অগ্রাহায়নে ধান কাটার ধুম পড়েছে। আর এই ধান শুকানো হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের সড়ক-মহাসড়কে। এতে দূর্ঘটনাও বাড়ছে। চলতি বছর রাণীশংকৈল মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
দেখা গেছে নেকমরদ -রাণীশংকৈল ও বালিয়াডাঙ্গী-রাণীশংকৈল সড়ক দখল করে ধান শুকাচ্ছে স্থাণীয়রা।
রাণীশংকৈল-নেকমরদ সড়কে চলাচলের সময় ট্রাক চালক মো.রাজু অভিযোগ করে বলেন,সড়কটি এখন ধানের চাতাল। এতে আমাদের গাড়ি নিয়ে চলাচল করতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। একই অভিযোগ করে বলেন অটো চালক মামুনের। পথচারি আশরাফুল ইসলাম জানান,ধান ও ভুট্টা রাস্তায় শুকানোর ফলে দূর্ঘটনা ঘটছে।
উপজেলার সড়ক ও মহাসড়ক যেন এখন মৃত্যুফাঁদ। চাতালের অপ্রতুলতা থাকায় বিভিন্ন ফসলের মৌসুমে অভ্যন্তরীণ সড়ক-মহাসড়কে চলে ধান মাড়াই আর শুকানোর কাজ।
ফলে এখানকার সড়কগুলো পরিণত হয় ধান শুকানোর চাতালে। এছাড়া খড় শুকানোর জন্যও ব্যবহৃত হয় সড়কগুলো। এ কারণে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে।
রাণীশংকৈল উপজেলার দুটি মহাসড়কে সেদ্ধ আমন ধান শুকাচ্ছেন আশপাশের বাসিন্দারা। দেখে মনে হচ্ছে মহাসড়ক দুটি যেন ধান শুকানোর চাতাল।
গতকাল শনিবার রাণীশংকৈল – নেকমরদ মহাসড়কে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৫০ জনের বেশি কৃষান-কৃষানি ধান শুকাচ্ছেন। আর এ ধান শুকানোর কাজে সহযোগিতা করছেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। একই চিত্র দেখা গেছে রাণীশংকৈল – বালিয়াডাঙ্গী মহাসড়কেও।
লালমনিরহাট থেকে আসা ট্রাকচালক মইনুল ইসলাম মীরডাঙ্গী বাজারে বলেন, মহাসড়কে ধান শুকানোর কারণে খুব সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। একটু অমনোযোগী হলেই দুর্ঘটনা ঘটবে। তা ছাড়া ধান শুকানোর কারণে পুরো পরিবার চলে এসেছে রাস্তার ওপর।
ঘনেশ্যামপুর গ্রামের ইজিবাইকচালক আহসান আলী জানান, সূর্য ওঠার আগেই রাস্তা ফাঁকা থাকে। সূর্য উঠলে রাস্তায় ধান শুকানোর কাজে লোকজনের কারণে বড় গাড়িগুলোর সাইড দিতে খুব ঝামেলায় পড়তে হয়। অনেক সময় গাড়ি থামানোর প্রয়োজন পড়ে।
ভবানন্দপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ রাণীশংকৈল-নেকমরদ মহাসড়কে ধান শুকাচ্ছিলেন। তিনি জানান, আগে ধান শুকানোর জন্য বাড়ির উঠানে চাতাল তৈরি করতাম। মহাসড়ক বাড়ির পাশে হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে এখানে ধান শুকিয়ে নিচ্ছি। তা ছাড়া আবাদি জমিতে ধানের চাতাল তৈরি করলে পরের ফসল উৎপাদনে দেরি হয়ে যায়।
স্বাধীন সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ রায়হান দুলু বলেন, ‘মহাসড়কে ধান শুকানো বন্ধের জন্য আমরা ২০১৮, ১৯ ও ২০ সালে চৌরাস্তায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং এমনকি জরিমানাও করা হয়েছে। তবুও মানুষ সচেতন হচ্ছে না।’
রাণীশংকৈল নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ বলেন, ‘সভা-সেমিনারে সড়ক দুর্ঘটনারোধে সাধারণ মানুষের নানাভাবে সতর্ক করা হচ্ছে। রাস্তায় ধান কাটা-মাড়াই ও শুকানো বন্ধের জন্য নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ধান শুকানো বন্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে নিষেধ করা হবে।