নারী শ্রমিকেরা অনেক পরিশ্রমী এবং কম মজুরিতে তাঁদের পাওয়া যায়। এ কারণে তাঁদের কদর বাড়ছে। তাঁরা মাঠে কাজ করে দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পান। শীত সামনে রেখে জমিতে রসুন বুনছেন নারী শ্রমিকেরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাণীশংকৈল উপজেলার ভরনিয়া গ্রামে গেলে এমন দৃশ্য দেখা পাওয়া যায়।
একসময় ঘরসংসার সামাল দেওয়াই ছিল তাঁদের একমাত্র কাজ। উপার্জনের বিষয়টি দেখতেন বাড়ির পুরুষ কর্তা। এই একক আয়ে অভাব,অনাটন ছিল নিত্যসঙ্গী। এর সঙ্গে যুক্ত হয় নানা সামাজিক দুর্যোগ ।ফলে বাধ্য হয়ে ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে তাঁদের আসতে হয় ফসলের মাঠে। পরিচয় দাঁড়ায় নারী কৃষিশ্রমিক হিসেবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার এখন এক পরিচিত দৃশ্য নারীদের মাঠে কাজ করা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নারী শ্রমিকেরা অনেক পরিশ্রমী এবং কম মজুরিতে তাঁদের পাওয়া যায়। এ কারণে দিন দিন তাঁদের কদর বাড়ছে।
উপজেলার কাশিপুর রাতোর নন্দুয়ার নেকমরদ হোসেনগাঁও সহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে অনেকেই স্বামীর সঙ্গে তাঁরাও কৃষিশ্রমিকের পেশা বেছে নিয়েছেন। তাঁরা বিভিন্ন শস্যের বীজ বপন ও ফসল সংগ্রহসহ সব ধরনের কৃষিকাজ করেন।
বৃহস্পতিবার সকালে যাওয়া হয় ধর্মগড় ইউনিয়নের ভরনিয়া গ্রামে। সেখানে বসতবাড়ি আর গাছপালার ফাঁক দিয়ে তাকাতেই চোখে পড়ে দিগন্তজুড়ে কৃষি খেত। এসব খেতে কাজ করছিলেন নারীরা। পরিবারের অভাব কিছুটা দূর করতে তাঁরা দল বেঁধে প্রতিদিন এই কাজ করেন।
কয়েকজন নারীকে দিয়ে জমিতে রসুন আর ভুট্টা বোনার কাজ করাচ্ছিলেন মন্ডলপারা গ্রামেম কৃষক আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, এসব নারী কৃষিশ্রমিক হিসেবে পরিচিত। রোজ সকালে তাঁরা রান্নাবান্না সেরে সন্তানদের খাইয়ে দলবেঁধে কাজে বেরিয়ে পড়েন। পাঁচ থেকে ১০ জনের প্রতিটি দলে নারী শ্রমিকদের সঙ্গে দুই থেকে তিনজন পুরুষ শ্রমিক থাকেন। সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলে তাঁদের শ্রম দেওয়া।
জোতপাড়া গ্রামের ছাহেরা বেগম (৪৬) বলেন, ‘১০ বছর আগে স্বামী মারা যায়। এরপর সংসারে উপার্জন না থাকায় অভাব অনাটন নেমে আসে। তখন থেকে কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। মাঠে কাজ করে দৈনিক ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পাই। সেই টাকায় সংসার চলে।’
রাতোর গ্রামের মিনতী রানী (৪০) জানান, আটজনের পরিবার তাঁর। স্বামীর একার উপার্জন দিয়ে সংসার চলে না। মিনতীকে তাই অভাবী সংসারে একটু সচ্ছলতা আনতে এই কৃষিশ্রমিকের পেশা বেছে নিতে হয়েছে।
মরিয়ম নামে আরেক নারী বলেন, ‘যত দিন মাঠে ফসল থাকে, আমাদের কাজ তত দিন থাকে। ধান কাটা ও মাড়াই, আলু, বাদাম, পেঁয়াজ ও রসুনের বীজ বপন, নিড়ানি দেওয়া সব ধরনের কৃষি কাজ করি। স্বামীর পাশাপাশি এই কাজ করে সংসার চালাচ্ছি, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছি, এনজিও থেকে নেওয়া ঋণ শোধ করছি। কষ্ট হলেও পরিবারের জন্য কিছু করতে পারছি, এটাই আনন্দের।’
দারিদ্র্য আর ভাগ্য এই পেশায় নিয়ে এসেছে বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন অরিদ্র বালা। এই শ্রমিক বলেন, ‘আমরা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কৃষকের ফসলের কাজ করি। দলবেঁধে গল্পগুজব করে কাজ করি। রোজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্রম দিয়ে আবার রাতে রান্না করে খেয়ে ঘুমাই।’
রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, নারী কৃষিশ্রমিকেরা অনেক পরিশ্রমী। এ ছাড়া তাঁদের তুলনামূলক কম মজুরিতে পাওয়া যায়। এ কারণে কৃষকদের কাছে নারী শ্রমিকদের কদর বেশি।