উন্নয়ন বঞ্চিত শেরপুরের দুর্লভ ঠাকুরের অলৌকিক বটবৃক্ষ দুর্লভ মন্দির।
দীর্ঘদিন ধরে উন্ন্য়ন বঞ্চিত শ্রী শ্রী দুর্লভ ঠাকুরের সিলেট বিভাগের প্রবেশদ্বার শেরপুর বনগাঁও হাসান খালি পাড়ের বিশাল বটবৃক্ষকে ঘিরে অলৌকিক দুর্লভ মন্দির। মন্দিরের সন্ধানের প্রায় ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো প্রকার উন্নয়ন বরাদ্ধ থেকে না পাওয়ায় অনেকটা অবহেলিত অবস্থায় অরক্ষিত রয়েছে মন্দিরটি। সনাতন ধর্মালম্বীদের মতে, অদ্যাবদি এই মন্দিরে এসে কায়মনচিত্তে যা চায় তা পূর্ন হয়।
দূর্লভ ঠাকুরের পূণ্য লীলা ভূমির গায়েবী বটবৃক্ষ মন্দিরকে ঘিরে প্রতি বছর অনুষ্টিত মহাউৎসব একেশ্বর মেলার ৫০ হাজারেও অধিক মানুষের জনসমাগমের জনশ্রুতি রয়েছে। অলৌকিক ওই মন্দিরের উন্নয়নের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ প্রধানমন্ত্রীর হস্থক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয়রা।
ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, শ্রী শ্রী দুর্লভ ঠাকুর প্রায় তিনশত বছর পূর্বে নবীগঞ্জ উপজেলার আলমপুর গ্রামের চুড়ামনি সুত্রধরের ঔরসে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর বাল্য নাম ছিল দেবাই রাম। বর্তমানে শেরপুরের বনগাঁও এলাকায় দুর্লভ ঠাকুর গরু চরাইতেন এবং এই স্থানেই রাত্রী যাপন করতেন। ক্রমানয়ে এই স্থানের বিশাল বঠবৃক্ষকে ঘিরে গজে ওঠে অলৌকিক মন্দির।কথিত আছে,ঠাকুরের অভিশাপে বর্তমান ওসমানীনগর উপজেলার গজিয়ার জমিদার হাসান রাজার সাঁত পুত্রের মৃত্যু হওয়াতে জমিদার হাসান ঠাকুরের সন্ধানে বাহির হন এবং বনবিল ঠাকুরের এই মন্দিরে এসে উপস্থিত হন।হাসানের উপস্থিতি টের পেয়ে দুর্লভ ঠাকুর মন্দিরের সামনের খালের পানিতে ঝাপ দেন । সেই থেকে দুর্লভ ঠাকুরের আার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি এবং তখন থেকে উক্ত খালের নাম হয় “হাসান খালি।
এলাকায় প্রবীন ব্যাক্তিদের সাথে আলাপ করে জানা যায়,১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল পাক সেনাদর সহিত মুক্তিযোদ্ধার শেরপর সম্মুখ যুদ্ধের পর আশপাশ এলাকার মানুষ বঠবৃক্ষকে ঘিরে দুর্লভ ঠাকুরের দুর্লভ মন্দিরে আশ্রয় নিয়ে তাদের প্রান রক্ষা করেন। পাকবাহিনী উক্ত মন্দির ধংসের চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ঢাকাদক্ষিন যাওয়ার প্রয়াস নিয়ে চট্রগ্রাম পাগলা শংকর (লালসাধু) নামক এক সাধক তৎকালীন শেরপুর লঞ্চঘাট আসেন।
এরপর তিনি অত্র এলাকায় একটি জাগ্রত মন্দির রয়েছে বলে স্থানীয়দের বলেন , স্থানীয় এস. কে বিদ্যা নিকেতনের শিক্ষক কালিপদ দাশ, শুকলাল রবিদাস,বিষ্ণু রাম দাশ, মঈন উদ্দিন ,মিন্টু আচার্য, সুকুমার দাশ,গবিন চাঁদ সুত্রধর, মনোরঞ্জন সরকার, খোকা সুত্রধর ,মহেন্দ্র সুত্রধরসহ এলাকায় লোকজন একত্রিত হয়ে উক্ত সাধুর সহায়তায় শেরপুরের উত্তর পশ্চিম হাসান খালি পারে বর্নগাঁও নামক স্থানে জঙ্গলাবিষ্ট দুর্লভ ঠাকুরের অলৌকিক মন্দিরের অস্তিত্ব খুজে পান। এর দুই বছর পর শেরপুরের হুসেন পুর বিষ্ণু রাম দাশ নামক একজন ঠাকুরের স্বপ্নাদেশ পান যে উক্ত মন্দিরের রক্ষনা বেক্ষন করার। স্বপ্নাদেশ প্রাপ্তির পর বিষ্ণু রাম দাশ ও কৃষ্ণলীলা সেবক সংঘের সভাপতি কালীপদ দাশ (মাস্টার )মন্দিরের সেবায় নিয়োজিত হন। সেই থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত প্রতিবছর মাঘ মাসের ১১ তারিখ বনগাঁও দুর্লভ ঠাকুরের মন্দিরে।
অষ্টপ্রহর ব্যপি নাম ও লীলা সংকীর্ত্তন হয় এতে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে এবং ১৯মাঘ ঠাকুরের দিবসে তাঁর জন্ম স্থান আলমপুর দুর্লভ ঠাকুরের আখড়ায় হরিনাম সংকীর্ত্তন হয়। কৃষ্ণলীলা সেবক সংঘের সভাপতি কালিপদ দাশ বলেন,পঞ্চ জ্ঞানান্দ্রিয়-কর্ম জ্ঞানান্দ্রিয় ও এখন হচ্ছে ১১ মাঘ বিশিষ্ট। অলৌকিক এই বঠবৃক্ষ মন্দির থেকে কেউ শূন্য হাতে ফিরে যায় না ।
আমি প্রায় ৪৩ বছর যাবত সেবক হিসাবে এখানে আছি এবং অনেক কিছু দেখেছি ও পেয়েছি এখানে ধর্ম-বর্ণের কোনো ভেদ বৈষম্য নাই। মন্দিরটি ঘিরে প্রতি বছর একাশ্বর মেলায় ৫০ হাজারের অধিম মানুষের সমাগম হওয়ায় আমরা মানুষের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে সামন্য কিছু জায়গা ক্রয় করে কোনো রখম মন্দিরটির অস্তিত্ব ঠিকিয়ে রাখলেও উন্নয়ন বঞ্চিত হওয়ায় ভক্তবৃন্দের নানা দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
কৃষ্ণলীলা সেবক সংঘের সাধারণ সম্পাদক বাবুল সুত্রধর বলেন, দুর্লভ ঠাকুরের দুর্লভ স্থান বনগাঁও এর অলৌকিক বঠবৃক্ষ মন্দিরটি স্ধাধিনতার পর থেকে উন্নয়ন বঞ্চিত থাকায় আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা সংগ্রহ করে মন্দিরটির রক্ষনাবেক্ষন করছি। মন্দিরটির সীমানা প্রসস্থকরনসহ সংস্কার কাজের উন্নয়নে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল সুত্রধর জানান, প্রতি বছর ১১মাঘ উৎসবের উদ্যোগ নিলেই টাকার অভাব হয় না। পরিচিত অপরিচিত অনেকেই টাকা দেন।কীর্ত্তনের আগে বাজেট ঘাটতি থাকলেও উৎসবের পর উদ্বতি থাকে এটাই দুর্লভ ঠাকুরের অলৌকিকতা।দুর্লভ ঠাকুরের দুর্লভ মন্দিরের উন্নয়নের সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। বিষ্ণু রাম দাশের উত্তরাধিকারী স্বপন দাশ বলেন,উৎসবের সময় প্রতিবছর দুর্লভ ঠাকুরের মন্দির হতে অলৌকিক নকুল দানা পড়ে ভাগ্য ভালো হলে তা পাওয় যায়। এখানে দুর্লভ ঠাকুরের অলৌকিকতা আমি প্রত্যক্ষ করছি।
আউশকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ দিলাওর হোসেন বলেন,মন্দিরটির উন্নয়নের জন্য আমি ব্যাক্তিগতভাবে ইতিমধ্যে ৫ হাজার ইট প্রদান করেছি। দুর্লভ ঠাকুরের অলৌকিক বটবৃক্ষ মন্দিরটির সংস্কারসহ উন্নতি কল্পে সরকারীভাবে প্রকল্প বরাদ্ধ দেয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।