সোহেল হোসেন লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ লক্ষ্মীপুরে উপকূলীয় মেঘনাপাড়ের জনপদ জোয়ারের পানিতে আমন ধানের চারা বিবর্ণ হয়ে গেছে। এতে কৃষকদের চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। কৃষি বিভাগের ভাষ্যমতে,জোয়ারে বিবর্ণ চারা সতেজ হবে। জমা পানি নেমে যাওয়াতে আবাদি চারার কোনো ক্ষতি হবে না। আজ সোমবার বিকেলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল হোসেনও একই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে কৃষকদের অভিযোগ, সম্প্রতি পূর্ণিমা ও অমাবস্যার সময় জোয়ারে রামগতি, কমলনগর ও রায়পুরের উপকূলীয় এলাকার ক্ষেতগুলো প্লাবিত হয়। নদী থেকে দূরের জমির পানি নেমে গেলেও কাছাকাছি নিম্নাঞ্চলের জমিতে পানি জমে থাকে। এতে নদীর নোনা পানিতে বীজতলা ও ধানের চারা নষ্ট হয়ে যায়। গত পূর্ণিমাতে বীজতলা নষ্ট হয়ে জমি আবাদ করতে গিয়ে যথেষ্ট চারা পাওয়া যায়নি। এ জন্য অনেক কৃষক জমিতে গেলবারের মতো এবার চারা রোপণ করতে পারেনি। চারা রোপণের পরপরই অমাবস্যার জোয়ারে আমনের ক্ষেতগুলো জোয়ারে প্লাবিত হয়। প্রায় ৪০ শতাংশ ক্ষেতে জোয়ারের পানিতে ধানের চারা বিবর্ণ রূপ নিয়েছে। এসব চারা বেড়ে উঠবে কি-না তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া জোয়ারের পানি ঢুকলে স্রোতের কারণে ধানের চারা ভেসে উঠে আবার ভাটার সময় চারাগুলো ভেসে চলে যায়। অরক্ষিত নদীতীর যেমন ভাঙনে সবাইকে নিঃস্ব করে,তেমনই জোয়ারের পানি কৃষকের স্বপ্ন ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুরে এবার ৮১ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদরে ২২ হাজার ২০ হেক্টর, রামগঞ্জে ৩ হাজার ৩১০, রামগতিতে ২৪ হাজার ১০, কমলনগর ১৯ হাজার ৭০০, রায়পুরে ১২৬৯৫ হেক্টর।
আবাদি জমিতে চারা রোপনের জন্য রামগতিতে ১ হাজার ৪৪৫ হেক্টর ও কমলনগরে ১ হাজার ৫৭০ হেক্টরে আমনের বীজতলা তৈরি করা হয়। কিন্তু ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত অতিবৃষ্টি ও জোয়ারে শুধু রামগতি ও কমলনগরের ১৭৭ হেক্টর জমির বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। এতে ২০০ কৃষক প্রায় ৭ লাখ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
সোমবার দুপুরে রায়পুর উপজেলার চরকাচিয়া, চরজালিয়া, চরবংশী, কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন, চরলরেঞ্চ, চরফলকন ও রামগতির চরগাজী, বড়খেরী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জোয়ারে প্লাবিত ক্ষেতগুলোতে ধানের চারা বিবর্ণ হয়ে পড়ছে। এ নিয়ে কৃষক আবুল হাশেম, কাশেম মাঝি, আজাদ হোসেন ও নুরুল ইসলাম হতাশা ব্যক্ত করেছেন। লোকসানের আশঙ্কায় তারা উদ্বিগ্ন রয়েছেন।
রামগতির চরগাজী এলাকার আবুল হাশেম বলেন, এক একর জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছি। অধিকাংশ চারাই জোয়ারের পানিতে বিবর্ণ হয়ে গেছে। নোনা পানির কারণে এমন হাল হয়েছে। চারাগুলো স্বাভাবিক না হলে ৪০-৫০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়ে যাবে। প্রতিবছরই ধান চাষ করতে গিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।
কমলনগরে দক্ষিণ চরমার্টিন গ্রামের কৃষক আজাদ হোসেন বলেন, ৫০ হাজার টাকা খরচ করে ২ একর জমিতে চাষাবাদ করেছি। জোয়ারের পানিতে এক তৃতীয়াংশ চারা ভেসে গেছে। নতুন করে আবার চারা লাগাতে হবে। দ্বিগুণ খরচ করে শেষ পর্যন্ত লোকসান হয়। ধারদেনা করে আবাদ করি। কিন্তু ফসল ঘরে আনতে যে পরিমাণ ব্যয় হয়। ধান বিক্রি করে ওই ধারদেনা পরিশোধ করা সম্ভব হয় না।
কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছয়েফ উল্যাহ বলেন,নদী পুরো এলাকা গিলে নিচ্ছে। আমার ইউনিয়নের নাছিরগঞ্জ বাজারের দোকানপাট ও রাস্তাঘাট সব মেঘনার দখলে। কৃষকরা অনেক কষ্টে আমান আবাদ শুরু করেছেন। কিন্তু ভাঙন আর জোয়ারে সব বিলীন হয়ে গেছে। কৃষকের ক্ষতি কিভাবে পূরণ হবে তা বলা মুশকিল।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, জোয়ারে ক্ষেত প্লাবিত হলেও পানি নেমে যায়। এতে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। বিবর্ণ হয়ে যাওয়া আমনের চারাগুলো আবারো সতেজ হয়ে উঠবে। মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছেন, প্রণোদনা এলে সহযোগিতা করা হবে।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল মোমিন বলেন, পূর্ণিমা আর অমাবস্যায় পানি উঠে আবার নেমে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করার জন্য কৃষি কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কোনো সুযোগ থাকলে কৃষকদের সহযোগিতা করা হবে