আজ ৯ জানুয়ারী রবিবার সকাল ১১টায় আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) এর বসন্তকালীন সেমিস্টার ২০২২ এর ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি বলেন, বিশাল অবকাঠামোসহ নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত আইআইইউসি অন্য যেকোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথক বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। নতুন করে সাজানো গেলে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা সময়ের ব্যাপার।
ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, সবকিছুর উর্ধে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে। এটাও একটা ইবাদত। সবসময় দেশ ও জাতির জন্য ভালো কিছু করার মানসিকতা পোষণ করতে হবে। দেশ কি দেবে সেই প্রশ্ন না করে তুমি দেশকে কি দেবে সেটাই সবসময় মনে রাখতে হবে।
এ সময় তিনি বলেন,নতুন প্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হলে দেশের স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে। এতো রক্তের বন্যা ও মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময় স্বাধীনতা অর্জন বিশ্বে বিরল।
তিনি আরোও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর সুপরিকল্পিতভাবে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছিল। পূর্বের সিলেবাস পড়ে কেহই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারেনি। স্বাধীনতা বিরোধী চক্র বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে, ইতিহাস বিকৃতি করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে ভুল বুঝিয়ে বিপথগামী করেছে বছরের পর বছর।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্বলিত ইতিহাস সন্নিবেশ করার পর আজকের প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ পাচ্ছে এবং ফলশ্রুতিতে দেশপ্রিমক প্রজন্ম সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন,স্বাধীনতা বিরোধিরা কখনো স্বাধীন বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি। পঁচাত্তরের পর ভেবেছিল দেশ হয়তো আবার পাকিস্তানে ফিরে যাবে। অনেকে বলেছিলেন, স্বাধীন হলেও বাংলাদেশ বেশিদিন ঠিকবেনা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে তাদের সেই কথা আজ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু একেবারে শূণ্য থেকেই শুরু করেছিলেন।
বিগত ১৩ বৎসরে যে উন্নয়ন হয়েছে স্বাধীনতার পর বিগত সময়ে অতো উন্নয়ন হয়। শত ষড়যন্ত্রের মাঝেও বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারা ও চেতনায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ দৃশ্যমান। সকল সূচকে বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় সাফল্য বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে দেখছে। ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে, রিজার্ভ বেড়েছে। তিনি কোনপ্রকার অপপ্রচারে কান না দেওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংদেশের অগ্রগতি কেউ রোধ করতে পারবেনা ইনশাআল্লাহ।
মাননীয় ভূমিমন্ত্রী ইসলামকে একটি সার্বজনীন অত্যন্ত সহনশীল ধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কখনো ইসলাম বিরোধি ছিলনা, বরাবরই ইসলামের পক্ষেই ছিল। ধর্মকে ব্যবহার করে অপরাজনীতি বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ওআইসি’র উদ্যোক্তাদের অন্যতম ছিলেন। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন মসজিদুল আকসা আবার মুসলমানদের কাছে ফিরে আসবে। সেইদিন বেশি দূরে নয় বলে মাননীয় মন্ত্রী দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আইআইইউসি’র ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফের সভাপতিত্বে আইআইইউসি অডিটোরিয়ামে ওরিয়েন্টেশনের উদ্বোধন করেন আইআইইউসি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি) এর চেয়ারম্যান, মাননীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। বক্তব্য রাখেন আইআইইউসি’র বিওটি সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. মাছরুরুল মাওলা, আইআইইউসি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ড. ইঞ্জিনিয়ার রশীদ আহমদ চৌধুরী, মিসেস রিজিয়া সুলতানা চৌধুরী, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিওটি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ড. কাজী দ্বীন মুহাম্মদ, বিওটি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. শাহাদাত হোসাইন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইআইইউসি’র রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ শফীউর রহমান।
উদ্বোধকের বক্তব্যে আইআইইউসি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি) এর চেয়ারম্যান, মাননীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ছিলাম। আরবী ভাষা ইনস্টিটিউট দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা। তাঁর প্রচেষ্টায় বিদেশী অর্থায়নে আইআইইউসি’র অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০০৮ সালের পর থেকে আইআইইউসি’র অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাজমান বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বিগত বছরগুলোতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সরকারের একটা দূরত্ব ছিল। এখন নবগঠিত একটি হাই প্রোফাইল ট্রাস্টি বোর্ড মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক আইআইইউসি’র সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। নতুন নতুন বিভাগ খোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
শিক্ষার গুণগত মানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নব্বই শতাংশ শিক্ষক বিদেশি ডিগ্রিধারী। মহামান্য রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ বৎসর পূর্তি ও কনভোকেশন আয়োজনের কথা উল্লেখ করে তিনি উক্ত অনুষ্ঠানে শতাধিক বিদেশী অতিথি অংশগ্রহণের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভাপতির বক্তব্যে মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলেন, গুণগত দিক আইআইইউসি নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক মানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্ররা বিশেষ গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত মর্মে যে ধারণা বাজারে প্রচলিত রয়েছে তাকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইআইইউসি’তে সম্পূর্ণ মুক্ত পরিবেশে অত্যন্ত মান সম্মত শিক্ষার পরিবেশ বিরাজমান।
তিনি বলেন,আইআইইউসি’র শিক্ষার্থীদের মাঝে বঙ্গবন্ধু এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার লক্ষ্যে মুজিব কর্ণার স্থাপন এবং ‘বঙ্গবন্ধু রিসার্চ সেন্টার ফর ইসলাম এন্ড ইন্টাররিলিজিয়াস ডায়ালগ’ মতো গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ও বিভিন্ন জাতীয় দিবস বর্ণাঢ্যভাবে পালিত হচ্ছে।