মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে মণিপুরী অধ্যুষিত এলাকগুলোতে এখন রাস উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মণ্ডপ সাজানোর কাজ শেষ পর্যায়ে। রাস উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে।
এদিন মহারাসলীলাল মূল পর্ব শুরু হবে সকাল ১১টা থেকে। মূল পর্বে গোষ্ঠলীলায় রাখাল সাজে কৃষ্ণের বালকবেলাকে উপস্থাপন করা হবে। থাকবে কৃষ্ণের সখ্য ও বাৎসল্য রসের বিবরণ। গোধূলি পর্যন্ত চলবে রাখালনৃত্য। রাত ১১টা থেকে পরিবেশিত হবে মধুর রসের নৃত্য বা শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা। রাসনৃত্য ভোর (ব্রাহ্ম মুহূর্ত) পর্যন্ত চলবে। রাসনৃত্যে গোপিনীদের সাথে কৃষ্ণের মধুরলীলার কথা, গানে ও সুরে ফুটিয়ে তুলবেন শিল্পীরা।
রাসোৎসবে মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি সব জাতি, ধর্ম, বর্ণের মানুষ একদিনের এ উৎসবে অংশ নেবে। মহারাত্রির আনন্দের পরশ পেতে আসা হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দেশি-বিদেশি পর্যটক, বরেণ্য জ্ঞানী-গুণী লোকজনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে এখানকার সুসজ্জিত মণ্ডপ প্রাঙ্গণ। মাধবপুর ও আদমপুরের মণ্ডপগুলো সাজানো হয়েছে সাদা কাগজের নকশার নিপুণ কারুকাজ ও আলোকসজ্জা।
মণিপুরী শিশু নৃত্যশিল্পীদের সুনিপুণ নৃত্যাভিনয় রাতভর মনমুগ্ধ করে রাখবে হাজারো ভক্ত ও দর্শনার্থীদের। মণিপুরী জনগোষ্ঠীর রাস উৎসবে এবার মাধবপুর জোড় মণ্ডপে ১৭৯তম রাস উৎসব পালন করবে তারা। মাধবপুরের রাসমেলার আয়োজক হচ্ছে মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘ ও মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়। উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে রাখাল নৃত্য। আর জোড় মণ্ডপে রাতজুড়ে অনুষ্ঠিত হবে রাসের মূল পর্ব মহারাসলীলা। একই সাথে কমলগঞ্জের আদমপুরে মণিপুরী মৈ তৈ সম্প্রদায় আলাদাভাবে আয়োজন করছে রাসমেলার। মৈ তৈসম্প্রদায়ের এটা ৩৯তম রাস উৎসব। মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া ও মণিপুরী মৈ তৈ আলাদা রাস উৎসবের আয়োজন করলেও উৎসবের অন্তঃস্রোত, রসের কথা, আনন্দ-প্রার্থণা একই। উৎসবের মূল বাণী হচ্ছে মানুষে মানুষে সম্প্রীতি, বিশ্বশান্তি, ও সত্যসুন্দর মানবপ্রেম।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, রাস উৎসবকে সফল করতে প্রায় মাস খানেক ধরে ছয়টি বাড়িতে রাসনৃত্য এবং রাখালনৃত্যের মহড়া দেওয়া হয়েছে। একেকটি মণ্ডপে আছেন একজন পুরোহিত। পুরোহিতের পরামর্শে প্রশিক্ষকরা ধর্মীয় বিধি বিধান মেনে ১৬ থেকে ২২ বছর বয়সী গোপী বা শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র রাধার বয়স ৫ থেকে ৬ বছর। নৃত্যের প্রতিটি দলে ন্যুনতম ১২ জন অংশ নিয়ে থাকে। একইভাবে রাখাল নৃত্যেরও প্রতিটি দলে ২০ থেকে ২২ জন ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সী বালক অংশ নিবে। আয়োজকরা জানান রাসোৎসবের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবারের রাসোৎসব অনুষ্ঠিত হবে।