আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যকে ধারণ করে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ফুলঝোর নদীর অববাহিকায় সারাতৈল বিলো ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরেও উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের সরাতৈল গ্রামবাসীর উদ্যোগে শুক্রবার বিকেলে প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয় । মোঃ নবীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জিয়াউল আলম ঝুনু, মোঃ আকমাল হোসেন প্রমুখ ।
সপ্তাহে দুইদিন করে মাসব্যাপী চলা এ প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন এলাকার বিরাট বিরাট পানসী নৌকা অংশ নেয়। সোনার তরী, হিরার তরী, পঙ্খিরাজ, উরন্ত বলাকা, ময়ূরপঙ্খী, বাংলার ভাগসহ বিভিন্ন বাহারি নামের পানিগুলো বাইচকে কেন্দ্র করে নতুন করে বাহারি সাজে সেজে ওঠে।
এ নৌকা বাইচের সময় বাইচালরা ঢাক, ঢোল ও করতালের বাজনা আর জারি-সারি গানের তালে তালে বৈঠা চালিয়ে বিলের জল ফালাফালা করে কেটে এগিয়ে চলে নৌকা। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে লাল নিশান তুলে নিয়ে যে নৌকা আগে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে তাকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিভিন্ন ধাপ পেড়িয়ে সবাইকে হারিয়ে যে নৌকা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে সেটবকেই চূড়ান্ত ভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন।
এদিকে উদ্বোধনী এ নৌকা বাইচ দেখতে বিলের মধ্যে শত শত ছোট বড় নৌকায় পাবনা ও সিরাজগঞ্জের হাজার হাজার নারী পুরুষের সমাগম ঘটে। তারা উপভোগ করে এ আনন্দঘন নৌকা বাইচ। এত মানুষের সমাগমকে কেন্দ্র করে এসময় নৌকার উপরে সৌখিন ব্যাবসায়ীরা কোমল পানীয়সহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবারের দোকান বসিয়ে নেন। ভাসমান এ মেলা যেন বিরাট উৎসবে রূপ নেয়।
এ বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য আবুল কালাম জানান, প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে মানুষকে বিনোদন দেওয়ার জন্য নৌকা বাইচের আয়োজন করা হয়। মূলত ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্যই এই আয়োজন।
এদিকে নৌকা বাইচ দেখতে যাওয়া একজন সংস্কৃতি কর্মী কোরবান আলী লাবলু জানান, আধুনিকতার ছোঁয়ায় আবহমান গ্রামবাংলার অনেক ঐতিহ্যই হারিয়ে যেতে বসেছে। সরাতৈল গ্রামবাসী যে এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে নৌকা বাইচের আয়োজন করেছে তা সত্যি অতুলনীয়। সব স্তরের মানুষ নানা ভাবে অংশ নিয়ে এটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে।