নলডাঙ্গার হালতিবিলে প্রাণীটি বাঘ নয়”বনবিড়াল”
একটি বনবিড়াল দেখা গিয়েছে,নাটোরের নলডাঙ্গার হালতিবিলের বাঁশিলা এলাকায়। সম্প্রতি প্রাণীটিকে দেখতে পায় স্থানীয়রা। এসময় স্থানীয় এক যুবক ছবি তুলে,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বাঘ লিখে পোষ্ট দেন। চারিদিকে ছড়িয়ে পরে আতঙ্ক।
বিষয়টি নজরে আসে-বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশন-বিবিসিএফ,র সদস্য সংগঠন সবুজ বাংলার সদস্যদের। বিবিসিএফ এলাকাটি পরির্দশন করে এবং জনসচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারনা চালানো হয়।
বিবিসিএফ,র দপ্তর সম্পাদক ফজলে রাব্বী জানান,আসলে প্রানীটি বাঘ নয় বনবিড়াল। আমরা জানতে পেরে,এলাকাটি পরির্দশন করা হয়েছে ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারনা চালানো হয়েছে।
(বনবিড়াল বা Jungle cat আমাদের গ্রাম-বাংলার মানুষের কাছে অতি পরিচিত একটি প্রাণী। সবচেয়ে বড় প্রজাতির বনবিড়ালের বৈজ্ঞানিক নাম Felis chaus। এরা সাধারণ বিড়ালের থেকে প্রায় তিন গুণ বড় এবং এদের পা তুলনামূলক অনেকটা লম্বা। গায়ের রং হলদেটে ধূসর বা বালুর বর্ণের সঙ্গে হালকা লালচে-বাদামি আভাযুক্ত। লেজের মাঝ থেকে শেষ পর্যন্ত কালো ডোরাকাটা দাগ আছে। পেছনের ও সামনের পায়ের ঊরুর দিকেও ডোরাকাটা দাগ দেখা যায়। মাথা দেহের তুলনায় অল্প ছোট ও গলা লম্বা। পা লম্বা হওয়ার কারণে এরা অনেকটা লাফিয়ে শিকার ধরতে পারে। এদের বড় কান ও তীক্ষ শোনার ক্ষমতা শিকারের একেবারে নিখুঁত ও সঠিক অবস্থান বুঝতে সাহায্য করে।
বনবিড়াল খুব চালাক প্রকৃতির প্রাণী। মাটিতে যেমন দ্রুত দৌড়াতে পারে, গাছে ওঠা, এমনকি সাঁতারেও সমান দক্ষ। বনবিড়াল সাধারণত ঘন ঝোপঝাড়ের ভেতরে থাকতে পছন্দ করে বিশেষত যেখানে সূর্যের আলো তেমন পৌঁছায় না। তবে রোদ পোহানোর জন্য ও শিকারের তাগিদে এবং বাসস্থান পরিবর্তনের জন্য খোলা জায়গায় আসে। এরা একা থাকতেই বেশি পছন্দ করে। তবে প্রজননের সময় সঙ্গিনীর সঙ্গে থাকে। ডিসেম্বর ও জুলাই মাসে এরা বাচ্চা প্রসব করে এবং প্রায় ছয় মাস বয়স পর্যন্ত বাচ্চারা মায়ের সঙ্গে থাকে। বনবিড়াল বছরে তিন থেকে পাঁচটি বাচ্চা দেয়। ছোট পাখি, ইঁদুর, ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ গৃহপালিত হাঁস-মুরগি এদের খাদ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত।
এদের জীবনকাল ১৪ বছর। এই বিড়াল বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, ভারত, ইসরায়েল, মিয়ানমার, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, ভুটান, জর্জিয়া, লাওস, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, মিসর, ইরাক, ইরান প্রভৃতি দেশে দেখা যায়।
বাংলাদেশে প্রাপ্ত সবচেয়ে ছোট বনবিড়ালের প্রজাতির নাম চিতামাসি। এর ইংরেজি নাম Leopard Cat ও বৈজ্ঞানিক নাম Felis bengalensis। লেজ বাদে শরীরের মাপ ৬৩ সেন্টিমিটার। লেজ ২৯ সেন্টিমিটার। ওজন আড়াই কেজি থেকে সাড়ে চার কেজি। এদের দেহে চিতাবাঘের মতো বাদামি বা কালো বুটি বুটি দাগ, লেজ-পায়েও একই রকম বুটি থাকে। কানের পেছনে সাদা গোলাকার ছোপ থাকে বাঘের মতো। এই প্রজাতির বনবিড়ালও গাছে চড়তে ওস্তাদ, কুশলী শিকারি, তুখোড় সাঁতারু ও দারুণ দৌড়বিদ। গাছে চড়ে রাতে এরা ছোট ছোট পাখি ও পাখির ছানা শিকার করে, বাসার ডিম চুরি করে। এক লাফে সাত ফুট দূরত্ব এরা অনায়াসে পার হতে পারে। খাদ্যতালিকায় আছে পোকা-পতঙ্গ-ব্যাঙ-মাছ-ইঁদুর-হাঁস-মুরগির ছানা ইত্যাদি।
বন্যপ্রাণী( সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা)আইন- ২০১২ অনুযায়ী-পাখি শিকার,হত্যা,আটক ও ক্রয়-বিক্রয়/বন্যপ্রাণী আটক,হত্যা,শিকার এবং ক্রয়-বিক্রয় করলে কারাদন্ড/জরিমানার বিধান রয়েছে।