গারোদের বিশ্বাস ‘মিসি সালজং’বা শস্য দেবতার ওপর নির্ভর করে ফসলের ভালো ফলন হয় এই শস্য দেবতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ও নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতির পাশাপাশি সব পরিবারের ভালবাসা, আনন্দ এবং মঙ্গল কামনা করে ওয়ানগালা (নবান্ন) উৎসব পালন করেছে গারো সম্প্রদায়।
সিলেট বিভাগের গারো সম্প্রদায়ের সংগঠন “শ্রীচক নকমা এসোসিয়েশন” আয়োজনে রবিবার (১৪ নভেম্বর) সকাল ১১টায় ওয়ানগালা উৎসবের মূলপর্বের প্রধান খ্রিষ্টযাগ অনুষ্ঠিত হয়।
ওয়ানগালা খামাল(পুরোহিত )হয়ে খ্রিষ্টযাগ অর্পণ করেন সিলেট ক্যাথলিক ধর্মপ্রদেশের বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ, ফাদার ওয়াল্টার রোজারিও ,নটরডেম স্কুল এন্ড কলেজ ভাইসপ্রিন্সপাল ফাদার মৃণাল ম্রং সিএসসি ও ওয়ানগালা সার্বিক পরিচালনা করেন খামাল জনসন মৃ প্রমুখ। গারো সম্প্রদায়ের তের গোত্রের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে নতুন ফসলের খাদ্য-শস্য ও চু বিচ্চি(পানীয়) বিভিন্ন উপহার তাদের প্রভুকে উৎসর্গ করেন।
আশীষ দিও ও সামুয়েল হাজং এর সঞ্চালনায় সিলেট ক্যাথলিক ডাইয়োসিসের বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজের সভাপতিত্বে শুরু হয়ছে ঐতিহ্যগত গারো সংস্কৃতি মনোজ্ঞ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
ঐতিহ্যগত গারো সংস্কৃতিতে এক যাক যুবক-যুবতি নাচে গানে তালে তাল মিলিয়ে বরণমালা নিয়ে কুতুব পড়িয়ে বরণ করে নেওয়া হয় অতিথিদেরকে। ঐতিহ্যগত গারো সম্প্রদায়ের ওয়ানগালা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর আহসান নাহিদ,বিশেষ অতিথি শ্রীমঙ্গল উপজেলা ইউএনও নজরুল ইসলাম, শ্রীমঙ্গল নব উপজেলা চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিতালি দত্ত, শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃশামীম অর রশিদ তালুকদার, কালাপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মুজুল, শ্রীমঙ্গল নটরডেম স্কুল এন্ড কলেজের ভাইসপ্রিন্সিপাল ফাদার মৃণাল ম্রং সিএসসি, কারিতাস আঞ্চলিক পরিচালক বনিফাস খংলা,ডিসটন ডিভিশন ডিপুটি ম্যানেজার হুমায়ন কবির মজুমদার,মাজদিহি চা বাগানের ম্যানেজার শ্রীমান কান্তি বড়ুয়া, আইএলও প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী আলেক্স চিছাম, কালাপুর ইউনিয়নের মেম্বার অমরৃত সিংছত্রী ও বিভিন্ন সংবাদকর্মীবৃন্দ।
আয়োজক কমিটি সভাপতি ক্ষিতিশ আরেং বলেন, ওয়ানগালা হলো নবান্ন উৎসব এই ওয়ানগালা উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় অঙ্গরাজ্য, ও বাংলাদেশের বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং অন্যান্য অঞ্চলে বসবাসকারী গারোদের প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। এটি ওয়ান্না ও একশ ঢোলের উৎসব নামেও পরিচিত। সাধারণত দুইদিন ধরে উৎসব চলে।উৎসবের প্রথম দিনে গোত্রপ্রধানের ঘরে রাগুলা নামের অনুষ্ঠান পালিত হয় ও উৎসবের দ্বিতীয় দিনে কাক্কাত অনুষ্ঠানটি হয়ে থাকে। এই দিনে গারো সম্প্রদায়েরা রঙ-বেরঙের পোশাক ও পাখির পালক মাথায় দিয়ে লম্বা ঢোলের বাজনা তালে তালে নাচে গানে আনন্দে সারা গারো পাহাড় ঢোলের শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে। পুরুষ ও নারীরা দুইটি আলাদা সারি গঠন করে, নাচের তালে তালে এগিয়ে যান। মহিষের শিং দিয়ে বানানো এক ধরনের আদিম বাঁশির বাজানো সুরে সুরে চলতে থাকে এই ওয়ানগালা উৎসব । প্রতি বছর সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে এই উৎসব পালন করা হয়।
ফসল তোলার এই উৎসবে সূর্যদেবতা ও দেবী মিসি এবং সালজং-এর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। গারোদের বিশ্বাস এই “মিসি সালজং বা মিদ্দি সালজং”শস্য দেবতার ওপর নির্ভর করে ফসলের ভালো ফলন হয়। এই শস্য দেবতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ও নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতি চেয়ে ওয়াগালা( নবান্ন) উৎসব প্রতি বছর করে থাকেন।
বর্তমানে কালের বিবর্তনে উৎসবটি সাংসারেকসহ গারো খ্রীষ্টিয়ানরাও কৃষ্টি-সংস্কৃতি পালন করছে।