সারোয়ার হোসেন,তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর তানোরে ভেজাল ও নিম্নমানের কীটনাশকে সয়লাব হয়ে পড়েছে কৃষি বাজার। নীরব ভূমিকায় রয়েছে উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা বলে অভিযোগ উঠেছে।
কৃষকদের অভিযোগ,মানহীন এসব কীটনাশক জমিতে দফায় দফায় প্রয়োগ করেও সুফল মিলছে না। আবার কৃষি দপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের (এসএএও) পরামর্শও পাচ্ছেন না তাঁরা। কৃষকেরা জানান একশ্রেণীর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে এসব মানহীন নিন্মমাণের কীটনাশক কিনতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে আসছে। এদিকে কীটনাশক আসল,নকল না নিম্নমাণের সেই সম্পর্কে অধিকাংশ কৃষকের তেমন কোনো ধারণা নাই।
আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একশ্রেণীর কীটনাশক ব্যবসায়ী নিম্নমানের মানহীন কীটনাশকের রমরমা বাণিজ্য করে কৃষকের পকেট কাটছে।
কৃষকদের অভিযোগ,কীটনাশক ভেজাল ও নিম্নমানের হওয়ায় জমি থেকে পোকা সরানো যাচ্ছে না। খেতের মাজরা ও পাতা মোড়ানো পোকা সারাতে অনেক কৃষককে এরই মধ্যে জমিতে ৩ বার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়েছে। আগামিতে পচন ও কারেন্ট পোকা রোধে কয়েকদফা স্প্রে দিতে হবে। এতে ধানের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে। ফলন বিপর্যয়েরও আশঙ্কা রয়েছে।
তারা বলেন, কৃষকদের এখন চরম সংকটময় অবস্থা চলছে। এ সময় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের তেমন কোন সহায়তা ও পরামর্শ পাচ্ছেন না। অধিকাংশ সময় মাঠে কৃষি কর্মকর্তাদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না বলেও দাবি করেন কৃষকেরা।
তানোরের সরনজাই ইউপির ১ নম্বর ২ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষি কর্মকর্তা (এসএএও) মোহাম্মদ নাসিম এবং ৬ নম্বর ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষি কর্মকর্তা (এসএএও) রুবিনা আক্তার। কৃষক দারেস আলী,রাজ্জাক ও মাহাতাব জানান,নাসিম সাহেব উপজেলা কৃষি অফিসে বসে কাজ করেন আর রুবিনা আপার তো দেখায় মেলে না। এরা আপন ভাইবোন তাদের বাড়ি তানোরের পার্শবর্তী রিশিকুল ইউপিতে। ফলে তারা বাড়ি থেকে অফিস করায় কখানোই অফিস সময় মানতে পারেন না। এলাকার কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের বদলির দাবি করে আসছেন, কিন্তু রহস্যজনক কারণে কর্তৃপক্ষ নীরব রয়েছে।
স্থানীয় সুত্র জানায়,২০২০ সালের ৫ মে মুন্ডুমালা পৌর এলাকার কীটনাশক ব্যবসায়ী মেসার্স সুফিয়া টেড্রার্সের স্বত্তাধিকারী সামসুজ্জামান ডালিমের পরামর্শে তার দোকান থেকে কীটনাশক কিনে পাঁচন্দর গ্রামের বাসিন্দা সারুদ্দি সরকারের পুত্র কৃষক মাসুদ রানা তার সাড়ে তিন বিঘা বোরো খেতে শীষকাটা রোগ প্রতিরোধে স্প্রে করেন। কিন্তু ৭মে মাসুদ রানা জমিতে গিয়ে দেখেন তার জমির পুরো ধান গাছ পুড়ে খড়ে পরিনত হয়েছে। এতে তার প্রায় এক লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়।
উপজেলার সরনজাই ইউপির সরনজাই খাঁপাড়া গ্রামের মৃত রহমান শাহ্র ছেলে দারেস আলী ইউপির মণ্ডলপাড়া বাজারের কীটনাশক ব্যবসায়ী জামায়াত মতাদর্শী মিজানের পরামর্শে তার দোকান থেকে কয়েক প্রকার কীটনাশক কিনে ৮ বিঘা আমণখেতে স্প্রে করেন। কিন্তু এসব কীটনাশক স্প্রে করার পরপরই ধান গাছের পাতা পুড়ে ঝলসে যায়। এতে তার প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়।
তানোরে ভেজাল ও নিম্নমাণের কীটনাশক ব্যবহার করে কৃষকের ক্ষতিগ্রস্ত হবার এ রকম অসংখ্য নজির রয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (এসএএও) মোহাম্মদ নাসিম ও রুবিনা আক্তার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও কৃষকদের পরামর্শ দিয় আসছেন।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মুঠোফোনে কল গ্রহণ না করায় তার কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।