ছাতক(সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের ছাতকে মেহেদী হাসান রাব্বি হত্যা মামলা দ্রুত ন্যায় বিচারে নেওয়া ও আসামীদের ফাঁসির দাবীতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্টিত হয়েছে। আজ বুধবার ০৮/ডিসেম্বর ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্ট এলাকার নগর ভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্টিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হত্যাকান্ডের শিকার মেহেদী হাসান রাব্বির হতদরিদ্র মা ও বীর মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে রুপিয়া বেগম।
লিখিত বক্তব্যে রুপিয়া বেগম বলেন, গত ২৩ জুলাই ২০১৯ ইং তারিখে একমাত্র ছেলে মেহেদী হাসান রাব্বি কে ছাতক সিমেন্ট কোম্পানির ৪ নং এলাকার বাজার সংলগ্ন প্রকাশ্যে দিবালোকে সংঘবদ্ধভাবে চুরির আঘাতে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়।
এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় তারেক হোসেন, আতিকুর রহমান, মোক্তার আলী, জাহাঙ্গীর হোসেন, তাজিম হোসাইন, অপু মিয়া, লিয়াকত আলীসহ ১৭জনকে আসামী করে ছাতক থানায় মামলা নং ২০/২০১৯ দায়ের করা হয়। আসামীরা আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন চাইলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরনের নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় কিছু আসামীরা হাইকোর্ট ও অন্যান্য আসামীরা সুনামগঞ্জ ভ্যাকেশনাল কোর্ট থেকে মুক্ত হয় জামিনে। এর পর দায়েরী মামলার প্রত্যাহারের জন্য ও মামলার স্বাক্ষীদেরকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি-ধমকি প্রদর্শন করা হয়। আসামীরা হাইকোর্টে জামিন নিতে নিতে গেলে হাইকোর্টে যাওয়ার পথে সায়েদাবাদ এলাকায় রুপিয়া বেগমের উপর অতর্কিত ভাবে হামলা করা হয়। এ ঘটনায় ৩১ আগষ্ট ২০২০ ইং তারিখে যাত্রাবাড়ী থানায় জিডি নং-২১৭৫ দায়ের করা হয়।
এখানেই আসামীরা থেমে নেই। ছাতক মেহতাজ শপিং কমপ্লেক্স এর সামনে মামলা প্রত্যাহারের জন্য আবারো রুপিয়া বেগমকে ভয়ভীতি ও হুমকি ধমকি প্রদর্শন করে আসামীরা। এতেও তিনি ২৪ জানুয়ারী ২০২১ ইং তারিখে ছাতক থানায় একটি জিডি নং-১১০০ দায়ের করা হয়। গত ২১ জানুয়ারী ২০২১ ইং মামলার ধার্য্য তারিখে সুনামগঞ্জ কোর্টে যান রুপিয়া বেগম। সেখানেও মামলা প্রত্যাহারের জন্য আসামীরা রুপিয়া বেগমকে পুনরায় ভয়ভীতি ও হুমকি-ধমকি প্রদর্শন করা হয়। এমনকি রুপিয়া বেগমকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় আসামীরা।
লিখিতি বক্তব্যে রুপিয়া বেগম আরো বলেন, আমার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুল মালিক, আমার শাশুড় বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম তোফায়েল হোসেন খাঁন। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য দপ্তরে দপ্তরে ঘুরছি। হত্যাকান্ডের ঘটনায় হুকুমদায়ী ও মামলার আসামী লিয়াকত আলী হাইকোর্ট থেকে মুক্ত ছিল জামিনে। এর পর ১৮ অক্টোবর ২০২০ ইং তারিখে হাইকোর্ট তার জামিন রিজেক্ট করেন। কিন্ত আসামী লিয়াকত আলী হাইকোর্টে একটি মিস কেইস নং-২৫২১৬/২০২০ দায়ের করেন। চলচাতুরির মাধ্যমে মিস কেইসের কথা বলে নিম্ন আদালত থেকেও জামিন নেয় লিয়াকত আলী। হাইকোর্ট মিস কেইসের শুনানী শেষে আসামী লিয়াকত আলীকে ২৯ নভেম্ভর ২০২১ ইং তারিখের মধ্যে সুনামগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রিট আদালতে আত্মসমর্পন করার নির্দেশ প্রদান করেন। ২৮ নভেম্বর ২০২১ ইং তারিখে আসামী লিয়াকত আলী সুনামগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রিট আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন চাইলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরনের নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্ত অন্য সব আসামীরা মুক্ত রয়েছেন জামিনে।
লিখিত বক্তব্যে রুপিয়া বেগম আরো বলেন, দায়েরী মামলাটি দ্রুত ন্যায় বিচারে নেওয়ার প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, আইন মন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী, আই জি পি, পুলিশ হেড কোয়াটার, ডিআইজি অব পুলিশ, সিলেট রেঞ্জ ও পুলিশ সুপার, সুনামগঞ্জ বরাবর লিখিত আবেদন করেছি।
মামলার আসামীরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। অর্থ ও পেশি শক্তি প্রয়োগে ন্যায় বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করার সকল অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এমতাবস্তায় ন্যায় বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংষ্কা দেখা দিয়েছে। একমাত্র ছেলে মেহেদী হাসান রাব্বি কে হারিয়ে অসহায় ও নি:স্ব হয়েছি। রুপিয়া বেগমের দাবী মামলাটি দ্রুত ন্যায় বিচারে নেওয়া হোক। আসামীদের জেলহাজতে প্রেরণ করা হোক। আমার মত আর কোন মায়ের কুল যেনো খালি না হয় সে জন্যই মেহেদী হাসান রাব্বি হত্যা মামলার আসামীদের ফাঁসি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশনেন্ত্রী শেখ হাসিনা, মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, মাননীয় আইন মন্ত্রী ও মাননীয় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সু-দৃষ্টি কামনা করেন রুফিয়া বেগম।