রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৫ অপরাহ্ন

ঠাকুরগাঁওয়ে তিন বছরে চারটি নীলগাই মিললেও একটিও বাঁচেনি! 

রিপোটারের / ২২৯ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১

আনোয়ার হোসেন আকাশ,রাণীশংকৈল(ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁওয়ের সীমান্তবর্তী হরিপুরের মিনাপুর গ্রামে সম্প্রতি বিরল প্রজাপতির ধুসর লাল রঙের একটি নীলগাই ধরেছিল এলাকাবাসী। কিন্তু ক্ষতবিক্ষত হয়ে রক্তক্ষরনে অসুস্থ হওয়াই নীলগাইটি মারা যায়। এনিয়ে গত তিন বছরে জেলার সীমান্ত এলাকায় চারটি নীলগাই মিললেও বিভিন্ন কারণে একটিকেও বাঁচানো যায়নি।
আট দশক আগেই বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে প্রাণীটিকে। তবে আবার ফেরার আভাস দিচ্ছে সে। গত তিন বছরে ঠাকুরগাঁওয়ের তিন উপজেলায়  বিরল প্রজাতির চারটি নীলগাই দেখা গেছে। এর মধ্যে অবশ্য চারটিরই মৃত্যু হয়েছে। প্রাণীগুলো প্রতিবেশী ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় মুক্তার বস্তি থেকে একটি মৃত নীলগাই উদ্ধার করেছিলো উপজেলা প্রশাসন। ২ জুলাই ২০২১ তারিখে দুপুরে একটি নীলগাই দেখে স্থানীয়রা ধরার চেষ্টা করলে ছুটোছুটি করতে থাকে। এক সময় একটি বাড়িতে ডুকে জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে পড়ে গিয়েই মারা যায় প্রাণীটি।
উপজেলার ধর্মগড় সীমান্ত এলাকায় কাটাতার পেরিয়ে নীলগাই ভারত থেকে বাংলাাদেশে প্রবেশ করে। নীলগাইটি কয়েক দিন ধরেই ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিল। ওইদিন শুক্রবার দুপুরবেলা মুক্তারবস্তির আশপাশেই ছিল। স্থানীয়রা দেখে ধরার চেষ্টা করলে নীলগাইটি ছোটাছুটি করতে থাকে। একসময় গ্রামের হামিদুর নামে এক ব্যক্তির নির্মাণাধীন ঘরের জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে ভেতরে পড়ে গিয়েই নীলগাইটি অচেতন হয়ে পড়ে। স্থানীয় পশু চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও সেটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। এটি পুরুষ প্রজাতির নীলগাই ছিল।।
এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারিতে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার নাগর নদীর তীরে একটি কালো রঙের পুরুষ নীলগাই উদ্ধার করে বিজিবি। ফসলের খেতে ছোটাছুটি করতে দেখে গ্রামবাসী অপরিচিত প্রাণীটিকে ধরে ফেলে এবং মাংস খাওয়ার জন্য জবাই করার সময় আহত অবস্থায় প্রাণীটিকে উদ্ধার করে কান্তিভিটা ক্যাম্পে নিয়ে যায়।  উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন গিয়ে সেটির চিকিৎসা দেয়।।পরে বন বিভাগ ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ প্রাণীটিকে দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানে নেয়। পরে সেখানে সেই নীলগাইটিও মারা যায়।
এরও আগে ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রানীশংকৈল উপজেলার যদুয়ার গ্রামের পাশ থেকে একটি নীলগাই উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তে বয়ে যাওয়া কুলিক নদীর ধারে নীলগাইটি দেখতে পান স্থানীয় জেলেরা। পরে গ্রামবাসী সেটিকে আটক করে। খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় নীলগাইটিকে উদ্ধার করে দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানে নিয়ে যায়। সেখানে চার দিন থাকার পর একটি মৃত বাচ্চা প্রসব করে প্রাণীটি। ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ উদ্যানের বেড়ার সঙ্গে সজোরে ধাক্কা লেগে স্ত্রী নীলগাইটি মারা যায়।
রাণীশংকৈল উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মদন কুমার রায় বলেন, ‘নীলগাই হরিণের মতো নিরীহ। আমাদের দেশে জনসাধারণের জন্য প্রাণীটি লালনপালনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় এর প্রজনন ও বংশবিস্তারের উদ্যোগ নেয়নি প্রাণিসম্পদ বিভাগ।’
ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাজেদ জাহাঙ্গীর বলেন, নীলগাই একটি তৃণভোজী প্রাণী। প্রাণীটি খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে ঢুকে পড়তে শুরু করেছে। এদিকে ফসল রক্ষার্থে সম্প্রতি ভারতের অধিকাংশ এলাকায় নীলগাই হত্যা ও শিকার করা হচ্ছে। যার কারণে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এগুলো বাংলাদেশে চলে আসছে। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের দেশ থেকে নীলগাই বিলুপ্ত, তাই এটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর