গোলাম রব্বানী শিপন,বিশেষ প্রতিনিধিঃ বগুড়া জেলা শেরপুর থানা এলাকার এক দিনমজুরের মেয়ে (ছদ্দনাম) নাম ন্যান্সি বয়স (২৬)। তিনি এক সন্তানের জননী। সংসারের অভাব অনাটনের তাড়নায় পাড়ি জমাতে বাধ্য টাকার শহর রাজধানী ঢাকায়। চাকুরী পায় ঢাকা জেলার সাভার থানার হেমায়েতপুরের একটি সুনাম ধন্য গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে। কিন্তু তাতেও অভাগিনির পোড়া কপালে সুখ সইল না স্বামী আরেকটি বিয়ে করে তাকে ডিভোর্স দেয়। স্বামীহারা হয়ে মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পরলেও একমাত্র সন্তানের ভবিষৎ এর কথা চিন্তা করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে ন্যান্সি। এভাবেই চলছিল তাঁর দিন। এরই ধারাবাহিকতায় গত কয়েক মাস আগে একটি অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে কল আসে ন্যান্সির নাম্বরে। পরিচয় দেয় তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী।
পরবর্তীতে ন্যান্সিকে বিভিন্ন সময়ে কল দিতে থাকে অচেনা ওই যুবক।। মিষ্টি মিষ্টি কথাবার্তার এক পর্যায়ে ধুরন্ধর ছেলেটি তার স্বার্থ হাসিলের জন্য ন্যান্সিকে তার কিছু নগ্ন ছবি ও ভিডিও দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। তাহার এই ধরনের প্রস্তাবে রাগান্বিত হয় ন্যান্সি। এক সময় যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সেই অচেনা ব্যক্তিটির সঙ্গে। অচেনা ব্যক্তিটি তার স্বার্থ হাসিলের জন্য আটঘাট বেধে লেগে পরে এবং জানায় সে অবিবাহিত এবং ন্যান্সিকেই বিয়ে করবে। ন্যান্সি সরল বিশ্বাসে তার সন্তানের ভবিষৎ এর কথা চিন্তা করে অচেনা অজানা প্রতারকের কথায় রাজি হয়ে যায়। এবং তার কথামত নিজের নগ্ন ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে নিজের ব্যবহৃত ডযধঃংধঢ়ঢ় এর মাধ্যমে প্রতারকের ডযধঃংধঢ়ঢ় এ পাঠিয়ে দেয়। কিন্ত কথায় আসে না “অভাগা যেদিকে যায় সেদিকে সাগর শুকিয়ে যায়চ্। নগ্ন ভিডিও পাঠিয়ে দেওয়ার সাথে-সাথেই সেই ভিডিও ডাউনলোড করে ন্যান্সিকে পাঠিয়ে টাকা দাবি করা শুরু করে এবং টাকা না পেলেই নগ্ন ভিডিওটি ছড়িয়ে দিবে সোস্যাল মিডিয়ায়। হতভাগী ন্যান্সি উপায়ন্তর না দেখে সিদ্ধান্ত নেয় আত্মহত্যার।, কিন্তু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সেটা তাঁর সম্ভব হয়ে উঠে না।
সর্বশেষ এক নিকট আত্মীয়ের মাধমে হাজির হয় বগুড়া জেলা পুলিশের অভিভাবক পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী (বিপিএম) সেবার নিকট। পুলিশ সুপারের নির্দেশনায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে কাজ শুরু করে জেলা গোয়েন্দা শাখা, বগুড়ার “সাইবার টিম। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই শনাক্ত করতে সক্ষম হয় অচেনা অজানা প্রতারককে।
তারই ধারাবাহিকতায় ডিবি, বগুড়াথর ইনচার্জ সাইহান ওলিউল্লাহ এর নেতৃত্বে ১৪ সেপ্টেম্বর ১১.৪৫ মিনিটে নিখুঁত গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তিগত সহায়তার ভিত্তিতে ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন হেমায়েতপুর, বড়ারী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আটক করা হয় সাইবার প্রতারক সেই মনির হোসেন (২৯), কে। মনির হোসেনের পিতার নাম রিয়াজ উদ্দিন প্রাং। সাং- মহিষভাঙ্গা, পোস্টঃ হারোয়া, থানাঃ বড়াইগ্রাম, জেলাঃ নাটোরকে। আটককালে তার হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয় ১টি অপপ কোম্পানীর স্মার্ট মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন কোম্পানীর ৪ টি সিমকার্ড।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত আসামী মনির হোসেন জানায়, সে ইতিপূর্বেও প্রতারনার মাধ্যমে একাধিক বিয়ে করেছে। বাদীনি যে প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে সেই একই প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ডের চাকুরীর সুবাদে বাদীনিকে দেখতে পায় প্রতারক মনির। তাকে দেখে মনিরের খুব পছন্দ হলে গোপনে তার মোবাইল নাম্বর সংগ্রহ করে এবং তাহার নাম্বরে ফোন দিয়ে মিথ্যা পরিচয়ে কথা বলতে থাকে। কথা বলার এক পর্যায়ে মনির বাদীনিকে তাহার কিছু অশ্লিল ছবি ও ভিডিও দেওয়ার জন্য বললে বাদীনি অসম্মতি জানায়, এবং মনিরের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
পরবর্তীতে আসামী মনির অসহায় বাদীনিকে বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে বাদীনি আসামী মনিরকে সরল বিশ্বাসে তাহার একটি নগ্ন ভিডিও তাহার ব্যবহৃত ডযধঃংধঢ়ঢ় এর মাধ্যমে আসামী মনিরের ডযধঃংধঢ়ঢ় এ পাঠায়। আসামী মনির তাৎক্ষনিক উক্ত ভিডিও তার মোবাইলে ডাউনলোড করে বাদীনিকে পাঠায় এবং মোবাইল ফোনে জানায় তাকে ২০ হাজার টাকা দিতে হবে, অন্যথায় তার নগ্ন ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল করে দিবে। বাদীনি মনিরের হুমকিতে ভিতূ হয়ে বিভিন্ন সময়ে বিকাশে ৮হাজার টাকা প্রেরণ করে। উল্লেখ্য যে, মনির বাদীনিকে দেখিয়াছে কিন্তু বাদীনি কখনো আসামী মনিরকে দেখে নাই, সেই সুযোগ টাই কাজে লাগিয়ে স্বার্থ হাসিল করিয়াছে প্রতারক মনির।
প্রকাশ থাকে যে, তাহার মোবাইল ফোন প্রাথমিক বিশ্লেষনে জানা যায়, বাদীনিসহ, একাধিক মেয়েদের সাথে এই ধরনের সাইবার অপরাধ করিয়াছে ।
আটককৃত আসামী মনির হোসেন নিজের পরিচয় গোপন করে বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে বাদীনির নগ্ন ভিডিও সংগ্রহ করিয়া উক্ত ভিডিও তাহার মোবাইলে সংরক্ষন করিয়া বাদীনির সামাজিক মর্যাদা হানি করা ও ভয়ভীতির মাধ্যমে অর্থ আদায় করার লক্ষ্যে ইন্টারনেটে ছাড়িয়া দিবে বলিয়া বাদীনির নিকট টাকা দাবি ও গ্রহন করায় আটককৃত আসামীর বিরুদ্ধে বগুড়া শেরপুর থানায় পর্ণগ্রাফি নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা দায়ের পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।