রাজু আহমেদ সাহান,স্টাফ রিপোর্টারঃ শরতের কাশফুল আর শিশির ভেজা ভোর বাঙ্গালীর প্রাণে দোলা দিয়ে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে শারদীয় দূর্গোৎসবের আগমনী বার্তার কথা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গোপূজাকে ঘিরে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় মন্ডপে মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরি ও বিভিন্ন রঙে আস্তরণ দেয়ার কাজ। প্রতিমা তৈরির শেষ আস্তরণে ব্যস্ত উল্লাপাড়া পৌরসভার ঘোষগাঁতী পালপাড়া মহল্লার দুই কলেজ শিক্ষার্থী স্বর্ণা ও পিয়াংকা পাল। তারা দু’জনেই উল্লাপাড়ার সরকারি আকবর আলী কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। বংশীও পেশা হিসেবে তারা বাবা-মাকে সহযোগিতা করতে বেঁছে নিয়েছেন এ প্রতিমা তৈরি ও রঙের আস্তরণের কাজ। গত ৬ অক্টোবর মহালয়ার মধ্যদিয়ে দেবী দূর্গার আগমন ঘটছে মর্তলোকে। এবার দেবী দূর্গা আসবে ঘোড়ায় চড়ে, ফিরবেন দোলায়। মা কে বরণ করে নিতে অধীর অপেক্ষায় ভক্ত-অনুসারিরা। তাই পূজা মন্ডপগুলোতে প্রতিমা তৈরিতে নিরলস ব্যস্ততা মৃৎশিল্পীদের।
মনের মাধুরি মিশিয়ে কারিগরদের সুনিপুন হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে দুর্গতিনাশীনি দেবী দূর্গা এবং তার সঙ্গীয় লক্ষী, সরস্বতী, গনেশ, কার্তিক ও অনিষ্টকারী অশুর সহ বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতিমা।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ থেকে জানা গেছে, এ বছর উল্লাপাড়া উপজেলায় ৯২টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দূর্গোৎসব। এর মধ্যে পৌরসভায় ২৭টি, বাকীগুলো উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে। পঞ্জিকা অনুযায়ী ১১ অক্টোবর মহাষষ্ঠী তিথিতে দেবীর বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হবে এ শারদীয় দুর্গোৎসব। দশমী পূজার মধ্য দিয়ে ১৫ অক্টোবর শেষ হবে এ মহা-উৎসব।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উল্লাপাড়ার মিলন মন্দির, বাজার মন্দির, মায়া মন্দির, শিব মন্দির, হালদারপাড়া কালী মন্দিরে পূজার প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করেই রং-তুলির আচঁড় করা হচ্ছে রঙের কাজ। প্রতিমা শিল্পী প্রদীপ পাল বলেন, প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ। আগামী দুই/এক দিনের ভিতর পূজা মন্ডবে মন্ডবে চলে যাবে। এ বছরে করোনা থাকা সত্ত্বেও উৎসব আয়োজনের ঘাটতি নেই। তবে কারিগরদের আছে হতাশা।
প্রতিমা তৈরির অন্য কারিগর নিখিল পাল বলেন, পালপাড়ার অধিকাংশ মৃৎশিল্পীরা অনেকটাই বেকার হয়ে পড়েছেন বর্তমানে। তার পরও পূণ্য লাভের আসায় বাপ দাদার এ পেশা ধরে রেখেছেন তারা। এবার বাইরের শিল্পীরা পূজা তৈরীর কাজে আসতে ভয় পাচ্ছে। তাই কারিগর শিল্পীর সঙ্কটও রয়েছে এবারের পূজায়।
উল্লাপাড়ার ঘোষগাঁতী মহল্লার পূরোহিত দুলাল চট্রপাধ্যায় জানান, এ বছরে দেবী দূর্গা পৃথিবীতে আগমন করবেন ঘোড়ায় চড়ে আর গমন করবেন দোলায়। ভাল বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে আসছেন দেবীদুর্গা। ফলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলার উন্নতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
উল্লাপাড়া উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারন সম্পাদক বাবলু ভৌমিক বলেন, একটা মন্ডপে একাধিক পুরোহিত মালাকার লাগে। এবার তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে আসতে চাইছে না। এরপর পূজা তৈরীর প্রতিটি জিনিষের দামও বেশ বেড়েছে। বেড়েছে খরচ তারপর করোনায় দেখা দিয়েছে নানা ধরনের আতঙ্ক। সবমিলিয়ে এবার পূজা উদযাপন করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।
উল্লাপাড়া উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি গৌতম দত্ত বলেন, এবারের পূঁজাকে সার্বজনীন উৎসবে রূপ দিতে সনাতন ধর্মের সকল পর্যায়ের মানুষকে নিয়ে আনন্দ করতে চাই। অশুর বিনাসী দেবীর এই আগমন উপলক্ষে সাধ্যমত আয়োজন সম্পন্ন করার প্রাণান্তকর চেষ্টা চলছে আমাদের। সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাসহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন।