শাহজাদপুরে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে সফল উদ্যোক্তা কৃষক ইয়াকুব আলী।
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লী বিল কলমি গ্রাম। মাঠের পর মাঠ জুড়ে সবুজ পেঁয়াজের খেত। হালকা বাতাসে মৃদু ঢেউয়ের মত দোল খেলছে পেয়াজের কোম ডাটা। ঠিক মাঝখানেই চোখ আটকে গেল ধবধবে সাদা কদম ফুলের মত ফুটে থাকা পেঁয়াজ কলি। সরেজমিনে এমন নয়নাভিরাম পেয়াজ ফুল দেখতে দেখতেই কথা হলো খেতের মালিক কৃষক ইয়াকুব আলীর সাথে।
শাহজাদপুর উপজেলার রূপবাটি ইউনিয়নের বিল কলমি গ্রামের আর দশ জনের মতই তিনি একজন পেঁয়াজ চাষি। ইতোমধ্যেই তিনি এলাকায় পেঁয়াজ বীজের কারিগর হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন।
সিরাজগঞ্জের গন্ডি পেড়িয়ে সারাদেশে তার উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজ পৌঁছে যাচ্ছে এখন কৃষকের হাতে। তিনি পিঁয়াজ বীজ উৎপাদন করে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবেও এখন অনেক চাষির কাছে তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তাকে অনুসরণ করে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। গত ৪ বছর যাবত ইয়াকুব আলীর উৎপাদিত উৎকৃষ্ট মানের পেঁয়াজের বীজ এখন দেশজুড়েও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
পেঁয়াজ বীজ চাষী ইয়াকুব আলী জানান, ‘উপজেলা কৃষি অফিসের উৎসাহে ৪ বছর আগে একরকম হেলাফেলা ভাবেই ১০০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ শুরু করি। সেখান থেকে যে পরিমাণ বীজ পাই তাতে ব্যাপক লাভবান হই। সেই ধারাবাহিকতায় ব্যাপক উৎসাহ নিয়েই নিয়মিত পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করে আসছি। এখন আমার দেখাদেখি অনেকেই পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন শুরু করেছে। ‘
তিনি আরও জানান, তার উৎপাদিত বীজ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যান। চাষিরা তার বীজ কিনে চাষে আশানুরুপ ফল পান। এ থেকে তার বীজের চাহিদা বাড়তে থাকে। এখন প্রায় সারাদেশেই ‘ইয়াকুব আলীর পেয়াজ বীজ’ পৌছে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি সফল হয়েছি।’
শাহজাদপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম বলেন, কৃষক পর্যায়ে উন্নত মানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় কৃষক ইয়াকুব আলী একটি প্রদর্শনি নিয়ে কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজ হলে উৎপাদন করে আসছেন। দেশে ভালো বীজের চাহিদা মেটাতেই সরকারের এ উদ্যোগ। আর সরকারের এই উদ্যোগের সাথে একাত্ম হয়ে কৃষক ইয়াকুব আলী ভালো মানের পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করে শতভাগ সফলতা অর্জন করে তিনি এখন সফল উদ্যোক্তা।
শাহজাদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ওয়াজেদ আলী জানান, শাহজাদপুর উপজেলার রূপবাটি ইউনিয়নের এই অঞ্চলে এ বছরে ৩০/৩৫ হেক্টর জমিতে পিয়াজ চাষ হচ্ছে। তাই এখানে পেঁয়াজ বীজের চাহিদাও রয়েছে। সেই চাহিদা থেকেই কৃষি অফিসের সহযোগিতায় পেঁয়াজ বীজ চাষে আগ্রহী হয়ে সফলতা পেয়েছেন কৃষক ইয়াকুব আলী।
বিল কলমি এলাকার চাষী হালিম সরকার, আব্দুল কাদের, আবদুল বারি, জয়নাল আবেদীন জানান, ‘পেঁয়াজ চাষ অন্যান্য ফসলের থেকে লাভজনক হওয়ায় আমরা পেঁয়াজ চাষ করছি। আমাদের গ্রামেরই কৃষক ইয়াকুব আলীর কাছে থেকে ভালো মানের বীজ পাওয়ায় আমাদের ফলনও অনেক ভালো হচ্ছে।