বিনোদন ডেস্কঃ নায়িকা পরীমনির মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া ডিএমপির গোয়েন্দা কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনের অসদাচরণের সাক্ষতার পেয়েছেন তদন্ত কমিটি। এতে করে শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন সাকলায়েন।
কোনো পুলিশ কর্মকর্তা অসদাচরণ করলে তাকে ৪টি শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। এরমধ্যে রয়েছে, তাকে ব্ল্যাক মার্ক (নৈতিক স্খলন) করা হয়, মৌখিক সতর্ক করা, তিরস্কার করা এবং পদোন্নতি আটকে দেয়া। এই ৪টি শাস্তি অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী প্রয়োগ করা হয়। চলতি সপ্তাহেই তদন্ত কমিটি সাকলায়েনের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরে প্রতিবেদন জমা দেবে।
পরীমনি ও সাকলায়েনের ঘটনায় গত ৮ই আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি মিয়া মাসুদ করিম (ট্রেনিং)কে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির ২৩শে আগস্ট প্রতিবেদন দেয়ার কথা ছিল।
কিন্তু, আরও তথ্য-প্রমাণ গ্রহণের স্বার্থে প্রতিবেদন জমা দেয়ার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছিল। এর মধ্যে তদন্ত কমিটির এক সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এর কারণে তদন্ত রিপোর্ট দিতে দেরি হয়। তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।
দ্রুত তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দিবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির এক সদস্য গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কমিটির অন্য দুজন সদস্য হলেন- ডিএমপিথর উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশনের ডিসি হামিদা পারভিন এবং সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) রুমানা আক্তার।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ট্রেনিং) মিয়া মাসুদ করিম জানান, ‘কয়েকদিনের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। তবে জমা দেয়ার আগে তদন্ত কমিটির তিনজন আমরা আবার আলোচনা করবো।
তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানান, তারা তদন্ত করতে গিয়ে পরীমনি ও সাকলায়েনকে আলাদা আলাদাভাবে জিজ্ঞাসা করেছেন। সাকলায়েন অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। তবে পরীমনি তদন্ত কর্মকর্তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর এলোমেলোভাবে দিয়েছেন। এ ছাড়াও তদন্ত কমিটি দুইজনের ঘনিষ্ঠজনদেরকেও জিজ্ঞাসা করেছেন।তারা জানতে পেরেছেন যে, সাকলায়েনের সঙ্গে পরীমনির বিয়ে হয়নি।
সাকলায়েন মামলাকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করার লোভ দেখিয়ে পরীমনিকে তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। পরীমনিও সুযোগটি গ্রহণ করেন। তদন্ত কমিটি বিভিন্ন ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন।
ঘটনার তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটি যেসব আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে তাতে তারা অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পেয়েছেন। তারা দুজনই নিজেদের স্বার্থের কারণে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। সাকলাইন নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এতে করে পরীমনির মামলা ভিন্নখাতে প্রভাবিত হলে ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হতো।
সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটির জিজ্ঞাসাবাদে সাকলায়েন দাবি করেছেন যে, পরীমনি তাকে জোর করে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। তিনি আগ বাড়িয়ে কিছু করতে চাননি। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে তিনি কেন ওই সম্পর্কে জড়ালেন তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
বোট ক্লাবে পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তের তদারকি কর্মকর্তা ছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সাকলায়েন। তদন্ত চলাকালে তার বাসায় একাধিকবার যাতায়াত করেছেন পরীমনি। এ সময় পরীমনির সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তার। এ পুলিশ কর্মকর্তা ও পরীমনি বিভিন্ন সময় গাড়িতে একসঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরাও করেছেন। এ সময় তিনি তাকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে তার বাসায় নিয়ে যান।
তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও ফাঁস হলে বিষয়টি চাউর হয়ে ওঠে। পরে তাকে ডিএমপি থেকে মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগে বদলি করা হয়। সাকলায়েন যে মামলার তদারকি কর্মকর্তা সেই মামলার তথ্য, তার বাসায় পরীমনির আসা-যাওয়ায় মামলার তদন্তে কোনো প্রভাব পড়েছে কিনা সাকলায়েন পুলিশের আইন অনুযায়ী কোনো অপরাধ করেছেন কিনা, তদন্ত প্রতিবেদনে বিস্তারিত তুলে ধরতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিটিকে ১৫ কার্যদিবস সময় দেয়া হয়েছে।
সূত্রঃ মানবজমিন