নলডাঙ্গা(নাটোর)প্রতিনিধিঃ কালো মানিক বলতেই মনে পড়ে যায় বিশ্বখ্যাত ফুটবলার তথা ফুটবলের জাদুকর ব্রাজিলের পেলেকে। গায়ের রং কালো বলে তাঁকে বলা হত কালো মানিক। ঠিক তেমনি নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারেে জন্ম নেওয়া একজন ফুটবলপ্রেমী। যার নাম রাজু জোয়াদ্দার।ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি আলাদা রকম আগ্রহ ও ভালবাসা আর সেখান থেকেই প্রচেষ্টা এবং অবশেষে সফলতার অশেষ গল্প।
৫ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতা ও শ্যামলা বর্নের এই ফুটবলার শুধু ফুটবলের জাদুকর নয় সামাজিক সাংস্কৃতিক , শিক্ষা ,ধর্মীয় ও সাধারণ মানুষের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে রয়েছে তার অংশগ্রহণ।
মাধনগর জুনিয়র ক্রীড়া চক্র কালোকাশিয়া কলেজ মাঠে খেলার মাধ্যমে তার খেলার জীবনের সূচনা ।তারপর মাধনগর জুনিয়র ক্রীড়াচক্র ফুটবল টিম দলের অধিনায়ক এর দায়িত্ব পান তিনি ।এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই ফুটবলারকে। শুরু হয় কৃতিত্বের ও সফলতার গল্প।
১৯৯৫ এর মে মাসে মাধনগর কালোকাশিয়া কলেজ মাঠ এবং পশ্চিম মাধনগর ডিফেন্স ক্লাব হতে প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করেন, সভাপতি মোঃ আবুল বাশার দেওয়ান। এক মাস বাদেই
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কতৃক জেলা ক্রীড়া অফিসারের কার্যালয়, নাটোর হতে বার্ষিক ক্রীড়া কর্মসূচির সনদপত্র পান তিনি। সনদপত্র প্রদান করেন মোঃ আব্দুস ছাত্তার খান।
সাধারণ সম্পাদক ও বার্ষিক ক্রীড়া কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটি ও জেলা ক্রীড়া অফিসার, নাটোর। এবং একই মাসে এই কর্মকর্তা
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কতৃক জেলা ক্রীড়া দপ্তর(নাটোর) হতে একটি প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করেন। এছাড়াও একই বছরের জুনে জেলা ক্রীড়া সংস্থা,নাটোর কতৃক আরো একটি প্রত্যয়ন পত্র অর্জন করেন রাজু জয়াদ্দার। প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করেন,নাটোর ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন।
এছাড়াও তিনি ২০০৪ সালে শহীদ নজমুল হক ডিগ্রি কলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট -২০০৪ এর সন্মাননা সনদ পান শহীদ নজমুল হক ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান জয়াদ্দারের নিকট হতে।
এ বছরই নাটোর জেলা ফুটবল রেফারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক লাকি নাটোর স্টেডিয়ামে এই ফুটবলারকে প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করেন ।
এখানেই শেষ নয়, ফুটবল প্রেমী রাজু জোয়ার্দ্দারকে ২০১১ সালের মার্চ মাসে নাটোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার,সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করেন। সমস্তত জেলা জুড়ে সুনাম ও খ্যাতি ছিল এই ফুটবলার কালো মানিকের।
২০১৮ সালের নভেম্বরে জনগণের কন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত, সিংড়া,তেলীগ্রাম মরহুম ফরেজ উদ্দিন স্মৃতি স্বরনে ফুটবল ম্যাচে জয়ী মাধনগর এবং ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হন রাজু জোয়াদ্দার।
তার এই সফলতার কারণে খেলোয়াড় থেকে অধিনায়ক এবং অধিনায়ক থেকে এই রেফারি ও কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের রেফরীর উপর প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করেন নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব আল রাব্বি । এছাড়াও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট (অনূর্ধ্ব১৭ ) ২০১৯ নলডাঙ্গা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইউনিয়ন ভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্টের উপর রেফারি হিসেবে প্রত্যয়ন পত্র পান মাধনগর চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের নিকট থেকে।
পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন জায়গায় কোচার হিসেবেও কাজ করেন। এবং বিভিন্ন সফলতার জন্য এখানেও পেয়েছেন বিভিন্ন সনদ ও প্রত্যয়ন পত্র । কোচের দায়িত্বে কৃতিত্বের জন্য ফুটবল কোচ হিসেবে প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করেন নলডাঙ্গা শাখার জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এস এম ফিরোজ এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান ।
সফল কোচার হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য নাটোর ফুটবল টিমের কোচের উপর প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করেন তৎকালীন নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহি কর্তা সাকিব আল রাব্বি। এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট বালিকা (অনূর্ধ্ব ১৭) ২০২১ ফুটবল টিমের কোচ হিসেবে প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করেন নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন।
রাজু জোয়াদ্দার তার জীবনে ১১৮ টি মাঠে ফুটবল টুনামেন্ট অংশগ্রহণ করেন ।তার মধ্যে ৫৭ টি ফাইনাল টুর্নামেন্ট অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ২৭টি ফাইনাল ম্যাচে ম্যাচসেরা খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত হন । এছাড়াও তিনি সহস্রাধিক বিভিন্ন আঞ্চলিক, ইউনিয়ন, ও উপজেলা ভিত্তিক খেলায় অংশগ্রহণ করেন এবং সফলতা লাভ করেন। এ তো গেল শুধু খেলার গল্প ।
এছাড়াও কালো মানিক খ্যাত রাজু জোয়ারদার রাজশাহী বেতারে গানের কন্ঠ পরীক্ষায় ও মসজিদের ইমাম হিসেবে দীর্ঘদিন মোয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করেন ।পাশাপাশি রিকশা-ভ্যান শ্রমিক সংগঠনের বিভিন্ন সমিতিতে নেতৃত্ব দেন তিনি ।তাছাড়াও একাধিকবার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরনের কমিটিতে নেতৃত্বস্থানীয় ও সম্মানিতপদ পান তিনি। খেলাধুলার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক সংগঠনের অগ্রযাত্রায় তিনি এক বিশাল ভূমিকা পালন করেন।