গোদাগাড়িতে বাণিজ্যিক ভাবে আতা চাষে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছে আব্দুল করিম।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী সন্তান আব্দুল করিম। বয়স ৩৬ বছর। ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকুরি করতো। বাড়ী রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার সাহাব্দিপুর জোত জয়রাম গ্রামে। ইউটিউব এ আতা চাষ দেখে আতা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন তিনি। চাকুরি ছেড়ে নিজ এলাকা গোদাগাড়ী উপজেলার সাহাব্দিপুর জোত জয়রাম গ্রামে এসে গড়ে তুলেন আতার বাগান।
তিনি সাড়ে ৬ বিঘা জমিতে শুরু করেছে আতা চাষ। এর মধ্যে সাহাব্দিপুর জোত জয়রাম গ্রামে ২ বিঘা নিজের জমিতে ও মাছমারা গ্রামে অন্যের সাড়ে ৪ বিঘা জমি প্রতি বছর বিঘা প্রতি ১৪ হাজার করে ১০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে গড়ে তোলেন তার ২টি আতার বাগান। আতা চাষ করে সফল হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন আব্দুল করিম।
আতা বাগানে গিয়ে কথা হয় আতা চাষি আব্দুল করিমের সাথে, তিনি তার আতা চাষের কথা বলেন, ইউটিউব এ দেখে শুরু করেন আতা চাষ। ঢাকায় চাকুরি করা সময় ইউটিউব এ আতা চাষ দেখে সফল হবেন কিনা তা পরীক্ষা করতে ছাদে টবে প্রথমে কয়েকটি আতা গাছের চারা লাগান। চারাগুলো যত্ন করে দেখেন আতা চাষ করা সম্ভব। তিনি চাকুরি ছেড়ে চলে আসেন নিজ এলাকায় আতা চাষের জন্য।
অনলাইনে খোঁজ নিয়ে ভারতের মহারাষ্ট্রের সোলাপুর জেলার বার্সি থানা থেকে অনলাইনে ১ হাজার ১৪০ টি আতা গাছের চারা অর্ডার করেন। কিছু দিনের মধ্যে বেনাপুল সীমান্তের স্থল বন্দর দিয়ে ঢাকায় আসে। সেখান থেকে তিনি নিয়ে আসেন। তার নিজ এলাকায় চারা নিয়ে আসতে সব খরচ মিলে প্রতিটি চারা প্রতি খরচ হয় ৫ শ টাকা করে। তবে চারা আসতে কিছু দিন সময় লাগায় কিছু চারা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
সাহাব্দিপুর জোত জয়রাম গামে ২ বিঘার বাগানে দেড় বছর আগে ৩শ’ ও মাছরা গ্রামে সাড়ে ৪ বিঘার বাগানে ৬ মাস আগে ৭ শ আতার গাছ লাগিয়েছে। তার আতার বাগানে ৬ জাতের আতা রয়েছে। এর মধ্যে বানিজ্যিক ভাবে ৩ জাতের আতা রয়েছে।
বানিজ্যিক ভাবে চাষের জন্য লাগানো জাত গুলো থাই, এন এম কে-১ সুপারে গোল্ড ও কে ডি এস-৩। এছাড়াও শখ করে লাল আতা, দেশী আতা ও বারবেলা জাতের কয়েকটি গাছ তৈরী করেছে বাগানে। তার সাড়ে ৬ বিঘার বাগান করতে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা।
তিনি আরো বলেন, আতা গাছ লাগার ২ বছর পর গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা যাবে। ফল শুরুর প্রথম বছর প্রতিটি গাছে ৪ থেকে ৫ কেজী ফল পাওয়া যাবে। গাছের বয়স পরিনত হলে প্রতিবছর প্রতিটি গাছ হতে ৪০ কেজি থেকে ৫০ কেজি ফল পাওয়া যাবে। এক একটি ফলের ওজন ৩শ’ গ্রাম থেকে ১ কেজি ৫শ’ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। প্রতি কেজি আতা ২ শ’ টাকা থেকে ৭শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে।
পরিচর্যার বিষয়ে তিনি বলেন, ফুল আসার আগে পর্যন্ত ৬ মাস জমিতে কোন সার, কিটনাশোক ও সেচ দেওয়া লাগেনা। বছরে ৬ মাস কিছুই করা লাগেনা আতার বাগানে। আতার গাছে মে মাসে ফুল আসা শুরু করে। জুন ও জুলাই মাস থেকে ফল সংগ্রহ করা যায়। ফুল আসার সময় থেকে আতা বাগানের পরিচর্যা করা শুরু হয়। শীতের শেষ সময় আতা গাছের পাতা হলুদ হয়ে ঝড়ে যাওয়ার পর নতুন পাতা গজাতে শুরু করে।
আতা ফলের গুনাগুন আতা সুস্বাদু এক ধরনের যৌগিক ফল। এটি শরিফা এবং নোনা নামেও পরিচিত। এ ফলের ভিতরে থাকে ছোট ছোট কোষ। প্রতিটি কোষের ভিতর থাকে একটি করে বীজ, বীজকে ঘিরে থাকা নরম ও রসালো অংশই খেতে হয়। পাকা ফলের বীজ কালো এবং কাচা ফলের বীজ সাদা। আতা খেতে ভারি মিষ্টি, এ ফল খুব সজলভ্য। পাকা আতার শাঁস মিষ্টি হয়ে থাকে। খাওয়ার সময় জিভে চিনির মতো মিহি দানা দানা লাগে।
এই ফলটির প্রতি ১০০ গ্রামে পাওয়া যায় শর্করা ২৫ গ্রাম, পানি ৭২ গ্রাম, প্রোটিন ১.৭ গ্রাম, ভিটামিন এ ৩৩ আইইউ, ভিটামিন সি ১৯২ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৭ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২১ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৩৮২ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৪ মিলিগ্রাম।
আতাফলে থাকা ফসফরাস খাবারের হজম শক্তিকে বাড়িয়ে তুলে, প্রচুর ভিটামিন এ এর উপস্থিতির কারণে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।রক্ত শূন্যতা দূর করে আতাফল আয়রনে পরিপূর্ণ। লোহিত রক্তকণিকা বাড়তেও সাহায্য করে আতা। হাড় মজবুত করে আতা ফলে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে যা শরীরের হাড় গঠন ও মজবুত রাখার জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। রক্তাচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে আতার মধ্যে পটাসিয়াম রয়েছে। পাশাপাশি খারাপ কোলেস্টেরলকে শরীর থেকে বের করে দেয় এই ফল টি। ত্বক ও চুলের যত্নে আতা ফলে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ফ্রি রেডিক্যাল নিয়ন্ত্রণ করে ত্বক কে রক্ষা করে। এতে উপস্থিত ভিটামিন এ এবং সি চোখ, চুল ও ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
হৃৎরোগ প্রতিরোধ করে আতা ফলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মাংসপেশির জড়তা দূর করে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাছাড়া এর পটাশিয়াম ও ভিটামিন বি৬ রক্তের উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। আতা ফলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহের উপস্থিতি ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে, ফলে এটি শিশুদের জন্য অত্যন্ত উপকারি।
তবে যাদের সুগারে সমস্যা আছে তাদের হিসেব করে আতা খাওয়া উচিত। ডায়াবেটিকের রোগীদের একদমই আতা খাওয়া চলবে না।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন সুলতানা বলেন, এ কৃষক আগে পেয়ারা ও কুলের চাষ করেছিল। তাকে অপ্রচলন ফল হিসাবে আতা চাষের পরার্মশ দেওয়া হয়েছিল।
পরামর্শক্রমে সে আতা চাষ করেছে। এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া আতা চাষের উপযোগী। তারা আতা বাগান পরিদর্শন করে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মাঝে মাঝে অফিসে এসে পরামর্শ নিয়ে যান তিনি। আতা ফলের বাজারে দামও বেশী। আতা চাষ করে সফল হবেন তিনি। পাশাপাশি অন্যান্য কৃষকদের আতাফল চাষ করার পরামর্শ দিয়েছেন এ কৃষি কর্মকর্ত।