আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া সাহেব, মুহতামিম ও মুহাদ্দিস-আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
দুনিয়াতে মহান আল্লাহ যুগে যুগে এমন কিছু বিশেষ ব্যক্তিত্ব প্রেরণ করেন, দ্বীনি খেদমত ও উম্মাহর কল্যাণে যাঁদের জ্ঞান, দক্ষতা, অক্লান্ত মেহনত যেমন ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে, তেমনি জগদ্বাসী যুগ যুগ ধরে উপকৃত হয়ে থাকেন। যাঁদের গৌরবময় কর্মগাঁথা প্রজন্মের পর প্রজন্ম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। যারা পথহারা মানুষকে দিয়েছেন পথের সন্ধান। যারা নিজেদের সর্বস্ব বিলীন করে দেশ-জাতীর কল্যাণে কাজ করে গেছেন নিঃস্বার্থভাবে। শিরক-বিদআত ও ধ্বংসাত্মক কার্যাবলী প্রতিহত করে আল্লাহর দ্বীন সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সংগ্রামে যাঁরা নিজেদের আত্মনিয়োগ করে রেখেছিলেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
চট্টগ্রামের অন্যতম বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নানুপুর জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়ার সাবেক মুহতামিম, খ্যাতনামা ওয়ায়েয, বরেণ্য আধ্যাত্মিক রাহবার পীরে কামেল মুরশীদে বরহক আল্লামা শাহ জমির উদ্দিন নানুপুরী (রহ.) ছিলেন এমনই এক মহান ব্যক্তিত্ব। গত ২০১১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টায় তাঁর সকল খুলাফা, মুরিদান, মুহ্বিবীন ও শাগরিদ-তুলাবাদের এতিম করে মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে পরকালের অন্তহীন পথে বিদায় নিয়েছেন।
হযরত আল্লামা শাহ সূফী জমির উদ্দীন নানুপুরী (রহ.) বৃহত্তম চট্টগ্রাম অঞ্চলের এক আলোকিত ব্যক্তিত্ব ও নন্দিত বুযূর্গ আলেম ছিলেন। তিনি ছিলেন সাধারণের মাঝে অসাধারণত্বের ঐশ্বর্যে মহীয়ান। জ্ঞান-গভীরতা, তাকওয়া, আত্মশুদ্ধি, অধ্যাত্ম সাধনা, মানবসেবা, অন্তর্দৃষ্টি ছিল তাঁর অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। তাঁর ইলম, ব্যক্তিত্ব ও চারিত্রিক প্রভাবে বহু মানুষের জীবন ধারায় এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। একজন দক্ষ ওয়ায়েয হিসেবে দেশ জুড়ে ছিল তাঁর খ্যাতি। তাঁর সুললিত মধুমাখা কণ্ঠের যুক্তিপূর্ণ দ্বীনি আলোচনা ও উপদেশ শোনার জন্য মাহফিলে ভরপুর সমাগম হতো। তিনি ওয়াযে সবসময় বিতর্কিত বিষয় এড়িয়ে যেতেন। তাঁর ওয়ায ও নসীহতে শিরক, বিদআত, সুন্নাত, ইবাদত, আখিরাত, আমল, আখলাক, সমাজসেবা সম্পর্কীয় বিষয়াবলী প্রাধান্য পেত। যে কারণে দলমত নির্বিশেষ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল আকাশ ছোঁয়া।
চট্টগ্রাম সহ সারা বাংলাদেশের সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে ইসলাম ও ইবাদতের নামে প্রচলিত শিরক, বিদআত ইত্যাদি দূর করে তাদের মধ্যে কুরআন হাদীস সম্মত সঠিক আক্বীদা-বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করা ও ইসলামের সঠিক পথ দেখানোর লক্ষ্যে আল্লামা শাহ জমিরুদ্দীন নানুপুরী (রহ.) নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর মহান ত্যাগ-তিতিক্ষা ও কুরবানীর বদৌলতে সমগ্র দেশের আনাচে-কানাচে সঠিক ঈমান-আমল, ইবাদত-বন্দেগী এবং সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপনের আহ্বানসহ দ্বীনের আলো পৌঁছেছিল। যাঁর অক্লান্ত চেষ্টার ফলে এদেশের অগণিত অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত মুসলমান শিরক, বিদআত, কবরপূজা ও অজ্ঞতার গোমরাহীর কবল থেকে রেহাই পেয়ে খালেস দ্বীনের পথে ফিরে এসেছেন। পাশাপাশি তাঁর কর্মবহুল জীবনের চিরস্মরণীয় অধ্যায়গুলো হয়েছে বর্তমান প্রজন্মের উলামা, তুলাবা ও দ্বীনের দায়ীদের জন্য মূল্যবান পথনির্দেশক।
এই মহান সাধক আলেম ১৯৬০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইলমী মার্কাজ দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস ডিগ্রীপ্রাপ্ত হন। শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করে প্রাথমিক অবস্থায় তিনি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বাথুয়া মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হন। সেখানে শরহে জামী, সুল্লামুল উলুম, মাইবুজী, তাফসীরে জালালাইন ইত্যাদির দরস দিতেন। বাথুয়া মাদ্রাসায় ৫ বছর শিক্ষকতার পর পীরে কামেল আল্লামা শাহ সুলতান আহমদ নানুপুরী হযরত (রহ.)এর ইশারায় ১৯৬৫ সালে জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়া নানুপুরে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। জামিয়া নানুপুরে শিক্ষকতার শুরুর দিকে তিনি কাফিয়া, শরহে জামী, সুল্লাম, জালালাইন শরীফ, নাসায়ী শরীফ সহ গুরুত্বপূর্ণ কিতাবাদির দরস দেন। এছাড়া তিনি উল্লেখযোগ্য সময় ধরে জামিয়া নানুপুরের নাযেমে তালিমাতের দায়িত্বও পালন করেন।
তাঁর উন্নত আমল, দায়িত্ববোধ ও কর্মদক্ষতার প্রতি লক্ষ্য করে পীরে কামেল শাহ সুলতান আহমদ নানুপুরী (রহ.) তাঁর জীবদ্দশাতেই আল্লামা জমিরুদ্দীন (রহ.)কে মহাপরিচালক হিসেবে মনোনীত করে দায়িত্ব অর্পন করেন। আল্লামা নানুপুরী (রহ.)এর জীবদ্দশাতেই তিনি প্রায় দশ বছর যাবত এই জামিয়ার মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন এবং ইন্তিকালের আগ পর্যন্ত এই গুরু দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে যান।
আল্লামা শাহ জমির উদ্দিন নানুপুরী (রহ.)এর ২৫ বছরের সুদক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বে জামিয়া ওবাইদিয়া নানুপুর অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। তাঁর সুদক্ষ পরিচালনা ও কঠোর মেহনতের ফলে জামিয়া উবাইদিয়ার লেখা পড়ার কাঙ্খিত মান অর্জন, বিভিন্ন নতুন বিভাগ চালু, ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঈর্ষণীয় পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
ছাত্র জীবনেই তিনি সর্বপ্রথম পটিয়ার মুফতি সাহেব (রহ.)এর হাতে বায়আত ও পরবর্তীতে ইজাযত প্রাপ্ত হন। এরপর কুতবে আলম হযরত শাহ আল্লামা সুলতান আহমদ নানুপুরী (রহ.)এর নিকট হতে তিনি খিলাফতপ্রাপ্ত হন। পাশাপাশি তিনি দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার স্বনামধন্য সাবেক মহাপরিচালক শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.)এর হাতেও বায়আত গ্রহণ ও ইজাযতপ্রাপ্ত হন। গোটা বাংলাদেশে তাঁর অগণিত খলীফা, মুরিদ, মুতাআল্লিক্বীন ও শাগরিদ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা, রাজশাহী, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তিনি বহু মাদরাসা, খানকাহ ও ইসলামী পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করে যান।
আল্লামা শাহ জমিরুদ্দীন নানুপুরী (রহ.)এর মাঝে ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা ও কর্তব্য পালনে একনিষ্ঠতা এবং আমল-আখলাকে বুযর্গীর একটা প্রভাব পরিলক্ষিত হত। এ পর্যায়ে আমার নিজের একটা অনুভূতি প্রকাশ করছি। জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারীতে হযরত আল্লামা শাহ জমিরুদ্দীন (রহ.) যখন দাওরায়ে হাদীস অধ্যয়ন করছিলেন, তখন আমি মিযান জামাতের ছাত্র ছিলাম। হযরত তখন ছিলেন অত্যন্ত সুদর্শন টগবগে এক তরুণ। দাওরায়ে হাদীস অধ্যয়নের সেই ছাত্র অবস্থাতেই আমরা হযরতকে সবসময় দরসে ও কিতাব মুলায়ায় অত্যন্ত মনোযোগী দেখেছি। তিনি অন্যান্য ছাত্রদের মতো দরসের বাইরে বিকেলের অবসর সময়েও কখনো ক্যাম্পাসের বাইরে দোকানপাটে বা বাজারে যেতেন না। তিনি ছাত্রদের সাথে আড্ডা বা অনর্থক আলাপচারিতায় জড়াতেন না। সেই ছাত্র জীবনেও হযরত অন্যান্য ছাত্রদের থেকে যে ব্যতিক্রম ছিলেন, সহজেই যে কারো চোখে পড়তো। তিনি খুব কম কথা বলতেন। সবসময় পাবন্দীর সাথে জামাতে নামায আদায় করতেন। চলাফেরায় পরিপূর্ণ সুন্নাতের অনুসারী ছিলেন। ছাত্র জীবনেও হযরত কুরআন তিলাওয়াত, যিকির, তাহাজ্জুদ ও নফল ইবাদত-বন্দেগীর প্রতি বিশেষ মনোযোগী ছিলেন। যার ফলে অন্যান্য ছাত্ররা হযরতকে বিশেষ সম্মান ও সমীহ করে চলতো।
হযরত (রহ.) দাওরায়ে হাদীস উত্তীর্ণ হয়ে দারুল উলূম হাটহাজারী থেকে ফারেগ হওয়ার পর দীর্ঘ দিন আর হযরতের সাথে আমার দেখা হয়নি। কারণ, তখন বর্তমানের মতো যাতায়াত ব্যবস্থাও এত সহজ ছিল না। ফারেগ হওয়ার পর যখন আমি গড়দুয়ারা মাদ্রাসায় শিক্ষকতায় ছিলাম, তখন অনেক বছর পর হযরত শাহ জমিরুদ্দীন (রহ.)কে দ্বিতীয় বারের মতো দেখলাম মাদ্রাসার মাহফিলে বয়ান করতে। এর আগে হযরতের বয়ান কখনো আর শোনা হয়নি আমার। গড়দুয়ার মাদ্রাসা মাহফিলে হযরতের সুন্নাত ও আমলের উপর দীর্ঘ সুমধুর বয়ানে আমি এতটাই বিমুগ্ধ ও আবিষ্ট হয়ে পড়েছিলাম যে, কখন থেকে আমার দুইচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে শুরু করেছে, টেরই পাইনি। ছাত্র জীবনে হযরত আমল-আখলাক দেখা এবং এরপর গড়দুয়ার বয়ান শোনার পর হযরতের প্রতি আমার এত প্রগাঢ় শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হয়েছিল যে, ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এরপর হযরতের সাথে সময়ে সময়ে প্রায়ই দেখাসাক্ষাত ও বিভিন্ন দ্বীনি বিষয়ে মতবিনিময় হতো। হযরত (রহ.)ও আমাকে অত্যন্ত আপন জানতেন বলে স্পষ্ট অনুভব করতাম।
ছাত্র জীবন থেকেই তাঁর এই আধ্যাত্মিক প্রতিভার বিকাশ হতে হতে এক সময় তিনি শুধু বাংলাদেশ ব্যাপী নয়, বরং বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রের লাখো উলামায়ে দ্বীন এবং সাধারণ মানুষের মুর্শিদের আসনে সমাসীন হন। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় উলামা, মুফতি মুহাদ্দিস, ইমাম, খতীব ও ওয়ায়েজের মধ্যে অনেকেই তাঁর সাথে বাইয়াতের সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। সরকারী প্রশাসনিক লেভেলের অনেক আইনবিদ, মন্ত্রী, ডিসি, এসপি, এমপি, বিচারক এবং রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন পেশার গণমান্য ব্যক্তিবর্গ হযরতের হাতে বায়আত গ্রহণ করেছেন। যার ফলে দেশের সকল স্তরে হযরতের বিপুল সংখ্যক ভক্ত ও মুরিদ বিদ্যমান ছিল। এতে করে সমাজের নানান স্তরে দ্বীনি শিক্ষার প্রতি আগ্রহ তৈরি ও দাওয়াতী কাজের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
হযরত আল্লামা শাহ জমিরুদ্দীন (রহ.) ছিলেন অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের মানুষ। তাঁর চরিত্র এবং ব্যবহারে সকলেই মুগ্ধ হতেন। তিনি ছোট বেলা থেকেই অনুপম আদশের্র অধিকারী ছিলেন। উল্লেখ্য যে, তিনি বাল্যকাল থেকেই কখনো চায়ের দোকানে বসে চা খেতেন না। এমনকি যে জায়গায় মানুষ লাগামহীন কথাবার্তা বলে, গীবত শেকায়াত, গালমন্দ ইত্যাদিতে লিপ্ত হয়, সেই জায়গা থেকে তিনি দূরে থাকতেন। তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, বিচক্ষণতা এবং উঁচুস্তরের আমলের কারণে যে কোন মানুষই তাঁর সামনে এসে সাথে সাথে মোমের মত গলে যেত। অনেক বিদআতী পথভ্রষ্ট লোকেরা তাঁর সুমধুর বয়ানের মাধ্যমে হিদায়াতের সন্ধান পান। অনেক বিধর্মী তাঁর বয়ানে ইসলামের অমীয় সুধা পান করেন।
তাঁর প্রতিটি মুরীদ ও শাগরিদকে অত্যন্ত বিনয়বিগলিত আবেগময় ভাষায় তিনি নসীহত করে বলতেন- প্রত্যেক নামায ওয়াক্তমত জামাতে আদায় করবেন। চলা-ফেরা, উঠা-বসা সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্মরণ করবেন। জীবনের সর্বক্ষেত্রে সুন্নাত মত আমল করে চলবেন। গুনাহ থেকে বেঁচে চলবেন। পরিবারের মধ্যে পর্দার ব্যবস্থা করবেন। গান-বাদ্য ও অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকবেন। মহিলাগণ স্বামী, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী এবং সন্তানদের খিদমত আন্তরিকতার সাথে আদায় করবেন। চলাফেরার সময় বেশি বেশি যিকির ও দরূদ শরীফ পড়বেন। দৈনিক নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করবেন। বেশি বেশি নফল ইবাদত, তাহাজ্জুদ ও দান-সদকা করবেন। আলেমদের সম্মান করবেন। দ্বীনি মাদ্রাসাসমূহের সহযোগিতা করবেন। হালাল উপার্জন ও হালাল পথে চলবেন। হিংসা, হানাহানি ও গীবত-শেকায়েত থেকে দূরে থাকবেন ইত্যাদি।
হযরত আল্লামা শাহ জমিরুদ্দীন (রহ.) ছিলেন একবিংশ শতাব্দীর একজন মুসলিম সাধক, পীরে কামেল ও দায়ী ইলাল্লাহ। দ্বীনি শিক্ষার বিস্তার ও দাওয়াতি লাইনে তাঁর সফলতা ছিল আকাশ ছোঁয়া। তিনি দ্বীনি শিক্ষা ও তাযকিয়ায়ে নফসের ময়দানে আমাদের সকলের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। গাফেল ও দিকভ্রান্তদের অন্তরে মায়া-মমতা ও হৃদয়ের আকুতি দিয়ে দ্বীনিচেতনাবোধ জাগিয়ে তোলায় তিনি আজীবন সাধনা করে গেছেন। মুসলিম উম্মাহর দরদী রাহবার আল্লামা শাহ জমিরুদ্দীন নানুপুরী (রহ.) দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েও উম্মাহর মানসপটে ও ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবেন চিরকাল। তিনি পরপারে পাড়ি দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর আদর্শ, মূল্যবান পথনির্দেশিকা ও দ্বীনের জন্য অতুলনীয় আত্মত্যাগ দেশের লাখ লাখ আলেম ও দায়ীদের জন্য প্রেরণার খোরাক হিসেবে কাজ করবে যুগ যুগ ধরে।
সত্যিকার অর্থে যারা নিজেদের সবকিছু বিলীন করে দ্বীনের পথে কাজ করে যান, তাঁরা কখনও দুনিয়া থেকে বিস্মৃত হন না, বিলীন হয়ে যান না। যেভাবে শায়খুল হিন্দ (রহ.), গাঙ্গুহী (রহ.), মাওলানা ইলিয়াস (রহ.), শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ.), আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) বিস্মৃত হননি। শুধুমাত্র তাঁদের দেহটা আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু আদর্শ ও কর্মে আমাদের মাঝে এখনও তাঁরা বেঁচে আছেন। ঠিক সেভাবেই আল্লামা শাহ জমিরুদ্দীন নানুপুরী (রহ.)ও আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন তাঁর উত্তমাদর্শ ও বহুবিদ দ্বীনি খেদমতের ধারাবাহিকতায়। তাঁর হৃদয় ছোঁয়া স্মৃতি ও প্রভাব বাংলাদেশের মাদারেসে কওমিয়্যা এবং তাযকিয়ায়ে নফস ও সুলুকের ময়দানে দীর্ঘকাল বহাল থাকবে। বাংলাদেশে দ্বীনি শিক্ষার বিকাশ ও পথহারা উম্মাহর দরদী রাহবার হিসেবে চিরকাল তিনি ইতিহাসের পাতায় ও সকলের মানসপটে বেঁচে থাকবেন। এই দেশের মানুষ এবং আমরা তাঁকে কখনই ভুলবো না।
দোয়া করি, দয়াময় আল্লাহ রব্বুল আলামীন হযরতকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করুন। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমাদেরকে দ্বীনের বহুমুখী খিদমত আঞ্জাম দানের তাওফীক দান করুন। আমিন।
Post Views: 188