প্রশাসনের নাকের ডগায় ইট ভাটায় পুড়ছে কাঠ; হুমকির মুখে পরিবেশ !
নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় ইটভাটার মালিকরা সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশের্ব ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে লাইসেন্সবিহীন বেশ কিছু ইট ভাটা গড়ে তুলেছেন।
এসব ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেই। হঠাৎ কয়লার দাম বাড়তি হওয়াই স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দেদারছে লাকড়ি দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমি। এছাড়া দেশের সকল বনভুমি উজার করায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩তে বলা হয়েছে, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির ইটভাটা অর্থাৎ জিগজ্যাগ ক্লিন, হাইব্রিড হফম্যান ক্লিন, ভার্টিক্যাল শফট ক্লিন, টানেল ক্লিন বা অনুরোপ উন্নততর কোনো প্রযুক্তির ইটভাটা স্থাপন করতে হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসকের অনুমোদন বা লাইসেন্স না নিয়ে ইটভাটা চালু করা যাবে না। আর এ আইন অমান্য করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। আর এসব ইটভাটা তদারকি করার জন্য জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বন বিভাগ, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু তাদের রহস্যজনক নীরবতার কারণে সাপাহারের অধিকাংশ ইটভাটা মালিক এসব আইনের তোয়াক্কা না করে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে দেদারছে তাদের অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
ভাটা মালিকরা ভাটার আশাপাশে মাটি দিয়ে ইট তৈরি করে ফসলী জমির টপসয়েল শেষ করে ফেলেছেন। বর্তমানে এ উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় মাটি কিনে সেসব মাটি এক্র-কেভেটর (ভ্যাকু) দিয়ে কেটে ড্রাম ট্রাক দিয়ে ভাটায় এনে ইট তৈরি করছেন। ফলে এলাকার রাস্তাঘাট হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে সাপাহার উপজেলার মেসার্স হক ব্রিকস্ (প্রোঃ নাঈমুল হক মনিরুল) ও মেসার্স সততা ব্রিকসে গিয়ে দেখা গেছে, শিমুল ডাঙ্গা রাস্তার পাশের্ব ২টি ইটভাটা রয়েছে । নামে মাত্র (হাওয়া ভাটা) ভেতরে চলছে খড়ি পোঁড়ানোর মহোৎসব।
লাইসেন্সবিহীন তাদের এসব ইটভাটার চারপাশে মজুত করে রাখা হয়েছে হাজার মন লাকড়ি। ভাটাতে লাকড়ি পোড়ানোর ফলে ইটের চিমনি ও ড্রাম চিমনি দিয়ে প্রচণ্ড বেগে ধোঁয়া বের হচ্ছে। আর সেই ধোঁয়ায় আশপাশের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
কীভাবে চলে প্রশ্ন করা হলে তারা জানান, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও বন বিভাগ থেকে শুরু করে প্রতিটি সেক্টর ম্যানেজ করেই ভাটা পরিচালনা করা হয়ে থাকে।
সারা বাংলাদেশে যেভাবে চলছে এখানেও সবদিক ম্যানেজ করেই বরাবর যেভাবে চালানো হয়ে থাকে, এ বছরও সেভাবেই ভাটাগুলো পারিচালিত হয়ে আসছে।
সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন জানান, ২০২২ সালে এ পর্যন্ত সাপাহারে কোনো ইট ভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে অভিযানের মাধ্যমে এসব ভাটার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবিষয়ে নওগাঁ জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী (পিএএ) জানান, খোঁজ খবর নিয়ে অভিযানের মাধ্যমে এসব ভাটার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।