলার শ্বশুর ধনেশ চন্দ্র রায় পুলিশকে জানায়, তার ছেলে মাদকাসক্ত। বৃহস্পতিবার শুভচন্দ্র তার স্ত্রী মেঘলার কানের স্বর্ণের দুল বিক্রি করে মাদক সেবন করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ বাধে। এরই জের ধরে মেঘলা আত্নহত্যা করেছে।
এর একদিন আগে বৃহস্পতিবার (১৭মার্চ) সকালে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্নহত্যা করে উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের কিসমত গ্রামের মৃত কুলদা রঞ্জন রায়ের ছেলে মহেশ চন্দ্র রায় (৪১)। বাড়ির পাশে আমগাছের ডালে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্নহত্যা করেন তিনি। তার পরিবার থেকে জানা যায় মানসিক সমস্যা ছিল তার। এরআগে তার মেঝ ভাইও আত্নহত্যা করেছিল।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) দুপুরে উপজেলা সেনগাঁও ইউনিয়নের দস্তমপুর গ্রামে বেলাল হোসেনের ছেলে জীবন আলী (২৬) নিজ শয়নঘরের তীরের সাথে মাফলার দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্নহত্যা করে।
জীবন আলীর বাবা বেলাল হোসেন থানায় লিখিত ভাবে জানায়, তার ছেলে মাদকাসক্ত ছিল।
একইদিনে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) আত্নহত্যা করে উপজেলার নাকফুল গ্রামের মজিরুলের মেয়ে রুবা আকতার (১৯)। শয়নঘরে থাকা তীরের সাথে ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্নহত্যা করে সে। রুবার মামা আলমামুন পুলিশকে জানায় তার ভাগনি শিবগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে এইচএসসি’র ছাত্রী। পারিবারিক কাজকর্ম নিয়ে দুপুরে রুবাকে বকাবকি করে তার মা।এরপর রুবার মা ও বাবা গরুর জন্য ঘাস কাটতে বাড়ির বাইরে যায়। সেই ফাঁকে মায়ের উপর অভিমান করে রুবা আত্নহত্যা করে।
এদিকে গত শনিবার (১২মার্চ) সন্ধ্যায় উপজেলার ভেলাতৈড় ভদ্রপাড়া গ্রামের সবুজ আলীর মেয়ে সোনিয়া আকতার (১৪) ওড়না দিয়ে নিজ শয়নকক্ষে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্নহত্যা করে। সোনিয়ার দাদা আব্দুল জলিল থানায় লিখিতভাবে জানান, সোনিয়ার বাবা জীবিকার্জনে সিলেটে থাকেন। মা পালিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেছে। দাদার বাড়িতেই থাকতো সোনিয়া। কয়েক মাস আগে থেকে সে প্রচণ্ড পেট ব্যাথায় ভুগছিল। একারণেই সে আত্নহত্যা করে।
একইদিনে শনিবার (১২মার্চ) রাত ১০টার সময় উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামের রকনাল চন্দ্র রায়ের স্ত্রী সাতোবালা (৭০) শয়নঘরের বারান্দায় রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্নহত্যা করে। সাতোবালার ছেলে বিনোদ চন্দ্র রায় পুলিশকে জানায়, তার মা অসুস্থ ছিল। যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে আত্নহত্যা করে।
থানার নথিপত্র অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারী মাস থেকে এপর্যন্ত উপজেলায় আত্নহত্যা করেছে ১০জন। এরমধ্যে গত এক সপ্তাহেই ৬ জন।
সমাজকর্মী প্রভাষক তারেক হোসেন বলেন, পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হয়ে যাওয়া, সামাজিক অবক্ষয় ও মানসিক সমস্যার কারণে দিন দিন অত্নহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এর জন্য পারিবারিক কাউন্সিলিং দরকার।
পীরগঞ্জ উপজেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি জয়নাল আবেদিন বাবুল বলেন, ইন্টারনেট আসক্তি, সামাজিক বিশৃংখলা, হতাশা ও আবেগ থেকেই এমনটা হচ্ছে অভিমত প্রকাশ করেন ।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল জব্বার জানান, মানসিক অবস্বাদ গ্রস্থ যারা তারাই নিজের উপর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে আত্নহত্যার পথবেছে নেয়। তাদের বোঝাতে হবে। তাদের মনে আত্মবিশ্বাস জাগাতে হবে। তবেই এ প্রবণতা কমানো সম্ভব।
পীরগঞ্জ থানা পরিদর্শক (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন এর আগে তো এমনটা ছিল না। কিছুদিন যাবত উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আত্নহত্যার ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি বুঝা যাচ্ছে না কেন এমনটা হচ্ছে ।