সিলেটের ওসমানীনগরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। মাত্র ১৮শ ৭৯ জন ভোটারের জন্য দুটি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করে নারী পুরুষদের পৃথক স্থানে ভোট গ্রহনের ব্যবস্থা করায় দ্বন্ধ ও জটিলতা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। এতো কম সংখ্যক ভোটারের জন্য সরকারের দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করে দুইটি ভোট কেন্দ্র স্থাপনের ফলে স্থানীয়ভাবে জটিলতা বৃদ্দির পাশাপাশি নারী ভোটারদের বিরম্ভনা ছাড়াও নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রভাব বিস্তার হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজননৈতিক বিজ্ঞজনরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,উপজেলার আলমপুর,খাতুপুর ও বড় ধিরারই গ্রাম নিয়ে ঘঠিত দয়ামীর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড। যার ভোটার সংখ্যা মোট ১৮শ ৭৯জন। এখানে সরকারী বা বেসরকারী কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকায় দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত কেন্দ্র হিসাবে উত্তর বড় ধীরারাই গ্রামের মজম্মিল আলীর বসত বাড়ির বাংলোতে ওয়ার্ডের অর্ন্তভুক্ত বাসিন্দাদের ভোট গ্রহন করা হচ্ছে।
এতে করে সাধারণ ভোটারদের মনে সংকুচ দেখা দিল স্থানীয় ওয়ার্ডবাসীর আবেদনের প্রক্ষিতে নির্বাচন কমিশন আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দক্ষিন বড় ধিরারাই বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্র স্থাপনের তালিকা প্রকাশ করেন। সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত ২১ ডিসেম্বর স্থানীয় নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র তালিকায় দক্ষিণ বড় ধিরারাই বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থান পায়। পরবর্তীতে ২৮ ডিসেম্বর আরেকটি ভোট কেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করেন সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। সেখানে বড় দক্ষিণ ধিরারাই বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুরুষ ভোটার ও উত্তর বড় ধিরারাই বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মহিলা ভোটার ভোট দিবেন বলে প্রকাশিত তালিকায় উল্লেখ।
বিষয়টি জানাজানির পর স্থানীয়রাসহ নির্বাচনে অংশ গ্রহনকারী প্রার্থীদের মনে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এনিয়ে ইউনিয়ন বা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের নির্বাচনে অংশ গ্রহনকারীরা প্রকাশ্যে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলেও প্রভাব বিস্তারের আশংঙ্কায় তাদের মনেও ক্ষোভের দানা বেঁধেছে। একই ওয়ার্ডে মাত্র ১৮শ ৭৯ জন ভোটারের জন্য দুই ভোট কেন্দ্র এবং পুরুষ মহিলা আলাদা ভোট কেন্দ্রে স্থাপনের ফলে নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কার্যক্রম নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মনে নানা আলোচনা সমালোচনার দেখা দিয়েছে। একই পরিবারের মহিলা এক কেন্দ্রে আর পুরুষ ভোটাররা যাবেন আরেক কেন্দ্রে যা এর আগে শুনেননি বলে অনেক প্রবীনরা মন্তব্য করেছেন। এতে মহিলা ভোটারের কম উপস্থিতিসহ ভোটকেন্দ্র না যাওয়ার আশংখা করছেন তারা।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয়দের আবেদনের প্রক্ষিতে মজম্মিল আলীর বসত বাড়ির ডাক বাংলো থেকে ভোট কেন্দ্র সরিয়ে দক্ষিন ধিরারাই বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্র স্থাপন করেন নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টরা। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে মজম্মিল আলীসহ স্থানীয়রা তৎকালিন সিলেট জেলা প্রশাসকের স্বরণাপূর্ন হলে জেলা প্রশাসকের নির্দেশক্রমে আবারও দক্ষিন বড়ধিরারাই বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিবর্তন করে ভোটা কেন্দ্র হিসাবে মজম্মিল আলীর বসত বাড়ির বাংলোয় ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। ৬ষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে তফশিল ঘোষনার পূর্বে মজম্মিল আলীর বসত বাড়ির বাংলো থেকে ভোট কেন্দ্র সড়িয়ে দক্ষিন বড় ধিরারাই বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে কেন্দ্র ঘোষনার সাত দিনের মধ্যেই একই ওয়ার্ডে নারী-পুরুষদের জন্য আলাদা আলাদা ভোট কেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করেছেন সিলেটের সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার।
অপর সূত্র জানায়, আসন্ন ইউনিয়ন নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে সাধারন সদস্য পদে ৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এর মধ্যে দুই জন সদস্য প্রার্থীর এলাকায় পড়েছে মহিলা ভোট কেন্দ্র অপর এক প্রার্থীর এলাকায় পড়েছে পুরুষ ভোট কেন্দ্র। এতে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের কর্তৃক কেন্দ্রগুলোতে প্রভাব বিস্তারের আশংঙ্খাসহ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টির কথা জানিয়েছেন স্থানীয় অনেকে।
ওয়ার্ডের বাসিন্দা রিতা রানী নাথ,রাজনা বেগমসহ একাধিক সাধারণ মহিলা ভোটাররা জানান, আমাদের ওয়ার্ডের অন্যান্য এলাকা থেকে ভোটার সংখ্যা কম থাকা সত্বেও কার স্বার্থে দুটি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করেছেন নির্বাচন অফিসার তা আমরা জানি না। দক্ষিন ধিরারাই বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্র থাকার পরও এখানে নারীরা ভোট দিতে পারবেন না। নারী ভোটারদের জন্য ওয়ার্ডের উত্তর পাশে^ আলাদা ভোট কেন্দ্র রাখা হয়েছে। সাধারণত নারীরা পরিবারের পুরুষদের সাথেই ভোট দিতে যান। এবার আলাদা হওয়ায় অনেকেই ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বিরত থাকার আশংঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মুমিন ও গোলাম হোসনের বলেন,দক্ষিন বড় ধিরারাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্র ঘোষনা পর ওয়ার্ডবাসীর দীর্ঘ দিনের কাংঙ্খিত আশা পূর্ন হলেও একটি প্রভাবশালী মহলের প্ররোচনায় তালিকা প্রকাশের ৭ দিনের মাধ্যে জেলা নির্বাচন অফিসার কতৃক দুটি ভোট কেন্দ্র স্থাপনে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে মহিলা ভোটাররা বিরম্বনায় পরবেন।
ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি শানুর মিয়া বলেন,প্রথমে শিক্ষা প্রতিষ্টান না থাকায় মজম্মিল আলীর বাংলোতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ভোট গ্রহন হত। দক্ষিন বড় ধিরারাইয়ের মধ্যবর্তি স্থানে হওয়ায় স্থানীয়দের আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাচন অফিস বার বার দক্ষিন বড় ধিরারাই বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্র ঘোষনা দিলেও পরবর্তীতে অদৃশ্য কারণে এই কেন্দ্রে ভোট হয়নি।গত ২১ ডিসেম্বর ৩ নং ওর্য়াডের ভোট কেন্দ্র হিসাবে এই বিদ্যালয়ে নামসহ তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন অফিস। পরবর্তীতে আবারও নির্বাচন কমিশনের তালিকায় নারী পুরুষদের আলাদা কেন্দ্র নির্ধারন করা হয়। এতো কম সংখ্যক ভোটারের জন্য দুটি কেন্দ্র স্থাপন হলে সরকারের দ্বিগুন অর্থ ব্যয় হবে। এলাকার শান্তি শৃঙ্খলার স্বার্থে নির্বাচন অফিসের ২১ তারিখের কেন্দ্রের তালিকা অনুযায়ী দক্ষিন বড় ধিরারাই বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্র বহাল রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি করছি।
পূর্বের ভোট কেন্দ্রের বাড়ির মালিক মজম্মিল আলী বলেন,এই ওয়ার্ডে কোন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্টান না থাকায় বিগত ২৫ বছর ধরে আমার বাংলোতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মানবিক দিক বিবেচনায় রেখে সমাজ সেবার অংশ হিসাবে ভোট কেন্দ্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগীতা করে আসছি। কিন্তু এবার নির্বাচন অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আমার সাথে কোন আলেচনার প্রয়োজন মনে না করেই অল্প সংখ্যক ভোট গ্রহনে দুটি ভোট কেন্দ্র ঘোষনা করায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন চাইলে পূর্বের ন্যায় আমার বাংলোতে ভোট গ্রহনের ব্যবস্থা করলে আমার কোনো অসুবিধা নেই। আমিসহ স্থানীয়দের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম মাইন উদ্দিন বলেন,একই ওয়ার্ডে দুটি ভোট কেন্দ্র স্থাপনকে ঘিরে জটিলতার খবর পেয় সরজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সাথে আলোচনা করে সবাইকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার কথা বলেছি। বিশৃঙ্খলা এড়াতে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোড়দারসহ সব রখমের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু লায়েশ দুলাল বলেন, মজম্মিল আলী সাহেব উনার বাড়িতে ভোট গ্রহনের কেন্দ্র হিসাবে অনিহা প্রকাশ করায় প্রাথমিক ভাবে যাচাই বাছাই করে দক্ষিন বড় ধিরারাই প্রাথমিক বিদ্যালকে ভোট কেন্দ্র হিসাবে ঘোষনা করে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে স্থানীয় জটিলতা দেখা দিলে, তা নিরসনে সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার স্যার সড়জমিন পরিদর্শন করেছেন। এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায়ে ওই ওয়ার্ডে দুটি কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে মহিলা পুরুষের পৃথক ভোট গ্রহনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সিলেটের সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ শুকুর আহমদ মিয়া বলেন,দয়ামীর ইউনিয়ন ৩ নং ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা অনুযায়ী একটি ভোট কেন্দ্রের মাধ্যমে ভোট গ্রহন হলে ভালো হতো। স্থানীয়দের মধ্যে জটিলতা দেখা দেয়ায় সড়েজমিনে গিয়ে উভয় পক্ষের বক্তব্য গ্রহনসহ সার্বিক বিষয়ের ওপর শুনানি গ্রহনের পর শান্তিপূর্ন ভাবে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠান সম্পন্নের লক্ষ্যে নারী-পুরুষদের পৃথক ভোট গ্রহনের ব্যবস্থা করে দুটি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। বিষয়টি উভয় পক্ষ মেনেও নিয়েছেন, এখানে বিশৃঙ্খলা হওয়ার কথা নয়। সুষ্ট ভাবে ভোট গ্রহনের লক্ষ্যে সবাইকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতার আহব্বান জানান।