রাণীশংকৈলে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তিতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের হাটবাজার গুলোতে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। প্রায় সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। দাম বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ডাল, পেঁয়াজ ও ভোজ্য-তেল সহ বিভিন্ন পণ্যের দাম। বেশিদরে বিক্রি হচ্ছে সবজি; ঝাল বেশি কাঁচামরিচেরও। দাম বাড়তির কারণে এসব নিত্যপণ্য কিনতে নাভিশ্বাস উঠছে ক্রেতাদের।
ক্রেতাদের অভিযোগ, মোটা চাল থেকে শুরু করে বাজারে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দরই বাড়তির দিকে। আর সবজির বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজিই মিলছে না।
সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েকদফা বন্যার কারণে এ বছর মৌসুমি সবজির ফলন ভালো হয়নি। এ কারণে আড়তে সবজি আসছে কম। ফলে দামও বেশি।
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে চরম সংকটে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা। দ্রব্যমূল্যের ক্রম ঊর্ধ্বগতিকে কেউ কেউ দাবানলের সঙ্গে তুলনা করছেন। আগে যেখানে প্রচলিত বাক্য ছিল ‘নিত্যপণ্যের বাজারে আগুণ’। চাল-ডাল-তেল থেকে শুরু করে অতি প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দামের একই অবস্থা। নিত্যপণ্যের দামের এমন ঊর্ধ্বগতিতে প্রবণতার জন্য করোনা মহামারিতে উৎপাদন কমে যাওয়া, বিশ্ববাজারে অস্থিরতা, অতিরিক্ত আমদানি নির্ভরতা ও সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীদের কারসাজিকে দায়ী করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। আবার কেউ কেউ অভ্যন্তরীণ বাজারের সুশাসনের অভাবকেও দায়ী করছেন।
সরেজমিনে উপজেলার শিবদীঘি, নেকমরদ, কাতিহারসহ একাধিক সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে আলু, টমেটো, গোল বেগুন, লম্বা বেগুন, করলা, পটল, লাউ, মটরশুঁটি, কাঁচা পেঁপে, শসা, গাজর, ফুলকপি, পাতাকপি, বরবটি, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙ্গা, কচুর লতি, পালংশাক, লালশাক, পুঁইশাক, লাউয়ের ডগাসহ বিভিন্ন প্রকারের শাক পাওয়া যাচ্ছে।
বাজারে কাঁচামরিচ ৬০-৮০টাকা, আলু ২০-২৫ টাকা, টমেটো ৪৫ টাকা, গোল বেগুন ৪০টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৪৫-৫০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৫০- ৬৫ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে। এক হালি লেবু এবং ৪০ টাকা। দাম বেড়েছে সয়াবিন তেল, খোলা লবণ, গোখাদ্য, ও মাছের।
পাতাকপির দাম স্থিতিশীল থাকলেও গত সপ্তাহের তুলনায় দাম বেড়েছে ফুলকপি ও ব্রোকলির। পাতাকপি আগের মতোই ৩০-৪০ টাকা পিস বিক্রি হলেও ফুলকপি ও ব্রোকলি ৫০-৫৫ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে।আকারভেদে প্রতি পিস লাউ ৫০-৬০ টাকা পর্যন্ত দাম চাইছেন বিক্রেতারা।
ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, কোয়েল পাখি পিসপ্রতি ২৫ থেকে ৫০ টাকা, লেয়ার মুগরি পিসপ্রতি ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা এবং মুরগির ডিম হালিপ্রতি ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা দরে মিলছে। অবশ্য দেশি মুরগির ডিম কিনতে প্রতি হালিতে খরচ করতে হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর হাসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা হালি।
এদিকে লাউশাক, পালং শাক, লাল শাক, কলমি শাক, কচু শাক, পুঁইশাক বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা আঁটি দরে। মসলার মধ্যে পেঁয়াজ ৪০-৫০ টাকা, রসুন ১৩০-১৪০ টাকা, দেশি আদা ৯০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
নেকমরদ বাজারে নিত্যপণ্য এবং সবজি কিনতে আসা লুতফর রহমান বলেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি।
এ কারণে বাজারের হিসেবে টান পড়েছে। কোনোরকমে বাজার করে মাস চালাতে হবে।
শ্রমজীবী নাসিম জানান, তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। এখন কাজ তেমন নেই। তাই আয়ও কম। কিন্তু বাজারে সবকিছুরই দাম বেশি। বিশেষ করে চাল ডাল ও তৈলের দাম বাড়ায় কষ্ট বেশি হচ্ছে তার। কারণ চাল কিনতে পারলে কোনোরকমে ডাল-ভাত খেয়ে দিন কাটানো যায়। দাম বাড়ার কারণে তিনি বিপাকে পড়েছেন।
রাণীশংকৈল উপজেলার সবকটি বাজারেও নিত্যপণ্যের দর বেড়েছে। প্রশাসন বলছে, বাজার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রিকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাৎক্ষণিক দণ্ড দেওয়া হচ্ছে। আর তা অব্যাহত থাকবে