মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্মৃখ সমরে মৃত্যুবরণকারী বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের ৫০তম শাহাদাত বার্ষিকী পালন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার(২৮ অক্টোবর)দুপুরে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, প্রেসক্লাব ও বিজিবির উদ্যোগে দলই বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পনের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলী প্রদান করা হয়। এরপর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রদ্ধাঞ্জলী প্রদান করে। শ্রদ্ধাঞ্জলী প্রদান শেষে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মৃত্যুবরণ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান ও তার সহযোগীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
এ সময় কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশেকুল হক, কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পৌর মেয়র জুয়েল আহমদ, উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মুনিম তরফদার, দলই বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার আব্দুল কাইয়ুম, কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি শাব্বির এলাহী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংষ্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য ১৯৭১ সালের অক্টোবরের ২৮ তারিখে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও পাকিস্তান বাহিনীর ৩০এ ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্টের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে অংশ নেয়। মুক্তিবাহিনী পাকিস্তান বাহিনীর মেশিনগান পোস্টে গ্রেনেড হামলার সিদ্ধান্ত নেয়। গ্রেনেড ছোড়ার দায়িত্ব দেয়া হয় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে। তিনি পাহাড়ি খালের মধ্য দিয়ে বুকে হেঁটে গ্রেনেড নিয়ে আক্রমণ শুরু করেন। দুটি গ্রেনেড সফলভাবে মেশিনগান পোস্টে আঘাত হানে, কিন্তু তার পরপরই হামিদুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। সে অবস্থাতেই তিনি মেশিনগান পোস্টে গিয়ে সেখানকার দুই জন পাকিস্তানি সৈন্যের সাথে হাতাহাতি যুদ্ধ শুরু করেন। এভাবে আক্রণের মাধ্যমে হামিদুর রহমান এক সময় মেশিনগান পোস্টকে অকার্যকর করে দিতে সক্ষম হন।
এ সুযোগে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল উদ্যমে এগিয়ে যান ও শত্রু পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে সীমানা ফাঁড়িটি দখল করতে সমর্থ হন। কিন্তু বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান বিজয়ের স্বাদ আস্বাদন করতে পারেননি, ফাঁড়ি দখলের পরে মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হামিদুর রহমানের লাশ উদ্ধার করেন।
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের অনন্য ত্যাগের জন্য জাতি ও মৌলভীবাজারবাসী তাঁর প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবে আজীবন। প্রতি বছর এই দিনটি আসলে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন,কমলগঞ্জ উপজেলা শাখার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সংবাদকর্মীবৃন্দ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নেতৃবৃন্দগণ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে পুষ্প অর্পণ করে থাকেন ।