সৈয়দ মোঃরাসেল,কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধিঃ
বাবা-মাকে সিনেমা স্টাইলে চোখের সামনে নির্যাতন হতে দেখলো দুই শিশু আপন ভাইবোন আয়শা রিপা (৯) ও রিফাত হোসেন (১০)।
রোববার সকালে কলাপাড়া হাসপাতালে মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি মুমুর্ষ মায়ের দিকে চেয়ে ২ ভাইবোন ফুফিয়ে কাঁদছিলো। কলাপাড়া হাসপাতালে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে উপস্থিত সবাই অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। মায়ের সুস্থতার জন্য তার পাশে বসে অজ্ঞান মায়ের হাত-পা টিপে দিচ্ছেন। যন্ত্রনাসিক্ত মা সন্তানদের ডাকে সাড়া দিতেও পাড়ছেন না। গৃহবধুর সারা শশীরে ফুলা যখমের চিহ্নরয়েছে। রিপা রবগুনার লেমুয়া খাজুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থী এবং তার ভাই রিফাত একই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী।
শয্যাসায়ী নারীর স্বজনেরা এ প্রতিনিধিকে জানায়, বরগুনা সদর উপজেলার ৭ নং ইউপির লেমুয়া গ্রামের বাড়িতে বসে তাদের চোখের সামনে মা রশোনা বেগমকে তার ফুফু ও ফুফারা অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছেন।
এসময় মাকে বাঁচাতে দুই শিশু সন্তান এগিয়ে গেলে তাদেরকেও মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে তার মা নির্যাতন সইতে না পেরে সঙ্গাহীন অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পরেন। এর আগে ফুফু ও ফুফারা বাড়িতে ঢুকেই তার বাবাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলেন। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের বাবা ছাড়া পেয়ে ৯৯৯ এ ফোন করলে বরগুনা সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে তাদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সেখানেও ফুফু ও ফুফাদের হুমকিতে তাদের বাবা ফোরকান প্যাদা তার স্ত্রীকে কলাপাড়া হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন। তবে কি কারনে তাদের বাবাকে বেঁেধ মাকে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে তা বুঝতে না পারলেও কাঁদো কাঁদো কন্ঠে এভাবেই ভয়াবহ নির্যাতনের কথাগুলো বলেন রিপা ও রিফাত।
নির্যাতিত ও অসুস্থ ফোরকান প্যাদা এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী । কাজের সুবাদে তিনি কলপাড়ার পাখিমারা এলাকার শ্বশুর বাড়িতে থাকেন। এ সুযোগে তার বড় বোন জামাই সোবাহান মল্লিক ও মেঝ বোন জামাই শহীদুল শিকদার তার স্ত্রী রোসনা বেগমকে বেশ কয়েকবার শারিরিক সম্র্পকে লিপ্ত হতে কুপ্রস্তাব দিয়েছেন। ঘটনার আগের দিন তিনি বাড়িতে ফিরলে তার স্ত্রী বিষয়টি তাকে জানান।
পরে তিনি তাদের বোনদের অবগত করেন। কিন্তু তারা বিষয়টি কোন কর্নপাত না করে মিথ্যা অপবাদের কথা জানিয়ে শুক্রবার উল্টো সন্তানদের সামনেই স্ত্রীকে বেধড়ক মারধোর করে এবং তাকে গাছেরসঙ্গে বেঁধে রাখে। তার বড় বোন রিনা বেগম, বোন জামাই সোবাহান, মেঝ বোন হেনা বেগম, বোন জামাই শহিদুল শিকদার, সেঝ বোন আফসানা বেগম, বোন জামাই বেল্লাল তালুকদার, ছোট বোন রেকসোনা বেগম, বোন জামাই উজ্জলসহ আরো বেশ কয়েকজন তার স্ত্রীকে কিল, ঘুষিসহ লাঠি দিয়ে পেটাতে পেটাতে অজ্ঞান করে ফেলেন। নিজের বোন ও বোন জামাইদের দ্বারা এভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি হতভম্ব হয়েছেন।
গুরুতর জখম রোসনার চাচা কলাপাড়ার পাখিমারা গ্রামের নজরুল ইসলাম এ প্রতিনিধিকে জানায়, রোসনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছে। তিনি এর সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন। এবিষয়ে অভিযুক্ত সোবাহান ও বেল্লালের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুল ইসলাম গনমাধ্যমকে জানান, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: জসিম সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি তিনি অবগত নন। যেহেতু ঘটনা বরগুনার মামলাও বরগুনা থানায় হবে। তবে তার কাছে আসলে তিনি আইনী পরামর্শ দিবেন।