জহুরুল ইসলাম,শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ একাদশ জাতীয় সংসদের ৬৭, সিরাজগঞ্জ ৬ শূন্য আসনের উপনির্বাচনকে ঘিরে শাহজাদপুরে রীতিমতো উৎসব শুরু হয়েছে। বিশেষ করে এইবার সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর মাধ্যমে ভোট হওয়ায় ভোটারদের মধ্যে আলাদা আমেজ তৈরী হয়েছে। ভোটের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় মেতে উঠেছেন প্রার্থীরা।
দুই নভেম্বর সিরাজগঞ্জ ৬ আসনের উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে বিএনপি কোন প্রার্থী না দিলেও আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতাসহ মোট ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। অপর প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙল প্রতীকের মোঃ মোক্তার হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এ্যাড. হুমায়ুন কবির।
নির্বাচনকে ঘিরে ৩ জন এমপি প্রার্থীই তাদের প্রচার প্রচারণা করছেন। শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণায় উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভার মোট ৪ লাখ ২০ হাজার ৮৭০ জন ভোটারের মন জয় করতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটে চলছেন ক্লান্তিহীন। তবে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ প্রচার প্রচারণায় এগিয়ে রাখছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতাকেই। তাদের মতে আওয়ামীলীগ ঐক্যবদ্ধ ভাবে সর্বস্তরের জনগণের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। তাই নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত।
অপরদিকে তুলনামূলক সাংগঠনিক ভাবে অনেকটা দর্বল জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙল প্রতীকের প্রার্থী মোক্তার হোসেন একক ভাবে প্রাচার প্রচারণায় আসলেও জনগণের কাছে পৌঁছাতে ব্যার্থ হয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। অন্যদিকে স্বতন্ত্র থেকে এ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির প্রার্থীতা ঘোষণা করলেও মাঠে ময়দানে না থেকে অনেকটা নিরব ভূমিকা পালন করছেন তিনি। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বিজয়ের পথে একধাপ এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতা। এছাড়াও শাহজাদপুরে রয়েছে প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতার আলাদা সুখ্যাতি।
তাঁর পিতা প্রয়াত ড. মযহারুল ইসলাম ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ফোকলোরবিদ, কবি এবং গবেষক। ছিলেন বাংলা একাডেমির প্রথম মহাপরিচালক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। একই সাথে তিনি ছিলেন আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ এবং শাহজাদপুরের মানুষের কাছে অত্যন্ত পরিচিত ও আপনজন। অপরদিকে প্রফেসর মেরিনা জাহানের ছোট ভাই চয়ন ইসলাম ছিলেন সাবেক দুইবারের এমপি। এদিকে প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতা নিজেই বিরাট ব্যাক্তিত্ব।
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে সমাজ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষা ক্যাডারে বিসিএস করে শিক্ষকতা করেছেন ৪ দশক সময় ধরে। সর্বশেষে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠার সাথে।
এরপর অবসরে যাওয়ার পর পারিবারিক ঐতিহ্যের টানেই বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য হওয়ার পর থেকেই সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সফলতার সাথে পরিচালনা করেন সাংগঠনিক কার্যক্রম। ফলে খুব দ্রুতই জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান জানান দিতে সক্ষম হন।
সর্বশেষ ২ সেপ্টেম্বর আলহাজ্ব হাসিবুর রহমান স্বপন এমপি’র মৃত্যুর পর শূন্য হওয়া আসনটির উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতাকে।
তাঁত শিল্প আর গো-খামারসমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনে রয়েছে উত্তরবঙ্গের- একমাত্র বাঘাবাড়ী নৌবন্দর, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের তেল ডিপো, বাঘাবাড়ী মিল্ক ভিটা, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাচারী বাড়ি, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা স্থাপনা ও কবির স্মৃতি বিজড়িত বিরাট গো-বাথান।
এই আসনটি একটি প্রথম সারির পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এমন গুরুত্বপূর্ণ ভাগে শিক্ষিত, মার্জিত এবং চৌকস রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বকেই অভিভাবকত্বের আসনে বসাতে চায় শাহজাদপুরের জনগণ।
নির্বাচন নিয়ে আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, শাহজাদপুরের জনগণ তাঁর পাশে আছে। তাছাড়া শাহজাদপুরের জনগণ যথেষ্ট সচেতন। তাই তাদের সুচিন্তত মতামত দিয়ে এ আসনের উপ নির্বাচনে বিপুল ভোটে তাকে বিজয়ী করবেন বলে তিনি আশাবাদী।
তিনি আরও জানান, তাকে নির্বাচিত করলে জনগণের চাওয়া পাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে শাহজাদপুরকে সামগ্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি আধুনিক ও সুপরিকল্পিত নগরীতে পরিণত করা হবে।
জাতীয় পার্টির মনোনীত লাঙল প্রতীকের প্রার্থী মোক্তার হোসেন জানান, সুষ্ঠ নির্বাচন হলে শাহজাদপুরের জনগণ ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে তাকেই বিজয়ী করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম জানান, এ আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহন করা হবে, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।