নলডাঙ্গা(নাটোর)প্রতিনিধিঃ সকালে হঠাৎ করেই চোখে পরতে পারে,শিশির ভেজা শিউলিকে। আমাদের চারপাশেই সব সময় দেখা পাওয়া যায় গাছটিকে। একেক জন ডাকে একেক নামে। কেউ ডাকে শিউলি,কেউ ডাকে শেফালি। অযত্নে,অনাদরে বেড়ে ওঠা শিউলির গাছের দিকে সারা বছর কারও কোন রকম নজর না থাকলেও বছরের একটি সময় সে নিজ গুণে বাধ্য করে সবাইকে তার দিকে নজর কাড়তে।
শরৎ ও হেমন্তের ফুল শিউলি। এই সময়ে শিশির ভেজা সকালে গাছের তলায় ঝরে থাকা শিউলি মন ভালো করে দেয় নিমিষেই। ছোটো আকারের কমলা সাদার মিশ্রণে এই ফুলের মিষ্টি গন্ধে চারিদিক ম ম হয়ে ওঠে। আনন্দে নেচে ওঠে মন।
ষড়-ঋতুর আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ। ছয় ঋতুর প্রত্যেকটা ঋতুরই আছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য। এদেশে বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন রকমের ফুল ফোটে। মাঠ-ঘাট, পথ-প্রান্তর ফুলে ফুলে ভরে যায়। তার মধ্যে রঙ-রূপ-সৌন্দর্যের এক উল্লেখযোগ্য ফুল শিউলি।
শিউলি ফুল সকালের স্নিগ্ধতা আর বিকেলের বিষণ্নতা। সারাটি রাত শিউলি ফুটে সকালে ঝরে যায় শিশির ভেজা সবুজ নরম ঘাসের ওপর। ঝরা ফুলগলো যেমন তরতাজা, শিশির গুলোও তেমনি হিরার টুকরা। দেখে মনে হয় প্রেমিকার চোখের জল আর ফুলগুলো একই সঙ্গে ঝরেছে। আর এই ব্যর্থ প্রেমের একরাশ ফুল দিয়ে গাঁথা মালা নতুন প্রেমিকার খোপায় শোভা পায়। দুপুর গড়াতেই ফুলের মালা মলিন হয়ে যায়।
কবি – রানু সরকার – লিখেছেন-
“যেও না চলে”
“শিউলি”বনে নূপুর পায়
কে যেন গো হেঁটে চলে যায়-
কার “বধূ গো” আলতা পায়
শিউলি তলায়-
তাকিয়ে দেখি ওই দূরেতে
কার যেন গো তরী ঘাটে
কি জানি কার তরী খানি
যায় না যেনো চলে-এখনি-
মনোযোগ দিয়ে শিউলি মালা-গাঁথছিলো বসে-
কি জানি তার হঠাৎ করে মনে-আসে-
শুধালো-যেওনা চলে ওগো মাঝি-
ভারি সুন্দর কবরীতে-সাজিয়েছি-দেখো শিউলি ফুলে-দেখবে নাকি এসো চলে-
ইচ্ছে করে ছবি আঁকি হৃদয় মাঝে
কেউ কোন দিন পাবেনা খুঁজে-
অনেক খুঁজে পেলাম তোমায়
হৃদয়ের ঝর্ণা তলায়-
হেঁটে চলে যায় মাদলের তালে
পিছু নেয় যত হরিণের দলে-
মৃত প্রাণ যায়-হেরে ওই চোখের চাউনিতে
চোখদুটি যেন শিখী জলে ভাসে-শিশিরেতে-
চন্দ্রমা কাঁদে “শরতের” মেঘে ঢেকে গেলে,
আলতা পড়া “নূপুর” পায়ে ওগো বধূ যেওনা চলে–
শিউলি মালা সুন্দরী বৌ আমায় তুমি মাপ করে যাও, ক্ষমা চাইছি-ও মাঝি ভাই তাড়াতাড়ি নৌকা ভিড়াও-
সুন্দরী বৌ-চলে যেনো না যায়-
আমার শিরটি রাখবো তার-আলতা পড়া নূপুর পায়।”
শিউলি ফুল হচ্ছে, Nyctanthes প্রজাতির একটি ফুল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Nyctanthes arbor-tristi. এটি দক্ষিণ এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব দেশগুলোতে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও থাইল্যান্ড এলাকাজুড়ে দেখতে পাওয়া যায়। কোন কোন অঞ্চলে শিউলি ফুল শেফালি নামেও পরিচিত। শরৎ ও হেমন্তের শিশির ভেজা সকালে ঝরে থাকা শিউলি অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য তৈরি করে। দিনের আলোয় এই ফুল তার ঔজ্জ্বল্য হারায় বলে শিউলি গাছকে কখনো কখনো বিষাদ বৃক্ষও বলা হয়। এটি ১০ মিটারের মতো লম্বা হয়। প্রতিটি ভাগে একটি করে বীজ থাকে। শিউলি ফুল আমাদের অনেক উপকারে আসে। এই ফুলের বোঁটা শুকিয়ে গুঁড়া করে হালকা গরম পানিতে মেশালে চমৎকার হলুদ রং পাওয়া যায়।
Youth ending hunger Bangladesh er Rajshahi Tech education unit co-ordinator এবং বরেন্দ্র শিক্ষা সংস্কৃতি বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্র এর সাধারণ সম্পাদক জরিনা খাতুন জরি-সম্প্রতি সকালে এই ছবিগুলো তার ফেসবুকে আইডিতে পোষ্ট দেন এবং লিখেন-শিউলি ফুল সুন্দর সকাল ভালো কিছু সময়
হঠাৎ শিউলি দেখে অনেকে মন্তব্য করেন,যাদের মধ্যে মোঃ মাজহারুল ইসলাম- স্মৃতিচারণ করে লিখেন,
খুব মিস করছি শিউলিফুল।
আমার রুমে বড় একটা বেলকুনি আছে,দোতলার রুম,,,নিচ থেকে শিউলিফুলের একটা গাছ উঠে আমার বেলকুনির অর্ধেকটা ছেয়ে যায়।রাত হলেই,চেয়ার নিয়ে ফুলের মাঝেই বসে থাকতাম,ঘ্রান নিতাম।আজ ছয়মাস রাজে নেই,আমার শিউলিফুলও নেই।
শিশিরভেজা ঘাসে কমলা রঙের বোঁটায় সাদা পাঁপড়ির অজস্র ফুল পড়ে থাকার দৃশ্য লোভনীয় কিংবা শিশিরভেজা ঘাসে খালি পা মাড়িয়ে শিউলি ফুল কুড়ানোর একটা আলাদা সুখ আছে। রাতে ফুটে সকাল না হতেই ঝরে পড়ে বলে এই ফুলকে বলে “নাইট জেসমিন”।
শিক্ষক ও সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান মুক্তা বলেন, এক সময় গ্রাম-গঞ্জে অনেক শিউলি ফুলের গাছ দেখা যেত। সকাল বেলা গাছের নিচে অনেক ফুল পড়ে থাকতো। সেই ফুল কুড়িয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ফুলের মালা তৈরি করত। কিন্তু বর্তমানে শিউলি ফুলের গাছ তেমন আর চোখে পড়ে না। আমাদের সকলের উচিত শরৎ এর রানী শিউলি ফুলকে রক্ষা করা।
বরেন্দ্র শিক্ষা সংস্কৃতি বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্রের প্রতিষ্টাতা-সভাপতি রাফী আহম্মেদ বলেন,শিউলি ফুল তার সৌন্দর্যের জন্য বাঙালির কাছে প্রিয় একটি ফুল। শিউলি গাছটি আগের মতন আর দেখা যায় না। সকালে গাছের তলায় ঝরে থাকা শিউলি যেন মন ভালো করে দেয়।
বিবিসিএফ এর সহ-সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, কালের বিবর্তনে শিউলি ফুলের গাছ প্রায় হারিয়ে যাওয়ার পথে।
সুগন্ধি তৈরিতেও শিউলি ফুল ব্যবহৃত হয়। শিউলি গাছেরও রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ।
আগামীতে আমাদের বিবিসিএফ পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে গাছটি রোপন ও বিতরন করা হবে।ছবিগুলো নাটোরের নলডাঙ্গার মাধনগর থেকে তোলা।