ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ থামাতে পুলিশের ছোড়া গুলিতে নিহত হামিদুল ইসলাম(৬৩) বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। স্বজনরা দাবি করছেন, হামিদুল কোনো প্রার্থীর সমর্থক ছিলেন না, ভোটের অবস্থা দেখতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি। যদিও বিজয়ী মেম্বারের দাবি, তিনি পরাজিত প্রার্থীর সমর্থক ছিলেন।
রোববার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ আসাননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান হামিদুল। সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) মাগরিবের নামাজের পর দক্ষিণ আসাননগর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোশারুল ইসলাম সরকার বিষয়টি মুঠোফোনে নিশ্চিত করেছেন।সোমবার দুপুরে নিহত শহিদুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার শোকে হতবিহ্বল পরিবারের সদস্যরা। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে বাড়ির পরিবেশ।
এলাকাবাসী ও স্বজনদের দাবি,হামিদুল খুবই সহজ সরল মানুষ ছিলেন। তিনি কোনো দল ও প্রার্থীর সমর্থক ছিলেন না। তিনি দেখার জন্য কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। কিন্তু জানতেন না যে, তাকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মরতে হবে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন এলাকাবাসী ও স্বজনরা।
হামিদুলের স্ত্রী হাসিনা বলেন,সন্ধ্যার আগে আমার স্বামী বাড়ির পাশে বাজার করতে যান। তখন তিনি বাজারের কাছেই ভোট কেন্দ্রে দেখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন।
হামিদুলের মেয়ে হামিদা বলেন,ভোটের অবস্থা দেখতে গিয়ে আমার বাবাকে মরতে হলো। আমার বাবাকে কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবেন? এখন আমার অসুস্থ মায়ের কী হবে? আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই।
এ বিষয়ে রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) চিত্ত রঞ্জন রায় আমারজমিনকে বলেন, রোববার ভোট গণনার পরে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণা করলে ফুটবল প্রতীকের মেম্বার প্রার্থী পরাজিত হন। তখন ফুটবল প্রতীকের সমর্থকরা ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ওপর হামলা করেন।
পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে কেন্দ্র ফাঁকা করে। ওসি আরও বলেন,পরে ভোটের মালামাল নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় গাড়িতে ফুটবল প্রতীকের সমর্থকরা আবারও হামলা করে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পুলিশকে আহত করেন। সে সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে আবারও গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার সময় তার মৃত্যু হয়।
রুহিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ চিত্ত রঞ্জন বলেন,নিহত ব্যক্তির মরদেহ পোস্টমর্টেম করে বিকেলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
বিজয়ী ইউপি সদস্য মাসুদ রানা আমারজমিনকে বলেন,শহিদুল আমার সমর্থক ছিলেন না। তিনি ফুটবল প্রতীকের সমর্থক ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে ফুটবল প্রতীকের পরাজিত মেম্বার প্রার্থী শাহ আলমের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করেও বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি পলাতক আছেন বলে জানা গেছে।
তবে ওই ইউনিয়ন থেকে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলাম সরকার জানান হামিদুল ফুটবল মার্কারই সমর্থক ছিলেন।