জিতু আহমদ,ওসমানীনগরঃ ঘনিয়ে আসছে বিসর্জনের দিন।সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা। দেবী দূর্গার আগমনে নতুন করে সাজানো হচ্ছে মন্দির প্রাঙ্গন। শেষ পর্যায়ে রয়েছে প্রতিমা তৈরীও। এখন শুধু রংতুলি বাকি। মন্ডপে-মন্ডপে পুরো দমে চলছে বর্ণিল সাজ-সজ্জার কাজ।
কেউ প্রতিমায় রং তুলির আঁচড় দিতে প্রস্থুতি নিচ্ছেন, কেউ মণ্ডপের ডেকেজারেশন তৈরিতে। কয়েক দিনের মধ্যেই পূর্ণতা পাবে প্রতিমা। ঢাক, ঢোল, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনি দিয়ে দেবী দুর্গাকে বরণ করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ভক্তরা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ব্যাপক আনুষ্ঠানিকতা এবং অনাড়ম্বর সাথে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা পালন করে থাকেন।
সিলেটর ওসমানীনগরে দুর্গা উৎসব জমিয়ে তুলতে ৩৫ টি মন্ডপে প্রতিমা তৈরি ও সাজসজ্জায় এখন ব্যস্থ সময় পার করছেন আয়োজক ও কারিগররা। মন্ডপ সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, করোনা কালে স্বাস্থবিধি মেনে এবছরও দূর্গা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।পূজা মন্ডপে নিরাপত্তার নিশ্চিতে তিন স্থরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ উপজেলায় গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশের ভ্রাম্যমাণ টিম ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের টহল অব্যাহত থাকবে। আইন শৃঙ্খলার পাশাপাশি উৎসব চলাকালীন স্বাস্থবিধির উপরও নজর দিচ্ছে প্রশাসন।
মঙ্গলবার ৫ অক্টোবর বিকালে ওসমানীনগর থানার হলরুমে উপজেলার পূর্জা উদযাপন কমিটির সাথে পুলিশ প্রশাসনের মত বিনিময় সভায় সু-শৃঙ্খল ভাবে পূজা উদযাপনে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এসময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।পূজা উৎসব চলাকালে দর্শনার্থী ও পূজারীদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত ও মন্ডপে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী রাখা জন্য।
জানা যায়,আগামী ১১ অক্টোবর ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হবে। ১৫ই অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে এই উৎসবের সমাপ্তি হবে। এ বছর উপজেলায় ৩৫টি মন্ডপে দূর্গা পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে সার্বজনীন ২৭টি, ব্যাক্তিগত ০৮ টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দূর্গা উৎসব।
সড়জমিনে উপজেলার কয়েকটি পূজা মন্ডপে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্থ সময় পাড় করছেন মৃৎশিল্পীরা। অনেকের কাজই শেষের পথে। কেই রংতুলির প্রস্থুতি নিচ্ছেন। কেউ আবার মণ্ডপের ডেকেজারেশন তৈরি করছেন।
মৃৎশিল্পীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পূজার আগে পুরো মাসে দম ফেলানোর ফুরসত নেই তাদের। বছরের অন্য সময়ে কাজ থাকে না। মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা আগের মতো নেই। যে কারণে তাদের এই পেশায় টিকে থাকা কঠিন। বছরের অন্যান্য সময় তারা কৃষিকাজসহ বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তাদের অনেকেই পেশাও পরিবর্তন করছেন। শিল্পীরা বলেন,গত দুই বছর করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের আর্থিক অনেক ক্ষতি হয়েছে। যা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। তবুও গত বছরের তুলনায় এবার কাজের পরিমান একটু বেশি। এখন ২৪ ঘণ্টা প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত রয়েছন তারা।
তেরহাতি সার্বজনীন দূর্গা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শাওন কান্তি পাল ও সাবেক সভাপতি নেপুর গুন বলেন, এবছর আমরা তেরহাতি সার্বজনীন দূর্গা পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে ১৬ তম বর্ষে দূর্গা উৎসব পালন করতে যাচ্ছি। আমরা আশাবাদি প্রতিবছরের ন্যায় এবারও শান্তি -শৃঙ্খলা মতে দূর্গা পূজা উদযাপন করতে পারবো। দর্শনার্থীদের স্বাস্থবিধির বিষয় সচেতন করতে আমাদের ৫ থেকে ১০ সদস্যের আরো একটি সেচ্ছাসেবক টিমসহ গঠন করা হয়েছে।
ওসমানীনগর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক চয়ন পাল বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারদীয় দূর্গা উৎসব পালন করা হবে। পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে উপজেলার সকল মন্ডপ কমিটির নেতৃবৃন্দর সাথে মত বিনিময় করা হয়েছে। সরকারী নির্দেশনা মেনেই এবছর দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বনিক বলেন, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল মন্ডপ কমিটির সাথে মত বিনিময় হয়েছে। পূজা মন্ডপগুলোতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। করোনাভাইরাসের কারণে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা পালন করতে হবে।