দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২০২১ উপলক্ষে রাজশাহী জেলা দূর্গাপুর উপজেলার ৭ নং জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নৌকার মাঝি হওয়ার জন্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যে মাঠ গোছানোর জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে।
বর্তমানে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রায়- হাফ ডজন প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। তাহারা হলেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিজয়ী চেয়ারম্যান শমসের আলী। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নিয়ে ফেল করেছেন মোকসেদ আলী। নাজিম উদ্দিন,ফিরোজ আহমেদ , মিজানুর রহমান, রবিউল ইসলাম। তাহারা সকলে ৭ নং জয়নগর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ভোট করার জন্য মাঠ গোছাচ্ছেন।
সরেজমিনে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়,বর্তমান শমসের আলী চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।তার সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, বর্তমানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে দাবি করেন। এদিকে ফিরোজ আলীর সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, আমি গত ইউনিয়ন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ছিলাম।
আমাকে মনোনয়ন না দেয়ায় আমি নির্বাচনে শমসের আলীর পক্ষে কাজ করেছি। তবে আমার আওয়ামী লীগের কোন পদ-পদবী নাই। অপরদিকে আওয়ামী লীগের ৭ নং জয়নগর ইউনিয়নের দলীয় মনোনীত প্রার্থী ছিলেন মোকসেদ আলী। তার সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, গত নির্বাচনে আমার দলীয় সাংগঠনিক ব্যর্থতার কারণে আমি ফেল করেছি। আমি প্রায় ৯০০ ভোটে ফেল করেছি। বর্তমানে আমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। আমি নামের তালিকা উপজেলা কমিটিকে জমা দিয়েছি।
অপরদিকে ৭নং জয়নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন এর সাথে কথা বলার সময় তার দলীয় পদ পদবী জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সদস্য ছিলাম। এরপরে ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ৭ নং জয়নগর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলাম। এরপর ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ৭ নং জয়নগর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।
এরপর ২০০৪ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দূর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। তিনি আরো বলেন, আমি ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দাওকান্দি ইউথ ক্লাব এর দায়িত্ব পালন করেছি এবং ১৯৯০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দূর্গাপুর, পবা, মোহনপুর, বাগমারা দাওকান্দি আঞ্চলিক সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছি।
কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর পরবর্তীতে আর কোনো কমিটি গঠন না হওয়ার কারণে সাংগঠনিকভাবে কোনো পদে না থাকার পরেও সুনামের সাথে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছি। আমি বর্তমানে ৭ নং জয়নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।
তবে আমি ২০০১ সালের নির্বাচনের পর জামায়াত-বিএনপি’র অত্যাচারে আমি ২৫ টি পুকুরের মাছ চাষ ও নিজের ক্ষেত-সংসার ফেলে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হই। আমার তিন ভাই ও আমি পাঁচ বছর যাবত এলাকাই আসতে না পারায় আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হই। এই মুহূর্তে সামাজিক নেতৃত্বের বিকাশ অনেক বেশি প্রয়োজন। নেতৃত্বের সঙ্গে সমাজের পরিবর্তন ও উন্নয়নের বিষয়টি অতপ্রত ভাবে জড়িত। আল্লাহর রহমতে আমি এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক সামাজিক ও ধর্মীয় কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। আমি বর্তমানে দূর্গাপুর উপজেলার ৭ নং জয়নগর ইউনিয়নল নির্বাচন ২০২১ এর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী।অপরদিকে মিজানুর রহমান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করতে চাইলেও তিনি বলেন আমার দলীয়ভাবে কোনো পদ-পদবি নেই। আমি একজন কর্মী হিসেবে আছি।
এদিকে রবিউল ইসলামের সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন,আমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমি উপজেলা কমিটির কাছে তালিকা জমা দিয়েছি। আমি চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে ইচ্ছুক।
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২০২১ উপলক্ষে দূর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান পৌর মেয়র তোফাজ্জল হোসেনের সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, যারা নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন এবং নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করেছেন, তাদের তালিকা পাঠানো হবে না। কমিটি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন কমিটি আছে এবং কমিটির কার্যক্রম ঠিকমতো চলছে।
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২০২১ উপলক্ষে দূর্গাপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দূর্গাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, আমরা নামের তালিকা জেলাতে পাঠিয়ে দিয়েছি। জেলা কমিটি যাচাই-বাছাই করে কেন্দ্রে পাঠাবেন। আর কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। আমরা কমিটির নামের তালিকা জেলাতে পাঠিয়েছি।
সামনে কাউন্সিল অধিবেশন আছে, অধিবেশনের পর নতুন করে কমিটি হবে। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ কাজী ওয়াদুদ দারার সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, যাহারা নৌকার বিরোধিতা করেছে তাদের নাম, যাহারা আওয়ামী লীগের ব্যানারে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২০২১ করতে ইচ্ছুক তাদের নামের তালিকা ও রিপোর্ট আমরা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিব। কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই উত্তীর্ণ হয়েছে। ইতিমধ্যে করোনার জন্য দুই বছর কমিটি পিছিয়ে গিয়েছে। এখন করোনা পরিস্থিতি বুঝে পর্যাক্রমে কমিটি অনুমোদন দেওয়া হবে।
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২০২১ উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার এর সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন,আমি করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছি। দলীয়ভাবে যাহারা নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন এবং বিদ্রোহী ভোট করিয়াছেন। তাদের নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠাবেন কিনা ? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এব্যাপারে আমি পরে কথা বলবো।