শাহজাদপুরে হাটবাজার টেন্ডার নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ।
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর পৌরসভার দ্বারিয়াপুর হাট-বাজার (তাঁতের শাড়ি-লুঙ্গীর হাটসহ) ইজারা প্রদানে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উত্তরবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই হাটটি শাহজাদপুর পৌর মেয়র মনির আকতার খান তরু লোদী নিজের করায়ত্বে রাখতে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে একক স্বেচ্ছাচারিতায় নিজের বাড়ির কাজের লোকের নাম সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
নানা অনিয়ম-দূর্ণীতির মাধ্যমে পৌর মেয়রের বাড়ির ম্যানেজারের নামে শাহজাদপুর পৌরসভার দ্বারিয়াপুর হাট-বাজার (তাঁতের শাড়ি-লুঙ্গীর হাটসহ) ইজারা প্রদান বন্ধে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মোঃ শামসুজ্জোহার মাধ্যমে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ইজারা পেতে আগ্রহী দু’জন দরদাতা। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাহবুবে ওয়াহেদ শেখ কাজল এবং উপজেলা যুবলীগের সবেক আহ্বায়ক মোঃ রাজীব শেখ এ অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৯-২০ইং অর্থ বছরে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার শাহজাদপুর পৌরসভাধীন দ্বারিয়াপুর হাট-বাজার (তাঁতের শাড়ি-লুঙ্গীর হাটসহ) ১,২৫,০০,০০০ টাকা (এক কোটি পঁচিশ লাখ টাকা) ইজারার উন্মুক্ত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ইজারা প্রদান করা হয়।
এতে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় করেন। অপরদিকে মেয়র নির্বাচিত হয়েই মনির আক্তার খান তরু লোদী গত ২০২০-২০২১ ইং অর্থ বছরে উন্মুক্ত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ছাড়াই অনিয়ম-দূর্ণীতির মাধ্যমে গোপনে নিজ বাড়ির চাকর রফিকুল ইসলামের নামে মাত্র ৭৪,০০,০০০ টাকা (চুয়াত্তর লাখ টাকায়) ইজারা প্রদান করে নিজে বিপুল পরিমানে অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন। এতে ওই বছরে সরকার ৫১,০০,০০০ টাকা (একান্ন লাখ টাকা) রাজস্ব হারায়। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২০২২ ইং অর্থ বছরেও একই কায়দায় উন্মুক্ত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ছাড়াই অনিয়ম-দূর্ণীতির মাধ্যমে গোপনে নিজের পছন্দের ব্যক্তির নামে ইজারা দেওয়ার পায়তারা শুরু করেন।
পরবর্তীতে বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদের কারণে পৌরসভার মেয়র উন্মুক্ত দরপত্র ফরম বিতরণ করতে বাধ্য হন। উন্মুক্ত দরপত্রের সকল নিয়ম মেনে দরপত্র ফরম বিক্রির শেষ তারিখ ৮ মার্চ যথা সময়ে ফরম সংগ্রহ করে দরপত্র জমাদানের শেষ তারিখ ৯ মার্চ দুপুর ১ টার আগেই সিলগালা করা খামে পৌরসভার নির্ধারিত সিলগালা করা বাক্সে মাহবুবে ওয়াহেদ শেখ কাজল ১,৬১,০০০০০/= টাকা (এক কোটি একষট্টি লাখ টাকা) দর নির্ধারণ করে এবং মোঃ রাজিব শেখ ৯৫ লাখ টাকা দর নির্ধারণ করে দরপত্র জমা দেন। ওইদিন বিকাল ৩ টার সময় সকল দরদাতার উপস্থিতিতে বাক্স খোলার নিয়ম থাকলেও শাহজাদপুর পৌর মেয়রের অনুপস্থিতি দেখিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে বাক্স না খুলে পরদিন ১০ মার্চ দুপুর ১২ টার পরে খোলে।
এ সময় দেখা যায় ৩টি দরপত্র জমা পড়েছে। জমাকৃত দু‘টি ছাড়াও শাহজাদপুর পৌর মেয়র মনির আক্তার খান তরু লোদীর বাড়ির ম্যানেজার দ্বারিয়াপুর গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে আবু বক্কার এর নামে অপর একটি দরপত্রসহ মোট ৩টি দরপত্র জমা পড়ে। এসময় দেখা যায় দরপত্র জমাদানের বাক্সের সিলগালা করা তালার গায়ে কোন সিলগালা করা নেই, শুধু সূতা দিয়ে পেচানো রয়েছে।
এই অনিয়মের প্রতিবাদ করলে পৌর কর্তৃপক্ষ কোন কর্ণপাত না করে শাহজাদপুর পৌর মেয়র মনির আক্তার খান তরু লোদীর বাড়ির ম্যানেজার দ্বারিয়াপুর গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে আবু বক্কারকে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তিনি দর দিয়েছেন ১,৬২,০০০০০/= টাকা (এক কোটি বাষট্টি লাখ টাকা)।
মাহবুবে ওয়াহেদ শেখ কাজল অভিযোগ করে বলেন, পৌর মেয়র মনির আকতার খান তরু লোদী ৯ মার্চ রাতে গোপনে দরপত্র বাক্স খুলে আমার দর দেখে তার চেয়ে মাত্র ১ লাখ টাকা বেশি দর দিয়ে তার পছন্দের ব্যক্তি নিজ বাড়ির ম্যানেজার আবু বক্কার এর নামে ইজারা প্রদানের মাধ্যমে মূলত নিজে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর পৌর মেয়র মনির আকতার খান তরু লোদী জানান, টেন্ডার ড্রপ এবং ওপেন নিয়ম অনুযায়ীই হয়েছে। আপনি অফিসে এসে দেখে যাবেন সকল প্রমাণাদি আছে।
শাহজাদপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলি হারুনর রশীদ মুঠোফোনে জানান, ৯মার্চ বিকেল ৩ টায় টেন্ডার ওপেন হওয়ার কথা থাকলেও মেয়র অনুপস্থিত থাকায় পরদিন ১০ মার্চ বেলা ১১ টায় ওপেন করা হয়েছে। তবে অফিসিয়ালি ৯ মার্চই ওপেন দেখানো হয়েছে।