আগামী ৩১ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে যাচ্ছেন সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ১ লক্ষ ৪৬ হাজর ৭০৪ জন ভোটার। আধুনিক প্রযুক্তি ইভিএমের মাধ্যমে এ উপজেলায় এর আগে কখনো ভোট গ্রহন না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহনকারী প্রার্থী,সমর্থক ও সাধারণ ভোটাররা উদ্বিগ্ন থাকলেও ইভিএমে ভোট প্রদান প্রদ্ধতির প্রচারনাসহ সচেতণতার বিষয়ে নানা অযুহাতে দায়সারা ভাব করছেন উপজেলার দ্বায়িত্বে থাকা নির্বাচন কর্মকর্তারা।
প্রথমবারের মতো ইভিএমের পদ্ধতিতে ভোট প্রদান নিয়ে সাধারণ ভোটারদের সচেতনতায় কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। ফলে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট প্রদান নিয়ে ভোটারদের মনে নানা জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক প্রার্থীদের অভিযোগ,অস্থায়ী কেন্দ্র স্থাপন থেকে শুরু করে প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম পূরণ,প্রতীক বরাদ্ধে অনিয়ম,প্রার্থীদের পছন্দনীয় ব্যাক্তিদের সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের দ্বায়িত্ব প্রদানসহ এ উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রমে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ অফিস সংশ্লিষ্টরা আর্থিক বাণিজ্যে মেতে উঠলেও প্রথমবারের মতো ইভিএমের পদ্ধতিতে ভোট প্রদান নিয়ে সাধারণ ভোটারদের সচেতনতায় কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
নির্বাচন কর্মকর্তাদের এমন দায়সারা ভাবসহ প্রচারের অভাবে ভোট কেন্দ্রে অনেক ভোটারকে ঝামেলা পোহানোসহ কেন্দ্র গিয়ে সাধারণ নাজেহাল হওয়ার শংঙ্কা রয়েছে। এমন অবস্থায় অবাধ সুষ্ট নির্বাচনের স্বার্থে ইভিএম সম্পর্কে ভোটারদের ব্যাপক ধারণা দেয়ার পাশাপাশি ইভিএমে ভোট গ্রহন সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা আয়োজন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহব্বান জানাচ্ছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা।
তবে, এ ব্যাপারে ওসমানীনগর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচারনাসহ গনসচেতণতা সৃষ্টির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তাদের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হলেও ভোট কেন্দ্রে নিয়োজিত থাকা দ্বায়িত্ব প্রাপ্তদের দুই দিনের প্রশিক্ষন ছাড়া সাধারণ ভোটার কিংবা জনসম্পৃক্ততা মূলক কার্যক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচন অফিসে ব্যাপক কর্মতৎপরতা দেখা গেলেও ইভিএমকে সাধারণ ভোটারদের মাঝে পরিচিত করার কোনো প্রয়াস লক্ষনীয় নয়। ফলে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট দিতে অভ্যস্ত উপজেলার সাধারণ ভোটাররা ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট প্রদান নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ মেশিনের মাধ্যমে ভোট দিলে সেটি পছন্দের প্রার্থী পাবেন কিনা তা নিয়েও ভোটারদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। ব্যালট পেপারের পরিবর্তে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট প্রদান নিয়ে এলাকার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্র চলছে আলোচনা। তবে ভোটের আগে মক ভোটিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে সাধারণ ভোটারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন অফিস সংশ্লিষ্টরা ।
জানা গেছে, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৭২টি ওয়ার্ডের ৭৮টি ভোট কেন্দ্রে ৪২৯টি বোথে ৭৪ হাজার ৫৩৪ পুরুষ ও ৭২ হাজার ১৭০ জন নারী সহ মোট ১ লক্ষ ৪৬ হাজর ৭০৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে এর আগে কখনো ভোট না দেয়ায় সাধারণ ভোটাররা এই পদ্ধতি সম্পর্কে তেমন একটা জানেন না।
যারা ইভিএম নিয়ন্ত্রণ করবেন তারা কতটুকু নিরপেক্ষ থাকবেন সেটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে অনেক ভোটারের। নতুন এ প্রযুক্তি কীভাবে ব্যবহার করবেন তা নিয়েও অনেক ভোটারের মধ্যে রয়েছে জানার ঘাটতি। প্রতীক কোথায় থাকবে!কেমন করে ভোট নিশ্চিত হবে ? এমন নানা প্রশ্ন সাধারণ ভোটরদের মধ্যে। বিশেষ করে নিরক্ষর,স্বল্পশিক্ষিত, গৃহিণী ও বয়স্কদের মধ্যে ইভিএম ভোট নিয়ে জড়তা ও সংশয় বেশি কাজ করছে। শুধু সাধারণ ভোটাররাই নন, ইভিএম নিয়ে অনেক চেয়ারম্যান ও সাধারণ সদস্য পদপ্রার্থীর মধ্যেও শঙ্কা রয়েছে।
উপজেলার ৮ ইউনিয়নের একাধিক ভোটারা জানিয়েছেন, এর আগে কোন নির্বাচনেই কখনোই তারা এই পদ্ধতিতে ভোট প্রয়োগ করেননি। অনেকের আবার লেখাপড়াও তেমন জানা নেই। ইভিএম সম্পর্কে ধারণা না থাকায় বয়স্করা ও মহিলারা ভোট কেন্দ্র বিপাকে পড়ারাও আশঙ্কা রয়েছে। তবে, শিক্ষিত ও তরুণ ভোটারদের মধ্যে ইভিএম ভোট নিয়ে শঙ্কা কিছুটা কম লক্ষ করা যাচ্ছে।
গোয়ালাবাজার এলাকার তরুণ ভোটার রাসেল,তাজপুরের ৬০ বছর বয়সী জমির আলী ও দয়ামীর ইউনিয়নের নাজমা বেগমসহ কয়েকেজন ভোটার জানান, এই মেশিনে কিভাবে ভোট দিতে হয় তার কিছুই আমরা জানি না। পছন্দের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের ভোট দিতে কেন্দ্রে যাওয়ার পর আধুনিক এই পদ্ধতিতে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারব কি না, সেটাই চিন্তা হচ্ছে। লোক মুখে জানতে পেরেছি, ভোট এক জায়গায় দিলে নাকি আরেক জায়গায় হয়ে যাবে। এমন নানা প্রশ্নের দ্রুবজাল সৃষ্টি হচ্ছে।
সাধারণ ভোটারদের মধ্যে যদি নির্বাচন কমিশন খোলা মেলা একটা প্রশিক্ষণ বা প্রচারণার আয়োজন করতেন তবে অনেকেই কেন্দ্র গিয়ে নাজেহাল না হওয়াসহ ইভিএম সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা লাভ করা যেত। টিভিতে অনেক নির্বাচনের খবর দেখেছি, ইভিএম বুথে দাঁড়িয়ে থেকে ভোটরদের সহায়তার নামে কিছু লোক তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন। আমরা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোট দিতে পারব কি না সেটা নিয়েই চিন্তা হচ্ছে।
ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী একাধিক চেয়ারম্যান ও সাধারণ সদস্য প্রার্থী জানান, নির্বাচনে অংশগ্রহনকরী প্রার্থীদের নিয়ে প্রশানের উদ্যোগে এক সভায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সকল প্রার্থীরাই ইভিএম নিয়ে ভোটারের শঙ্কার বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করেছেন। যদি গ্রাম অথবা ওয়ার্ড পর্যায় বা জনগুরুত্বপূর্ন স্থানে বিশেষ করে মহিলা ও বয়স্কদের ইভিএমে ভোট প্রদানের সচিত্র প্রচারের ব্যবস্থা করতেন তাহলে ভোটররা নিশ্চিন্তে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে সুবিধা হতো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইউনিয়নের সতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ইভিএম নিয়ে আ.লীগের প্রার্থী ও তার কর্মীরা ভোটারদের মধ্যে আতঙ্কসহ মানুষের মনে ভীতি ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। বলা হচ্ছে, ‘ভোট দেব এক জায়গায়, চলে যাবে আরেক জায়গায়’। তাহলে আর অন্য জায়গায় দিয়ে লাভ কি। তারা বলে বেড়াচ্ছেন, ভোটাররা যে প্রতীকেই ভোট দিক না কেন, সেটা নাকি নৌকায় চলে যাবে। এসব বিভ্রান্তিতে ভোটাররা শঙ্কায় রয়েছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বুধবার দুপুরে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটানিং কর্মকর্তার আবু লায়েশ দুলালের কার্যালয়ে গিয়ে কক্ষ বন্ধ পাওয়া যায় রাতে মঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হানা বলেন, উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে প্রচারের মাধ্যমে সাধারণ ভোটারদের ইভিএম পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার কথা রয়েছে। যদি বাস্থবায়ন না হয় তবে বিষয়টি নির্বাচন অফিসের সাথে কথা বলে দেখবো।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন ছিল গত ৩ জানুয়ারি। বাছাই ছিল ৬ জানুয়ারী, এদিন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়নি। ১৩ জানুয়ারি প্রার্থীতা প্রত্যাহার শেষ দিনে ৪জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ৫জন সাধারণ সদস্য প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন। ১৪ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগামী ৩১ জানুয়ারী ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে।