সারোয়ার হোসেন,তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর তানোর উপজেলায় আগামী ১১ নভেম্বর আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিরামহীন উৎসব মুখর প্রচারণা শেষে চলছে হিসেব নিকেশ।
এবারের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের মুল প্রতিপক্ষ উপজেলা সভাপতি সম্পাদকের অনুসারীরা।তারা ছয় ইউনিয়ন পরিষদের বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়েছেন। যাদের সবাই মটর সাইকেল প্রতীক নিয়েছেন এবং বেশ কয়েকটি ইউপিতে নৌকার বিপক্ষে মুল লড়ায়ে আছে বিদ্রোহীদের মটরসাইকেল।
এ ইউনিয়ন পরিষদ ভোটে নিজ দলের মধ্যে প্রকাশ্য বিদ্রোহ করায় তৃনমূলে চরম বিব্রত কর অবস্থা বিরাজ করছে। সেই সাথে পাল্টাপাল্টি অভিযোগও করছেন।ছড়িয়ে পড়ছে উত্তেজনা, ছিঁড়িয়ে ফেলা হচ্ছে পোষ্টার পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে নৌকার প্রচারনা অফিস, হচ্ছে মারপিটও। যার কারনে সাধারন ভোটারেরা সংঘর্ষেরও আশঙ্কা করছেন এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
ফলে নিজেদের কলহ বিবাদ আরো প্রকাশ্য হচ্ছে বলে সাধারন তৃনমূলের নেতাকর্মী ও ভোটারদের মাঝে এমন কথায় বিরাজ মান।যা সামাজিক যোগাযোগেও উঠে আসছে। আবার রইশ উদ্দিন বাচ্ছু তালন্দ ইউপি ভোটে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কারনে গত রোববার এবং চান্দুড়িয়া ইউপি যুবলীগের সভাপতি সাইদুর বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুস সালামের পক্ষে কাজ করার জন্য তাকে মঙ্গলবার বহিষ্কারের ঘোষণা দেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না। অবশ্য সরনজাই ইউপিতে নৌকা প্রতীক থাকলেও ঋণ খেলাপির দায়ে প্রার্থী আব্দুল মালেক অংশ নিতে পারছেনা। এই ইউপিতে আরেক আওয়ামীলীগ নেতা আবু সাইদ সরকার মনোনায়ন জমা দেওয়ার কারনে তাকেই স্থানীয় সাংসদের নির্দেশে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তিনি মটর সাইকেল প্রতীকে অংশ নিয়েছেন।
জানা গেছে, আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। এই নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী থাকলেও, সভাপতি গোলাম রাব্বানী এবং সাধারন সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের নির্দেশে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ভোটের মাঠে রয়েছেন।
আবার প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক না ছাড়ায় বিগত সময়ের চেয়ারম্যানরাই স্বতন্ত্র আনারস চশমা প্রতীকে নির্বাচন করছেন।তবে দলের বর্তমান চেয়ারম্যানরা নৌকা প্রতীক পেলেও শুধুমাত্র কামারগাঁ ইউপির চেয়ারম্যান মোসলেম আলী প্রামানিক নৌকা না পেয়ে মটরসাইকেল প্রতীকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।এছাড়াও সরনজাই ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক নৌকা পেলেও বাছায়ের দিন ঋণ খেলাপির জন্য মনোনায় বাতিল হয়। তিনি উচ্চ আদালত হাইকোর্টের মাধ্যমে প্রার্থিতা ফিরে পেলেও সোমবার সুপ্রিম কোর্ট প্রার্থিতা বাতিল করেন তারা সভাপতি রাব্বানী,সম্পাদক মামুনের অন্যতম অনুসারী হিসেবেই পরিচিত বলে ভোটের মাঠে প্রচুরভাবে চলছে আলোচনা সমালোচনা।
অবশ্য সরনজাই ইউপি ভোটে উপজেলা আ”লীগ নেতা আলহাজ্ব আবু সাইদ মটর সাইকেল প্রতীকে অংশ নিয়ে নৌকা ছাড়াই তিনি এখন দলের প্রার্থী। এজন্য এই ইউপির নৌকার ভোটারেরা প্রতীকে ভোট দিতে পারছেনা। আর কামারগাঁ ইউপিতে ইউপি আ”লীগের সভাপতি ফজলে রাব্বি ফরহাদ নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তিনি এই নির্বাচনে প্রথমবারের মত নৌক্কা পেয়েছেন এবং নতুন মুখ।
বাধাইড় ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমানকে পরাজিত করতে রফিকুল ইসলাম নামের একজনকে ভোটের মাঠে নামিয়েছেন। তিনি আ”লীগের কোন সদস্য পদে নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে। শুধুমাত্র সভাপতি রাব্বানীর সম্পর্কে ভাগ্নে হয় মূলত এজন্যই নাকি তিনি ভোটে অংশ নিয়েছেন এমন অভিযোগ করেন নৌকার ভোটারেরা ।কামারগাঁ বাধাইড় ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে ইউপির কোন পর্যায়ের নেতাকর্মী নেই। অবাক হওয়ার ব্যাপার তাদের পক্ষে প্রচারনা করছেন তানোর মুণ্ডুমালা পৌরসভার নেতাকর্মীরা।
কামারগাঁ ইউপিতে সরেজমিনে দেখা গেছে, দলীয় ও তৃনমূল নবীন প্রবীণ ভোটারেরা বিদ্রোহী প্রার্থীর উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন তিনি ২০১৬ সালে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আছেন এবং ২০১১ সালে দলের মনোনায়ন পেয়ে প্রথমবারের মতও চেয়ারম্যান হয়েছিলেন তিনি ।এদুই নির্বাচনে মোসলেম পক্ষে ভোট করে তাকে চেয়ারম্যান করেছিলেন । আর সেই মোসলেম নৌকা না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তিনি আ”লীগ করতেন বলেই চেয়ারম্যান হয়ে আছেন।আর তিনিই নৌকা ডুবাতেই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। অবশ্য এর জবাব ভোটারেরাও দিচ্ছেন।এজন্য তার সাথে ইউপির কোন দলীয় নেতাকর্মীরা নেই, তাহলে কেন তিনি দলের সাথে এত বড় বেইমানী করছেন এমন আলোচনা ইউপির ভোটারদের মুখ মুখে।কারন নৌকার প্রার্থী ভোটারদের পরিষ্কার করে বলছেন আমাকে নৌকা প্রতীক না দিলে কখনই ভোট করতাম না।
এজন্য দলের নেতাকর্মী ভোটারেরা রাব্বানী মামুনকেই দায়ী করছেন।এর যথেষ্ট কারণও রয়েছে এর মধ্যে নৌকার পক্ষে তারা ভোটের মাঠে না এসে উল্টো নৌকা প্রতীক দেওয়ার নামে ব্যাপক বানিজ্য করে ব্যর্থ হয়েছেন। এই বানিজ্য হালাল করতেই তারা বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়ে দলের সাথে গাদ্দারি করছেন বলেও নির্বাচনী শীর্ষ নেতারাই বক্তব্যে প্রকাশ্যে বলছেন ।
বাধাইড়েও প্রবাসীর ভাই মটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী রফিকুলের টাকা হালাল করতেই ভোটের মাঠে রেখে নৌকাকে নৌকাকে ভাঙ্গতে গোলাম রাব্বানী তাকে বিদ্রোহী প্রার্থী করেছেন।প্রার্থী টাকার জোরে ইউপি এলাকায় তার পক্ষ থেকে মুণ্ডমালা পৌর এলাকার জনসাধারণ বিশাল বিশাল ভুরিভোজ করছেন বলেও জানা গেছে।
এদিকে পাঁচন্দর ইউপিতে নৌকা ভাঙ্গতে রাব্বানী তার আপন ভাই শরিফুলকে বিদ্রোহী প্রার্থী করে প্রচুর সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। কারন এর আগে তাকে হাতুড়ী প্রতীক দিয়ে নৌকা ভাঙ্গার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এখানেই শেষ না তাদের চক্রান্ত। এরা তালন্দ ইউপির যুবলীগের সভাপতি রইশ উদ্দিন বাচ্চু এবং চান্দুড়িয়া ইউপিতে উপজেলা আ”লীগের যুগ্ন সম্পাদক আব্দুস সালাম হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী। তিনি জেলা পরিষদের সদস্য।
অপর দিকে গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে তালন্দ ইউপির বিদ্রোহী প্রার্থী বাচ্চুর নিজ গ্রাম মোহরে এবং সন্ধ্যার পরে আরেক বিদ্রোহী আনারস প্রতীকের প্রার্থী ইউপি আ”লীগ সভাপতি নাজিম উদ্দিন বাবুর গ্রাম লালপুর বাজারে নৌকার পক্ষে পথ সভা করেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না। তিনি সভায় বাচ্চুকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে রাব্বানী মামুন কে আমি লীগ আখ্যা দিয়ে বলেন আপনারা কিসের সভাপতি সম্পাদক।কেন নৌকার পক্ষে না থেকে বানিজ্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়ে আলিশান জীবন যাপন পরিচালনা করছেন।
আপনারা আওয়ামীলীগ থেকে খারিজ হয়ে গেছেন। আপনাদের ষড়যন্ত্র সবাই বুঝে গেছে। আপনাদের মত কুচক্রদের আওয়ামীলীগে কোন স্থান নেই। যারা জাতির পিতার প্রতীক দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতীক স্বাধীনতার প্রতীক নৌকার সাথে নিজেরদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিদ্রোহ করতে পারে তাদের দলে কোন জায়গা হতে পারেনা। তিনি পরিষ্কার ভাবে দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে ভোটারদের বলেন বিদ্রোহীরা আওয়ামীলীগের কেউ না তাদেরকে বর্জন করে এলাকার উন্নয়নের জন্য নৌকার পক্ষে থাকতে হবে, নৌকাকে সম্মানিত করতে হবে, নৌকাকে বিজয়ী করাতে হবে। প্রার্থী না নৌকায় ভোট দিবেন বলেও অনুরোধ করেন।