শেষ হলো জৈন্তিয়া খাসি জনগোষ্ঠী “হকতই” উৎসব।
‘হকতই’ হলো বাংলাদেশে বসবাসরত সিলেট জৈন্তিয়া খাসি জনগোষ্ঠী অন্যতম ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব।আবার তারা “সিন্টেং”নামেও পরিচিত।
প্রতি বছর বাংলা মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের সপ্তমী তিথিতে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এই উৎসব পালন করা মধ্যদিয়ে পূর্বপুরুষদের খ্যাতি ও মহত্ত্ব স্মরণ করা এবং পূর্বপুরুষদের বিদেহী আত্মার শান্তি-প্রশান্তি কামনা করার জন্য”হকতই” উৎসব পালন করা হয়।
“হকতই” উৎসব এর দুটি দিক আছে-একটি ধর্মীয় এবং অন্যটি সামাজিক।
অত্যন্ত আড়ম্বরে দুই দিনব্যাপী (৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি) উৎসবটি পালন করে স্থানীয় আদিবাসী ‘খাসি’ সম্প্রদায়।এ উৎসবের প্রথম দিনে পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি এবং তাদের মঙ্গল কামনার জন্য সূর্যাস্তের আগে ‘সিয়াংজা'(খাদ্য উৎসর্গ ) নামে পরিচিত বিশেষ ধর্মীয় কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়।
‘সিয়াংজা'(খাদ্য উৎসর্গ ) বিভিন্ন ফল, পিঠাসহ ও উন্নতমানের খাবার রান্না করা হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য ‘সিয়াংজা’ করার জন্য মৃত পূর্বপূরুষেরা যে খাবারগুলি পছন্দ করতেন সেগুলিতে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়।রান্নাকৃত সমস্ত খাবারের একটি অংশ আলাদা আলাদা পাত্রে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে রাখা হয়।কলা পাতার সামনের অংশ কেটে ধুয়ে বাড়ির নির্ধারিত স্থানে পূর্ব দিকে মুখ করে পাতা সাজিয়ে সেখানে ফল-মূল, পিঠা এবং রান্না করা খাবার সহ প্রতিটি খাবারের আলাদা অংশ সাজিয়ে উৎসর্গের জন্য প্রস্তুত করা হয়।উৎসর্গের কাজটি বাড়ির সর্ব বয়স্ক মহিলা কাজটি করে থাকেন তবে পরিবারের সবচেয়ে ছোট মেয়েটি যদি কাজটি সম্পাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং পরিপক্কতা অর্জন করে তবে তাকে কাজটি সম্পাদনের জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
বিশ্বাস করা হয় মৃত পূর্বপুরুষরা “সিয়াংজা”র সময়ে বাড়িতে উপস্থিত হয়ে থাকে এবং সবকিছু দেখতে পান।সেজন্য অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভক্তি সহকারে সূর্যাস্তের আগেই উৎসর্গের কাজটি সম্পাদন করা হয়।তারপর বাড়ির সবাই জড়ো হয়ে পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উৎসবের শেষ দিনে ছোট ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা এবং রাতে ঐতিহ্যগত পোশাক পরিধান করে কৃষ্টিগত নাচে-গানে তালে তাল মিলিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা মধ্যদিয়ে শেষ এই ঐতিহ্যগত “হকতই” উৎসব।