ঠাকুরগাঁও পৌরসভার কলেজপাড়া এলাকার নারীদের স্বাবলম্বী করে তোলার উদ্দেশ্যে ২০২০ সালে ‘অনলাইন উদ্যোক্তা পরিবার’ নামে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যাত্রা শুরু করে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কুশন, পাটজাত পণ্য, শো-পিচ, গায়ে হলুদের গয়না ইত্যাদি বিক্রি করে ঠাকুরগাঁওয়ের শতাধিক নারী স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। বর্তমানে এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫৫ হাজার; যারা এখান থেকে নিয়মিত কেনাকাটা করে থাকেন।
গ্রামাঞ্চলের নারীদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে এই ফেসবুক গ্রুপটি তৈরি করেছেন সানজিদা শারমিন সেতু। একই সঙ্গে তিনি নারীদের এসব পণ্য বানানো শেখাচ্ছেন; কাজের বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে তাঁদের কাজ করতে সহযোগিতা করছেন এবং সেই পণ্যগুলোও বাজারজাতকরণেও সহযোগিতার চেষ্টা করছেন।
সেতু সাধারণ নারীদের কথা ভেবে একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে প্রথমে ২০ জনকে নিয়ে স্বল্প পরিসরে কাজ শুরু করেন। এ পর্যন্ত শতাধিক নারী এখানে কাজ শিখেছেন। ৪০ জনকে নিয়ে এই ছোট ঘরে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় মেশিন ও তৈজসপত্রের স্বল্পতা থাকার পরও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
সেতু বলেন, স্বপ্ন অনেক বড় কিন্তু মেশিনের স্বল্পতা, জায়গার স্বল্পতার কারণে অনেক বেশি নারীদের নিয়ে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। উৎপাদিত পণ্যগুলো কেনার মতো অনেক মানুষ আছে, বাজারে চাহিদাটাও কম নয় কিন্তু সে তুলনায় পণ্য উৎপাদনের জায়গা ও অর্থের জোগান দেওয়া সাধ্যের বাইরে।
নারী উদ্যোক্তা সেতু জানান, নারীদের কথা ভেবে শুরু থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আসছি। অনলাইনভিত্তিক এই ফেসবুক গ্রুপে ৫০ জনেরও বেশি নারী উদ্যোক্তা কাজ করছেন। ঠাকুরগাঁও অনলাইন উদ্যোক্তা পরিবারের আওতাধীন নিড প্রশিক্ষণ প্রকল্পে নারীরা হস্তশিল্প ও অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। সেখানে গ্রুপের উদ্যোক্তারা প্রশিক্ষক হিসেবে নারীদের প্রশিক্ষণ দেন। ১০ জন নারী কুশনসহ অন্যান্য জিনিসপত্র তৈরি করে এখন স্বাবলম্বী। তাঁরা দৈনিক তিন থেকে চার ঘণ্টা কাজ করেন।
আক্ষেপ করে সেতু বলেন, আমি এখন পর্যন্ত কারও কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পাইনি। আমি আশা করব আমার এই প্রতিষ্ঠানটিকে ঠাকুরগাঁওসহ দেশের একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে কেউ যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে ঠাকুরগাঁওয়ের নারীরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে। একই সঙ্গে আমরা সবাইকে দেখিয়ে দিতে পারব যে আমরা নারীরা অনেক কিছু করতে পেরেছি।
এ বিষয়ে জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম অফিসার নিরঞ্জন কুমার বলেন, আমরা জেনেছি সানজিদা শারমিন সেতু নামে একজন অনলাইন নারী উদ্যোক্তা সুন্দর সুন্দর কুশন, শো পিচ সহ বিভিন্ন পাটজাত পণ্য তৈরি করছেন। তাঁর পণ্যগুলো খুবই সুন্দর। তাঁর পণ্যগুলোর ভালো চাহিদা রয়েছে। তিনি অনলাইনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পণ্যগুলো বিক্রয় করে থাকেন। আমরা সরকারিভাবে তাঁকে সহযোগিতার চেষ্টা করব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান জানান, ঠাকুরগাঁও অনলাইন উদ্যোক্তা পরিবার একটি নতুন মার্কেটপ্লেস হিসেবে গড়ে উঠেছে এবং বেশ কিছু নারী উদ্যোক্তা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য অনলাইনে বিক্রি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এতে বেশ কিছু নারী উদ্যোক্তাও গড়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে নারীরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। এই অনলাইন মার্কেটপ্লেসটিকে আরও উন্নত করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। এর মাধ্যমে নারীরা আর্থ সামাজিক উন্নয়নের এবং নারী ক্ষমতায়নের ভূমিকা রাখবে এমনটি আশ্বাস দেন তিনি।