সভ্যতার বিকাশে মানুষের জীবনযাত্রায় লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া।কাঁচের গ্লাসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তির ব্যবহারে সেবার মান বেড়েছে সেলুনগুলোতে।তার পরেও আবহমান গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য অতি পরিচিত পিড়িঁতে বা টুলে বসিয়ে চুল ও দাঁড়ি কাটার পুরনো স্মৃতি ধরে রেখেছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার মোহনপুর ইউনিয়নের লাহিড়ী পাড়া গ্রামের মৃত প্রিয়নাত শীলের ছেলে সুভল চন্দ্র শীল।
অবশ্য কালের বিবর্তনে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেড়ে চুলকাটা পেশা ছেড়েছে গ্রামগঞ্জে বসবাস করা শীলরা। কেউবা পারি জমিয়েছে বাংলাদেশ থেকে ভারতে। অনেক ব্যয়বহুল আধুনিক সেলুন তৈরী করার মতো পুঁজি পাট্যা না থাকায় খোলা আকাশের নিচে হাট-বাজারে পিড়িঁ বা টুলে ভাসমান সেলুনে প্রতিনিয়ত কাজ করেন তিনি।আমার পূর্ব পুরুষেরা নাপিতের কাজ করেছে আমাদেরও শিখিয়েছে।
অনেক বছর আগে ধান,গম,চিনা ও কলাই জমাতে বাবার সাথে গ্রামের গারহস্তদের বাড়িতে গিয়ে চুল ও দাঁড়ি কামিয়ে দিয়ে আসতাম। বংশ মর্যাদার দিক লক্ষ্য করে শীল বংশের লোক ছাড়া অন্য কেউ এ পেশার কাজ করতো না। যদিও আগের দিনে মানুষের অভাব অনাটন বেশি ছিলো।
বর্তমান সময়ে জীবন নির্বাহের তাগিদে অনেকেই সেলুনের ব্যবসা বেছে নিয়েছে। সেলুনের ব্যবসা লাভজনক দেখে জাত,বংশ ও ধর্ম পরিচয় উপেক্ষা করে সকল ধর্মের লোক পুঁজি খাটিয়ে আধুনিক সেলুন তৈরী করে এ ব্যবসায় নেমে পড়েছে।
রজিবুল আলম সরকার জানান সেলুনে সেফ করতে ২০ ও চুল কাটতে ৪০ টাকা নেয়। আমরা গরিব পরিবারের মানুষ খোলা আকাশের নিচে পিঁড়িতে বসে ১০ টাকায় সেভ ২০ টাকায় চুল কাটলাম। এতেই আমরা তুষ্ট।
সুভল চন্দ্র শীল জানান অভাবের সংসারে বেড়ে উঠা মানুষ আমি। ১০ বছর বয়স থেকে বাবার সাথে গ্রামে গ্রামে চুল দাঁড়ি কামিয়ে বড় হয়েছি।
বিরামহীন ৫০ বছর যাবৎ নাপিতের কাজ করে সংসার চালাচ্ছি।প্রতিদিন ভোর ৭ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত লাহিড়ী মোহনপুর রেলষ্টেশ সংলগ্ন বাজারে খোলা আকাশের নিচে ছাতি মাথার উপর টাঙ্গিয়ে টুল বা পিঁড়িতে বসিয়ে মানুষের চুল দাঁড়ি কাটি। নুন আনতে পান্তা ফুড়ায় এমন দরিদ্র মানুষ পিঁড়িতে বসে চুল দাঁড়ি কাটে। চুল ২০ ও দাঁড়ি ১০ টাকায় কাটি।দিন শেষে ২৫০-৩০০ টাকার কাজ করে চাল ডাল কিনে কোন রকমে ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার চলে যায়।
এ বিষয়ে মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ(মক্কা) জানান আমরা ছোট বেলায় দেখেছি লাহিড়ী পাড়ার শীল বংশের লোক বিভিন্ন গ্রামে ও হাট-বাজারে কাস্টমারকে পিঁড়িতে বসিয়ে চুল দাঁড়ি কাটতো।
বর্তমান সময়ে আধুনিকতার যুগে সামাজিক মর্যাদার কারনে মানুষ খোলা আকাশের নিচে পিঁড়িতে বসে চুল দাঁড়ি কাটে না। আমার ইউনিয়নের শীল বংশের লোক আধুনিক সময়ে বাপদাদার প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এ জন্য তাদের ধন্যবাদ।