তানোরে কৃষি কর্মকর্তার সামনে কৃষি মন্ত্রীকে সার সঙ্কটের অভিযোগ।
রাজশাহীর তানোরে পটাশ সারের তীব্র সঙ্কট এবং বাড়তি দামে পাওয়ার বিষয়ে স্থানীয়রা মাননীয় কৃষি মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ডক্টর আব্দুর রাজ্জাকের নিকট অভিযোগ করেন। গত শনিবার উপজেলার কামারগাঁ ইউপির ছাঔড় আলুর মাঠে এগ্রিকনসার্ন নামের প্রতিষ্ঠান ২০ জাতের রপ্তানিমুখী আলু উৎপাদনের মাঠ পরিদর্শনে আসেন হাস্যজ্জল বিনয়ী কৃষি মন্ত্রী। এসব জাতের আলু চাষের জন্য চাষীদের মাঝে ব্যাপক ভাবে প্রচারের জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহবান জানান তিনি।
এসময় স্থানীয় এক গণমাধ্যম কর্মী পটাশ সার সঙ্কটের বিষয়ে মাননীয় মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি উপজেলা কৃষি অফিসার শামিমুল ইসলাম কে সার কেন পাচ্ছে না বলতে বলেন।
কৃষি অফিসার শামিমুল ইসলাম জানান, পটাশ সার পাওয়া যাচ্ছে। তবে এই এলাকার কৃষকরা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি ব্যবহার করেন।
তিনি আরো বলেন যেখানে ত্রিশ কেজি পটাশ সারের প্রয়োজন সেখানে অনেক বেশি ব্যবহার করেন এই এলাকার কৃষকরা।
একই সুরে এগ্রিকনসার্ন এর ব্যবস্হাপনা পরিচালক আব্দুল কাদেরও বলেন আমরা যে ২০ জাতের আলু উৎপাদন করেছি তাতে সামান্য পরিমাণ সার কীটনাশক ব্যবহার করেছি। এই এলাকার কৃষকরা অতিরিক্ত সার কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন।
মাননীয় মন্ত্রী বলেন, যদি অতিরিক্ত সার ব্যবহার করেন, তাহলে কৃষক দের বোঝাতে হবে। কৃষক রা অযথা কেন বাড়তি খরচ করবেন। অল্প ব্যবহারে ফসল উৎপাদন হলে কৃষক কেন বেশি সার ব্যবহার করবেন। আর অতিরিক্ত লাগলে সে মোতাবেক প্রয়োজনে বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং চাষীদের মাঝে সভা,মাঠ দিবস, সেমিনারসহ তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের নিয়েও প্রচারণা করতে হবে।
জানা গেছে, উপজেলায় এখন বোরো ধানের জন্য পটাশ সারের প্রয়োজন। কিন্তু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পটাশ সার। কলমা ইউপির পিপড়া গ্রামের বোরো চাষী ফারুক জানান, পটাশ সার সরকারি মূল্য সাড়ে ৭ শত টাকা। কিন্তু এই দামে কোনভাবেই মিলছে না এই সার।আবার বাড়তি দাম দিলেই মিলছে। ৫ বিঘা জমিতে বোরো রোপন করেছি।কয়েকদিন আগে ১১০০ টাকা বস্তা পটাশ সার কিনেছি। তার কাছে মেমো কিংবা দোকানের নাম জানতে চাইলে তিনি জানান এটা বলতে পারব না। তাহলে আর সার পাওয়া যাবে না। অমৃতপুর গ্রামের বোরো চাষী আতাউর জানান ৪ বিঘা জমিতে বোরো লাগিয়েছি। পটাশ সার কিনতে হয়েছে ১০৬০ টাকা করে।
একাধিক কৃষকরা জানান,এসময় কখনো পটাশ সারের সঙ্কট দেখিনি। কিন্তু কেন এবার সার নিয়ে ছিনিমিনি করে চাষীদের পকেট কাটা হচ্ছে । আর কৃষি দপ্তর এসব বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না। আলু রোপন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত চলছে সার নিয়ে কারসাজি। আমাদের তো মনে হয় ডিলাররা সার না এনে মোকামেই বিক্রি করে দেন। এছাড়াও সার বিপণনে সরকারি কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করেন না বিসিআইসির ডিলাররা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সার ব্যবসায়ী জানান, কামারগাঁ ইউপির বিসিআইসির ডিলার বিকাশ খুদ্র ব্যবসায়ীদের সার দেন না।তিনি বিভিন্ন এলাকায় বাড়তি দামে সার বিক্রি করেন।
আরেক ব্যবসায়ী জানান,আসলেই চাহিদা অনুযায়ী পটাশ সার বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। অনেক ব্যবসায়ী বিভিন্ন এলাকা থেকে বাড়তি দামে পটাশ সার নিয়ে আসার কারনেই বেশি দাম নিচ্ছে । তিনি আরো বলেন আগের চেয়ে অনেক বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। কিন্তু দাম একই আছে। রাশিয়া থেকে পটাশ সার আমদানি করে।যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে আগামীতে কি হয় কে যানে বলে আশংকা প্রকাশ করেন এই ব্যবসায়ী।
উপজেলা বিসিআইসির ডিলার সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বাবু বলেন, চাহিদার তুলনায় পটাশ সার কম পাওয়া গেছে। তবে অল্প দিনের মধ্যে সঙ্কট কেটে যাবে বলে মনে করছেন এই ব্যবসায়ী।