দুর্গাপুর(রাজশাহী)প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর দূর্গাপুর উপজেলার বখতিয়ার পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দীনকে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড থেকে শোকজ করা হয়েছে। স্কুল বন্ধ থাকা কালিন সময় প্রধান শিক্ষক সকল শিক্ষককে কেন শোকজ করা হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট প্রমাণাদিসহ শোকজের প্রতি উত্তরে দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সকল শিক্ষক বাদী হয়ে দূর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড থেকে বখতিয়ার পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দীনকে শোকজ করা হয়েছে। অভিযোগ সূত্রে ও স্থানীয় ভাবে জানা যায়, করোনাকালীন সময় সরকার ঘোষিত ছুটি চলাকালীন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকা অবস্থায় বখতিয়ার পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দীন সাহেব সকল শিক্ষককে প্রত্যেক দিন স্কুলে উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ করেন। সেই মোতাবেক সকল শিক্ষক প্রত্যেক দিন স্কুলে আসেন এবং হাজিরা দেন।
গত ৭ আগস্ট স্কুলে গণ টিকাদান কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করায় ও টিকাদান কর্মসূচি চলছিল।সেদিন স্কুল শিক্ষকেরা টিকাদান কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে ও যে সমস্ত শিক্ষকেরা এসএসসি পরীক্ষার এসাইনমেন্ট পরীক্ষণ এর দায়িত্ব ছিলেন তারা বাসায় বসে খাতাগুলো যাচাই-বাছাই করছিলেন। প্রধান শিক্ষক একদিনের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে রেজাল্ট জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ কারণে ছুটির দিনে স্কুলে উপস্থিত না থাকায় সকল শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষরিত শোকজ নোটিশ করেন। স্কুল শিক্ষকেরা প্রধান শিক্ষকের উপরে অতিষ্ঠ হয়ে দূর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বখতিয়ার পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দীনকে শোকজ করেন।
এ ব্যাপারে বখতিয়ারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এমএ মান্নানের সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক কমিটির অনুমোদন ছাড়াই আমাকে ৯ বার শোকজ করেছে। পাঁচবার বেতন-বোনাসের রেজুলেশনে স্বাক্ষর করে নিয়েছে কিন্তু আমাদেরকে কোন টাকা পয়সা দেয় নাই। শুধু আমাকে নয় আরো যেগুলো স্কুল শিক্ষক আছে সেগুলো শিক্ষকদেরকে বিনা কারণে কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় বার করে শোকজ করেছে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন।
অন্যান্য শিক্ষকেরা অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক আমাদেরকে বিনা কারণে শোকজ করেছে। আমাদের স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি না থাকার কারণে প্রধান শিক্ষক নিয়মিত স্কুলে আসে না এবং সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করার কারনে গত ২০২০-২১ শিক্ষা বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ৬৫ জন ছাত্র-ছাত্রীর রেজিস্ট্রেশনে নামের তালিকা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল পাঠিয়ে আবার রেজিস্ট্রেশন সংশোধনের নামে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে ১৫ শত টাকা করে দাবি করছেন। আর আমরা ভুলগুলো ধরিয়ে দিলে সেগুলো সংশোধন না করে আমাদের সকল শিক্ষকদের সাথে প্রধান শিক্ষক খারাপ আচরণ করেন।
এব্যাপারে বখতিয়ারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দীনের সাথে কথা বলা হলে ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমি সকল শিক্ষকের কাছে শোকজ চিঠি পাঠিয়েছি। সেই কারণে সকল শিক্ষকেরা বাদী হয়ে আমার বিরুদ্ধে দূর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সেকারণে শিক্ষাবোর্ড থেকে আমাকে শোকজ করা হয়েছে। আমি শিক্ষকদের কাছে শোকজ চিঠি পাঠিয়ে ভুল করেছি। আমি শিক্ষকের সাথে আপোষ মীমাংসা করে নিব। এ ব্যাপারে দূর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল রানার সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন,লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরে আমি স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে ছিলাম এবং সব শিক্ষকের বক্তব্য শুনেছি সমস্ত সমস্যা নোট করার জন্য বলেছি। সেগুলো পেলে তার আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং পরবর্তীতে যাতে এ ধরনের সমস্যা না ঘটে তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।