গোলাম রব্বানী শিপন, বিশেষ প্রতিনিধিঃ বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে বইকচু। এমনই দৃশ্য মিলেছে বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানহাটে। প্রতিদিন এই হাটে আশেপাশের কৃষকদের উৎপাদিত ছড়া কচু অর্থাৎ বইকচুর প্রচুর আমদানিতে ভরপুর।
বগুড়া জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে, চট্টগ্রাম, ফেনী, কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করা হচ্ছে। আর কচু পরিচর্যা কাজে কর্মস্থান যুগিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন এলাকার শতশত নারী-পুরুষ।
বর্তমান সময়ে কচুর মৌসুমে বগুড়ার মাটি ও আবহাওয়া ছড়া কচু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় এ অঞ্চলে ফলনও ভালো হয় বলে জানিয়েছেন শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।
মঙ্গলবার সকাল ৯টায় মহাস্থান হ্টের সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,রায়নগর ইউনিয়নের টেপাগাড়ী এলাকার কৃষক ফজলুর রহমান জানান, তিনি বইকচু চাষ করে লাভবান হয়েছেন। প্রায় ৩ বছর ধরে কচু চাষ করেন তিনি। এ বছর ৪বিঘা জায়গায় কচু চাষ করেছেন। তবে এবছর বইকচুর দাম কিছুটা কম। তারপরও ফলন খরচ বাদে লাভ হবে বলে তিনি আশাবাদী।
সদরের নামুজা ইউনিয়নের কৃষক হাফিজুর রহমান, একটি অটোভ্যান যোগে প্রায় ৫বস্তা কচু বিক্রি করতে হাটে এসেছেন। তিনি বলেন, কচু চাষে উৎপাদন সময় একটু বেশি লাগলেও বাজার দর যদি ভাল হয় তাহলে অন্য ফসলের তুলনায় সময় পুষে যাবে।
অন্যান্য ফসল বৈরী আবহাওয়ার কারণে নষ্ট হলেও কচু ফসলে তেমন বিরূপ প্রভাব পড়ে না। তিনি পুজিঁ উঠিয়ে বর্তমান সফল লাভের স্বপ্ন দেখছেন। তিনি প্রতিবছরই এই কচু চাষ করে বেশ লাভবান বলে জানান। গত প্রায় ৮ বছর ধরে বগুড়ার কৃষকরা বাণিজ্যিক সম্ভাবনার হাত ধরে বিকশিত হয়েছে ঝুকে পড়েছেন এই কচু চাষে৷
মহাস্থানহাট থেকে কচু ক্রেতা আড়ৎ ব্যবসায়ী পাইকাড়, মুনছুর রহমান, তোফাজ্জল হোসেন, আব্দুর রশিদ, ও তোতা মিয়ার সাথে কথা বললে তারা জানান, কচু মৌসুমে তাঁরা শুধু এই বইকচুর ব্যবসা করেন। দূরের জেলার ব্যবসায়ীদের সাথে তাঁদের লেনদেন।তাঁরা মহাস্থান হাটের কচু কিনেন।
এরপর এই কচুগুলো মহাস্থান মাহীসওয়ার ডিগ্রী কলেজের উত্তরপাশে “বিশাল সবজি আড়ৎ ভান্ডার” নামক আড়তে মজুদ করেন। সেখানে প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিক এই কচু বাচাই কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তাঁরা এই বইকচু মাড়াই করে ছোট-বড় ধরণ আলাদা করছেন।
মঙ্গলবার মহাস্থানহাটের কচুর চলতি বাজার ছিল ৪০ থেকে ৭ শত টাকা প্রতি মণ। মহাস্থান বিশাল সবজি ভান্ডার ঘুরে দেখা যায়, নানা বয়সের নারী-পুরুষেরা কচু বাচাইয়ের কাজ করছেন। তাদের সাথে কথা বললে তাঁরা জানান, সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। আর এ কাজে বেতন হিসেবে তাঁরা ২’শ থেকে ৩ শ টাকা পর্যন্ত প্রতিদিন পায়।
সল্প সময়ে এ কাজ করে নগদ টাকা বুঝে পেয়ে অনেকের সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে বলে তাঁরা ব্যক্ত করেন।
এবিষয়ে বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি অফিসার এজাজুল কামালের সাথে কথা বললে তিনি জানান, এবছরে ২শ হেক্টর জমিতে বইকচুর চাষ করা হয়েছে।
আবহাওয়া ভালোর কারণে কচুগুলো বর্ধমান৷ বই কচু চাষ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বইকচু একবার চাষ করলে জমির উর্বরতা কমে যায়। তবে প্রচুর পরিমাণ জৈব সার ব্যবহার করে পরের বছর কচু চাষ উপযোগী করে তুলতে হবে।
পানি সেচের ব্যবস্থা থাকলে ফাল্গুন মাস (ফেব্রুয়ারি) বীজ বপনের সবচেয়ে ভালো সময়। কিন্তু যদি সে সুযোগ না থাকে তাহলে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হবে এবং প্রথম বৃষ্টিপাতের পরপরই বীজ লাগিয়ে ফেলতে হবে। তবে বৈশাখের পর (এপ্রিলের পর) বীজ লাগালে ফলন খুব একটা ভালো হবে না।